ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণভবনের সামনে অনশনের চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

গণভবনের সামনে অনশনের চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্কুলছাত্রকে প্রস্রাব চেটে খাওয়ানোর বিচার চাইতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের সামনে অনশন করার চেষ্টা করেন শরিফা খাতুন (২৫) নামে এক সহকারী শিক্ষিকা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেষ্টায় তা করতে পারেননি তিনি। পরে পুলিশ ওই শিক্ষিকাকে হেফাজতে নিয়ে যান এবং পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করবেন বলে জানা গেছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনের সামনে অনশনের চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে। পরে বিকেলের দিকে বিস্তারিত জানতে শেরে বাংলা নগর থানায় নেয়া হয়। শরিফা খাতুনের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ত্রিশাল উপজেলার ভাটিদাস পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তিনি। একই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলমের অশোভন আচরণ ও এক স্কুলছাত্রকে জোরপূর্বক প্রস্রাব খাওয়ানোর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাচ্ছেন। গত বছরের ২৪ জুলাই স্কুলের ছাদে প্রস্রাব করায় পঞ্চম শ্রেণির এক মেধাবী ছাত্রকে সেই প্রস্রাব চেটে খেতে বাধ্য করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুল আলম। ঘটনা জানাজানি হওয়ার এক মাস পর গঠিত তদন্ত কমিটি একদিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করে! তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে স্কুলে এরকম কোন ঘটনাই ঘটেনি বলে দাবি করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছিলেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক শরিফা খাতুন। এর জেরে প্রথমে শরিফাকে ক্লাস থেকে বাধ্যতামূলক বিরত রাখা হয়। বন্ধ রাখা হয়েছে বেতন-ভাতা। এ নিয়ে শরিফা জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে তথ্য-প্রমাণাদিসহ লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর থেকে মেরে ফেলার হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি হয়েছেন। জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে কোন সাড়া দেননি। গত ১৫ জানুয়ারি ময়মনসিংহ জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং ২৪ জানুয়ারি গণভবনের সামনে অনশন করবেন বলে জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মফাজ্জল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি শুনে আমার উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করে। তদন্তে সেরকম কিছু পায়নি। তবে প্রধান শিক্ষক লোক হিসেবে ভাল নয় সেটি জানতে পেরেছি। এখন দুই শিক্ষককেই বদলি করা হয়েছে। দুজনকেই কেন বদলি করা হলো সে বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন অভিযোগ যেহেতু উঠেছে তাই দুজনকেই করা হয়েছে। বিকেল ৫টা মুঠোফোনে শরিফা খাতুন জনকণ্ঠের এই প্রতিবেদককে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে আমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের নানা ধরনের হয়রানির মুখোমুখি। আমার অন্যায় হলো আমি কেন শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়ে আমার সহকর্মীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলাম। আমাকে স্কুলে ক্লাস নেয়া বন্ধ করে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আমি থানায় জিডিও করেছি। আমি এখনও থানায় বসে আসি। আমার স্বামী আসলে হয়তো আমাকে স্বামীর জিম্মায় দিয়ে দিবে তবে আমি জানি না আমার কি হবে বা আমার এই বিচার চাওয়ার কি হবে। জনকণ্ঠের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে আরও বলেন, আমার মানসিক ভারসাম্যহীন বাবা-মার সম্পত্তি পর্যন্ত বেদখল হয়ে গিয়েছিল। সেসময়ও আমি প্রশাসনের অনেক অবহেলার শিকার হয়েছি তবে গত বছর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী নিজে আমাকে সাহায্য করে বেদখল সম্পত্তি ফিরে পেতে। আমি লড়েই যাব। সন্ধ্যা ছয়টায় শেরে বাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম জনকণ্ঠকে বলেন, মেয়েটি এখনও থানায় আছে। তাঁর বাড়ির লোক আসতেছে। আমাদের এসএসএফ যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে সেভাবে কাজ করছি।
×