ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাজী শাহেদের ত্রিমুখী প্রেমাখ্যান ‘অপেক্ষার’ প্রকাশনা উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

কাজী শাহেদের ত্রিমুখী প্রেমাখ্যান ‘অপেক্ষার’ প্রকাশনা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকাশিত হলো কাজী শাহেদ আহমেদের তিন চরিত্রে উপন্যাস গ্রন্থ ‘অপেক্ষা’। রেবেকা এবং তার মেয়ে শাহজাদী আর সাবের- এই তিনজনের ত্রিমুখী প্রেমাখ্যানে বিস্তৃত হয়েছে উপন্যাসের কাহিনী। তাদের জীবনের বাঁকে বাঁকে ঘটে যায় নানা চড়াই-উতরাই। ব্যক্ত হয় হৃদয়ের টানাপোড়েন। জেমকন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও লেখক কাজী শাহেদ আহমেদের চতুর্থ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে কাগজ প্রকাশন। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় । অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন লোক গবেষক শামসুজ্জামান খান। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবল্লাহ সিরাজীর সভাপতিত্বে বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন ও কবি শামীম রেজা। স্বাগত বক্তব্য দেন জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদ। নানা রসিকতার মাধ্যমে আপন অনুভূতি প্রকাশ করেন কাজী শাহেদ আহমেদ। উপস্থিত শ্রোতাদের হাস্যরসে ভাসিয়ে মেলে ধরেন জীবনের নানা গল্প। অন্য বক্তার আলোচনার জবাবে লেখক বলেন, তারা বলছেন এত বেশি বয়সে আমি কেমন করে এমন প্রেমের উপন্যাস লিখলাম। আমার মনে হয়, মানুষ আসলে বুড়ো হয় না, বুড়ো সাজে। বক্তারা আমাকে যতই বয়স্ক বলুক, আমি আরও কুড়ি বছর বই লিখতে চাই। আর এই বইটি লেখার জন্য আমাকে আরও অনেকের কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে। এখন আমি ভবিষ্যতের দিনগুলোকে নিয়ে লিখতে চাই। যেখানে ২০৫০ কিংবা ২০৭০ সালের প্রেক্ষাপটে রচিত হবে উপন্যাস। মূলত আমার মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকা গল্প নিয়েই বই লিখি। তখন ছোট্ট একটি গল্পই হাত-পা ছেড়ে প্রসারিত হয়। লেখকের দক্ষতাবলে সেটাকে আবার নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। প্রকৃত অর্থে প্রতিটি মানুষের ভেতরই গল্প আছে। তাই সবারই লেখা উচিত। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, কাজী শাহেদ আহমেদের সঙ্গ সব সময় আনন্দদায়ক। জীবনের নানা জটিল বিষয় তিনি প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করেন। ‘অপেক্ষা’ উপন্যাসে নারী পুরুষের প্রেমের জটিল মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি তিনি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। অনেক শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও তিনি লিখে যাচ্ছেন। তিনি যেন আরও লিখে যেতে পারেনÑ সেটাই প্রত্যাশা করি। শামসুজ্জামান খান বলেন, দেশের নানা ক্রান্তিকালে কাজী শাহেদ আহমেদ ভূমিকা রেখেছেন। আশি ছুঁই ছুঁই বয়সে তরুণ-তরুণীর ভালবাসা নিয়ে চমৎকার একটি উপন্যাস লিখেছেন। আর এই উপন্যাসে ত্রিমুখী প্রেমকাহিনীর মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের মাঝে কৌশলে ছুঁয়ে গেছেন স্বদেশী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহকে। সেখানেই উপন্যাসটি পেয়েছে আরও বেশি স্বার্থকতা। সব মিলিয়ে গল্পের মাঝে মেলে ধরেছেন জীবনেরই রসায়ন। কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বয়সের ওপাশে গিয়েও স্বপ্ন দেখেন কাজী শাহেদ আহমেদ। দেশের জন্য মানুষের জন্য লিখে চলেছেন। অপেক্ষা উপন্যাসের প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল হলেও তা চিরকালের। পারভেজ হোসেন বলেন, জীবনের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও বিশ্লেষণকেই উপন্যাসের মাঝে মেলে ধরেছেন কাজী শাহেদ আহমেদ। আমরা যারা লেখালেখির চেষ্টা করি, তাদেরকে এই লেখকের লেখার ধরনটি বিস্মিত করে। ত্রিমুখী মানবিক প্রোমাখ্যানটির চরিত্রগুলো উঠে এসেছে খুবই সাধারণ জীবন থেকে। প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সাদী মহম্মদের পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। শ্রোতার অন্তরে মুগ্ধতা ছড়িয়ে তিনি একে গেয়ে শোনান ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’, ‘কান্না হাসির দোল দোলানো পোষ ফাগুনের পালা’, ‘যখন পড়বে মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’ ও ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’ শিরোনামোর গান। ১১২ পৃষ্ঠার ‘অপেক্ষা’ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে কাগজ প্রকাশন। বইটির দাম রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মাসুক হেলাল।
×