ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে ॥ কৃষিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে ॥ কৃষিমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিজ্ঞানীদের আরও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্ভাবনের আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, ‘সরকার কৃষিতে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে, কিন্তু কৃষিবিজ্ঞানীরা তাদের কাজ সঠিকভাবে করছেন না। আমি কৃষি বিজ্ঞানীদের কাছে নতুন উদ্ভাবনী দেখতে চাই।’ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কেআইবি চত্বরে জাতীয় সবজি মেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এখন আমাদের উৎপাদন প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমরা খাদ্য পণ্য বিদেশে রফতানি করতে পারছি। কিন্তু রফতানির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করতে হলে এই মাটিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন আরও বাড়াতে হবে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যাতে আমরা নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে কৃষি পণ্য রফতানি করতে পারি। তিনি বলেন, এই দেশে আগে খাদ্যের সমস্যা ছিল। মানুষ না খেয়ে মারা যেত। এখন আর কেউ না খেয়ে থাকে না। আমরা প্রচুর খাদ্য উৎপাদন করছি। মন্ত্রী বলেন, এই সরকার কৃষিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাই প্রধানমন্ত্রী কৃষিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করছেন। এই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১১ সালে আমাদের খাদ্য ঘাটতি হয়েছিল। তাই আমরা ৫০ লাখ টন খাদ্য আমদানি করেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে দেশে কোন ঘাটতি নেই। আমাদের কিছু সমস্যার কারণে আমরা প্রচুর পরিমাণে খাদ্য রফতানি করতে পারছি না। এই সমস্যাগুলো সবাইকে নিয়ে সমাধান করতে হবে। শুধুমাত্র কৃষি মন্ত্রণালয়ের একার পক্ষে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ১ কোটি ১০ লাখ টন আলু উৎপাদন করেছি। ৮০ লাখ টন আমাদের আলু চাহিদা। ৩০ লাখ টন আলু উদ্ধৃত ছিল, কিন্তু তাও আমরা আলু রফতানি করতে পারি নাই। এসব সমস্যা এখনি আমাদের সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বড় বড় পোশাক ব্যবসায়ীরা বিদেশে পোশাক রফতানি করে প্রচুর মার্কিন ডলার আয় করছে। ওই মার্কিন ডলার দিয়ে তারা বিদেশে বাড়ি-গাড়ি ক্রয় করছে। এতে করে আমাদের দেশে অনেক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তাই অর্থ পাচার রুখতে আমাদের নতুন আইনের কথা ভাবতে হবে। কৃষকদের সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, কৃষকরা উৎপাদনের প্রকৃত মূল্য পায় না। তাই দিন-দিন কৃষকের হার কমে যাচ্ছে। কৃষকদের এই হতাশা আমাদের দূর করতে হবে। কৃষকদের প্রকৃত শ্রমের মূল্য আমাদের দিতে হবে। সবজি সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ২২০ গ্রাম সবজির প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে আমরা ১১৫ গ্রাম পাই। প্রতিদিন প্রায় ১০০ গ্রাম সবজি ঘাটতি থেকে যায়। এই ঘাটতি মেটাতে সবজি উৎপাদন বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু সবজি উৎপাদন বাড়ালেই হবে না, তার সঙ্গে উৎপাদিত সবজি হতে হবে নিরাপদ। মানুষ এখন অনেক সচেতন। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সবজি রাখে। আমিষের সঙ্গে সবজিরও যে প্রয়োজন আছে তা এখন মানুষ বুঝতে পেরেছে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের এইবারের নির্বাচনে নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা কথা উল্লেখ আছে। তাই জনগণের কাছে আমাদের এই দায়বদ্ধতা পূরণ করতে আমাদের সবাইকে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে হবে। মানুষকে নিরাপদ খাদ্য না দিতে পারলে আমাদের সব অর্জন বৃথা হয়ে যাবে। তাই সবার আগে নিরাপদ খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্যমিন্ত্রী টিপু মুনশি, কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান এমপি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর গোলাম মোর্শেদ হালিম, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. কবির একরামুল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক অমিতাভ দাসসহ অনেকে। জাতীয় সবজি মেলা ২০১৯ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামান। সবজি মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আগামীতে কৃষিতে আমাদের স্লোগান হবে ‘নিরাপদ সবজি করব চাষ, রফতানি করব বার মাস।’ তিনি বলেন, আমরা কৃষি পণ্য অধিকহারে বিদেশে রফতানি করতে পারি না। তাই আমাদের রফতানি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। তাই খাতকে আরও উন্নত করতে হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের উৎপাদনের ৩৪ ভাগ সবজি নষ্ট হয়ে যায়। তাই আমরা যদি এই নষ্টের হার ১০ ভাগে কমিয়ে আনতে পারি। তাহলেও আমরা এটা বিদেশে রফতানি করতে পারব। আমরা ৬৯০ মিলিয়ন ডলার সবজি বিদেশে রফতানি করি। এটা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি করতে হবে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী সবজি মেলায় রাজধানীর ফার্মগেটে কেআইবি চত্বরে ৭১টি স্টল ও ৫টি প্যাভেলিয়ন স্থান পেয়েছে। ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জাতীয় সবজি মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বৃহস্পতিবার সকালে র‌্যালির মাধ্যমে মেলার কার্যক্রম শুরু হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ৪তম জাতীয় সবজি মেলা ২০১৯ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
×