ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাপানের মুক্তবাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব গভীর পর্যবেক্ষণে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

জাপানের মুক্তবাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব গভীর পর্যবেক্ষণে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চীনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে এবার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ জাপান। সম্প্রতি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে দেখা করে ঢাকায় নিযুক্ত জাপানী রাষ্ট্রদূত হিরো ইয়াসু ইজুমি এ চুক্তির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সে সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, জাপান বাংলাদেশের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু। একই সঙ্গে উন্নয়ন অংশীদারও। এ কারণে তাদের (জাপান) প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ করার বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। অন্যদিকে জাপানের পক্ষ থেকে এদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় অবকাঠামো খাতে জাপানের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দশ মেগা প্রকল্প ও বিশেষ দশ উদ্যোগের প্রায় সব ক’টি প্রকল্পে জাপান সরকারের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে জাপান। বিশেষ করে হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর জাপানে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল তা এখন আর নেই। বরং বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ’১৬ সালে ঢাকায় হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলায় ৭ জাপানীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় বাংলাদেশে চলাফেরার ওপর সতর্কতা জারি করে জাপান। পরে জঙ্গী দমনে সরকারের পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হয়ে জাপান সতর্কতা প্রত্যাহার করে নেয়। শুধু তাই নয় ওই ঘটনার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণও দেয়া হয়। অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে জাপানের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বেড়েছে। জাপান বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। জাপানীদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য উত্তম জায়গা। আগামীতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাই এখনই বিনিয়োগের উত্তম সময়। বিশেষ করে জাপান বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ করে বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। জাপান রাষ্টদূত হিরো ইয়াসু ইজুমি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন-সহযোগী হলো জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। আর উন্নয়ন-সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম বিশ্বস্ত বন্ধু হলো জাইকা। বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পেরে তিনি গর্বিত। বাংলাদেশে যে অর্থ খরচ করে তা শুধু জাইকার নয়, জাপানের প্রত্যেক করদাতার অর্থ এখানে খরচ হয়। এটা সমগ্র জাপানের মানুষের ভালবাসার প্রতিফলন। তিনি বলেন, বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ অত্যন্ত প্রতিশ্রুতিশীল দেশ। ইতোমধ্যে মেট্রোরেলসহ ছয় প্রকল্পের জন্য ২শ’ বিলিয়ন জাপানী ইয়েন ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। ঋণ প্যাকেজের আওতায় এ সহায়তা দিচ্ছে সংস্থাটি। ক্রমাগতভাবে এ ঋণ সহায়তা বৃদ্ধি পাবে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সফরে সামনে এ সহায়তা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঋণের সবচেয়ে বড় অংশ যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণে নেয়া প্রথম প্রকল্পে। এছাড়া মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগে উৎসাহিতকরণ প্রজেক্ট এবং ইমার্জেন্সি এফিসিয়েনসি এ্যান্ড কনজারভেশন প্রমোশন প্রজেক্ট। এছাড়া রয়েছে কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতী সেতু চলমান প্রকল্প, যমুনা রেলসেতু কর্ণফুলী ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প। বাংলাদেশের মানুষের জন্য জাইকার সহায়তা অব্যাহত থাকবে। জানা গেছে, এ মুহূর্তে বাংলাদেশে জাপানের ৩১২ কোম্পানি ব্যবসা করছে, এখানে প্রায় ৪২ হাজার জনবল কাজ করছে। জাপানের কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ প্রায় ১ হাজার ৪৬৭ দশমিক ২৮ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ’১৭ সালে সরাসরি ৭০ দশমিক ২১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছে। এ প্রসঙ্গে স্পেশাল এ্যাডভাইজার জাপানীজ কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এ্যাসোসিয়েশন ঢাকার আব্দুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার যে প্রস্তাব জাপানের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে তা সাদরে গ্রহণ করা উচিত। চুক্তি করা হলে তা দুদেশের জন্যই হবে মাইলফলক। জাপান বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন অংশীদার। শুধু তাই নয়, দেশটিতে ধীরে ধীরে রফতানিও বাড়ছে। এ অবস্থায় জাপানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য বা এফটিএ হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। তিনি বলেন, জেট্রোর আদলে এদেশের ইপিবি ও বিডাকে সাজানো গেলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতী প্রথম সেতু নির্মাণে জাইকা প্রায় ২৯ বিলিয়ন ইয়েন ঋণ দিয়েছিল। এটাই দেশের প্রথম ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীর যানজট কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাপান কর সংস্কার ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করাসহ পড়াশোনা ও গবেষণায় বৃত্তি প্রদান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
×