ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হলি আর্টিজান জঙ্গীদের ধরতে কানসাটে সাঁড়াশি অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

হলি আর্টিজান জঙ্গীদের ধরতে কানসাটে সাঁড়াশি অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ গত সোমবার রাতে হলি আর্টিজান হামলায় পলাতক একাধিক জঙ্গীকে ধরতে অভিযানে নামে র‌্যাব। র‌্যাব গোপন সূত্র থেকে পাওয়া খবরের সূত্র ধরে জেলার কানসাট ইউনিয়নের শিবনা-রায়ণপুর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে। ইতোমধ্যেও এলাকায় একাধিক জঙ্গী হামলার মোকাবেলা করেছে র‌্যাব। যদিও র‌্যাব-৫ এর কর্মকর্তা লে. কর্নেল মাহবুবুর রহমান ও তার টিম মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালানোর পর প্রেস বিফিংয়ে কোন জঙ্গীর নাম উল্লেখ করেননি। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে, হলি আর্টিজানে হামলার পলাতক আসামি জঙ্গী খালিদ নাকি একাধিক জঙ্গীকে নিয়ে কানসাট এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল। যাদের ধরতে শিবনারায়ণপুর গ্রামের একাধিক বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাশি চালায়। এ সময় মনিরুল ইসলাম ওরফে সুকাম নামের একজনকে আটক করে। তবে অভিযানের খরব পেয়ে অনেক আগেই অন্য একাধিক জঙ্গীরা পালিয়ে যায়। এই স্থানটি থেকে সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ার কারণে জঙ্গীরা পালিয়ে সহজেই ভারতে যায়। জঙ্গী সন্দেহে আটক মনিরুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। আটককৃত মনিরুল শিবনারায়ণপুর গ্রামের মৃত লতিফ ম-লের ছেলে। তার জঙ্গীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার খরব পাওয়া গেছে। মনিরুল কয়েক বছর আগে জেএমবিতে যোগদান করে এবং প্রশিক্ষণ নেয়। তবে শায়েক আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাই মারা যাওয়ার পর মনিরুলের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হাতকাটা মাহফুজের সংস্পর্শে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠে সে। ২০১৬ সালে কানসাট এলাকার জঙ্গীনেতা আবু নিহত হলে মনিরুলের জঙ্গী তৎপরতা কিছু দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কতিপয় জঙ্গী সদস্যকে নিয়ে জিহাদী আলোচনা ও বৈঠকের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও সদস্য বৃদ্ধি এবং চাঁদা আদায় পূর্বক সংগঠনের মূলধন বৃদ্ধিসহ রাষ্ট্রবিরোধী ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনার মাধ্যমে জেএমবির কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছে মনিরুল। এর বড় প্রমাণ মঙ্গলবারের অভিযানে ২টি উগ্রবাদী বই, ৪টি উগ্রবাদী হ্যান্ডনোট, ২টি লিফলেট ও ১টি জাতীয় পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়। এসব পাওয়া যায় মনিরুল বাড়ি থেকে। তবে হলি আর্টিজানের হামলার চার্জশীটভুক্ত পলাতক আসামি শহিদুল ইসলাম খালিদসহ একাধিক বড় মাপের জঙ্গীনেতা বহুদিন ধরে কানসাটসহ সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে অবস্থান করছিল। আটক রিপনকে জিজ্ঞাসাবাদে এসব উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। রিপন ধরা পড়লেও খালেদ মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা ভারতে এক সঙ্গে ছিল। দেশটাকে অস্থিতিশীল করতে এবং জঙ্গী রাষ্ট্র বানাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়ে হামলার ছক এটেছিল জেএমবি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মুখে তা ভেস্তে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না পারলেও ঢাকার মেয়র নির্বাচনে ও উপজেলা নির্বাচনের সময় বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে তারা নতুন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট সীমান্ত পথে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক নিয়ে এনে মৌজুদ করছে। এর আগেও নাকি সন্ত্রাসের জনপদ শিবগঞ্জ সীমান্ত পথে শতাধিক অস্ত্রের চালান নিয়ে এসেছে। সঙ্গে বিস্ফোরক। উপজেলা নির্বাচন হবে গ্রাম পর্যায়ের এলাকায়। তাই নতুনভাবে জঙ্গীরা তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা চাঁপাইয়ে সদর, শিবগঞ্জ ও ভোলাহাট সীমান্ত পথে কয়েক হাজার কেজি বিস্ফোরক ও বিশাল পরিমাণ সেফ অস্ত্র এনে এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশে মজুদ করবে। এসবের নাকি পুরো তত্ত্বাবধান করছে জঙ্গী খালেদসহ তার একাধিক সঙ্গী। তারা জেএমবির আদর্শে দীক্ষা নিয়ে একদিকে শূরা সদস্য সংগ্রহ করছে অপরদিকে মজুদ করছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক। হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার ঘটনায় অর্থ, অস্ত্র, বিস্ফোরক সরবরাহের দায়িত্বে ছিলেন মামুনুর রশীদ রিপনসহ খালেদ। রিপন গ্রেফতার হলেও খালেদ অর্থ, অস্ত্র, বিস্ফোরকের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে। বর্তমানে জেএমবি এই এলাকায় অর্থাৎ বাংলাদেশে অতি গোপনে বিছিন্নভাবে আংশিক তৎপরতা দেখালেও যে কোন সময় তারা সক্রিয় হয়ে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে। সাধারণত এরা বিভিন্ন নির্বাচনকে টার্গেট করে হামলার চেষ্টা করে। এবারও তারা ঢাকার মেয়র ও উপজেলা নির্বাচনকে টার্গেট করে অর্থ সংগ্রহসহ অস্ত্র, বিস্ফোরক মজুদ করছে।
×