ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাশরাফি চাওয়ায় দলে ফিরেছেন সাব্বির

প্রকাশিত: ০৭:০০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

মাশরাফি চাওয়ায় দলে ফিরেছেন সাব্বির

মোঃ মামুন রশীদ ॥ গত বছর সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাব্বির রহমান রুম্মান। সে অনুসারে আগামী মাসের শেষে তার ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এর অনেক আগেই তিনি জাতীয় দলে ফিরলেন। আগামী মাসে নিউজিল্যান্ড সফরের জন্য বুধবার দল ঘোষণার সময় জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ওয়ানডে দলে সাব্বিরের নাম ঘোষণার পরই আলোচনা শুরু হয়ে যায়। কারণ এই সময়ের মধ্যে ঘরোয়া ক্রিকেটেও তেমন কোন আহামরি নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি সাব্বির। শুধু চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে ৫১ বলে ৮৫ রানের একটি বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন, বাকি ম্যাচগুলোয় ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। তবে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নান্নু, তার দাবি ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার চাওয়া এবং নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন বিবেচনায় পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকাতেই সাব্বিরকে দলে নেয়া হয়েছে। মাশরাফি চেয়েছেন ৬/৭ নম্বর পজিশনে নিউজিল্যান্ডের গতিময় উইকেটে পেসারদের ভালভাবে সামাল দেয়ার জন্য সাব্বিরকে পেতে। নানাবিধ বিতর্কিত ঘটনায় নিজেকে জড়িয়েছেন সাব্বির। এর মধ্যে দর্শক পেটানো, ভারতের দেরাদুনে গিয়ে তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে পেটানো, নারী সংসর্গসহ অনেক ধরনের অভিযোগে বেশ কয়েকবার মোটা অঙ্কের জরিমানা এবং স্বল্প মেয়াদে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন সাব্বির। একই সঙ্গে ক্রিকেটার হিসেবেও ফর্মহীনতায় ভুগছিলেন তিনি। সর্বশেষ আবারও খেলা চলাকালীন সাইড স্ক্রিনের পেছনে গিয়ে এক কিশোরকে পেটানোর পর কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) শৃঙ্খলা কমিটি। ৬ মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হন সাব্বির। তবে এবার আরেকটি সুযোগ পেয়ে গেলেন আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরে। ১৫ সদস্যের ঘোষিত ওয়ানডে দলে তিনি জায়গা ফিরে পেয়েছেন। সাব্বিরের বিষয়ে আগেরদিনই মাশরাফি বলেছিলেন, ‘একটা ম্যাচে সাব্বির ভাল করেছে। ও যদি এখন পারফর্ম করে যেতে পারে। এখনও বলার মতো কিছু বলব না। তবে শেষ ম্যাচে আমাদের সঙ্গে সেই ইনিংসটা খেলেছে, ওকে যখন জাতীয় দলে নেয়া হয়েছে, ওর যে সামর্থ্য আছে এই ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারার... ওর থেকে আসলে প্রত্যাশা অনেক। আশা করি ও চালিয়ে যেতে পারবে। টপঅর্ডার থেকে ছয় নম্বর পর্যন্ত দেখেন তাহলে মনে হয় বিরাট পরিবর্তনের সুযোগ আছে। হয়তো অতিরিক্ত বোলার, দুইজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ওদের নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে। এখানে বাড়তি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে সাব্বির আছে, মোসাদ্দেক আছে।’ নিজে থেকেও নির্বাচকদের ও কোচ স্টিভ রোডসকে ওয়ানডে অধিনায়ক সাব্বিরের কথা বলেছিলেন। অধিনায়কের কথা রেখেই সাব্বিরকে ফেরানো। এ বিষয়ে নান্নু বলেন, ‘সাব্বিরের পারফর্মেন্স, আমি পরিষ্কার করে দেই। এটা সম্পূর্ণ আমাদের অধিনায়কের পছন্দের। ও খুব জোরালোভাবে আমাদের দাবি জানিয়েছে এবং আমরা দু’জনই এই পক্ষে সমর্থন করেছি। ওরা এমন একজনকে চাচ্ছে যারা লোয়ার মিডলঅর্ডারে ফাস্ট বোলারকে সামলাতে পারবে। বিশ্বকাপের প্ল্যান করে, নিউজিল্যান্ডের প্ল্যান করেই ওকে নেয়া হয়েছে। দেখা যাক, অধিনায়ক যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী তার ব্যাপারে। আমিও আশাবাদী সে ফিরে আসবে।’ তবে এখানে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে সাব্বিরের তেমন ভাল খেলতে না পারা এবং নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এখনও এক মাস বাকি থাকা নিয়ে। ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার কথা ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে। আর চলমান বিপিএলে শুধু একটা ম্যাচেই ভাল করতে পেরেছেন। এ বিষয়ে নান্নু বলেন, ‘এটা তো শৃঙ্খলা কমিটির ব্যাপার। জানুয়ারির ৩১ তারিখের পর থেকে সে মুক্ত। এটা আপনাদের বলা হয়নি, ওর শাস্তি এক মাস কমিয়ে আনা হয়েছে। সুতরাং ওভাবেই আমরা চিন্তা করে তাকে নিয়েছি। আর আমরা দল ঘোষণার আগে যে কোন খেলোয়াড়ের ব্যাপারে শৃঙ্খলা কমিটির রিপোর্ট এবং ফিজিও’র কাছ থেকে ফিটনেস রিপোর্ট পেয়ে বোর্ড সভাপতির অনুমোদন সাপেক্ষে দল দেই। সাব্বির সেই প্রক্রিয়াতেই দলে এসেছে। কিছু কিছু ব্যাপার আছে, যারা আগে পারফর্ম করেছে, ঘরোয়াতে খেলে যাচ্ছে। বিপিএল একটা আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টের মতোই, এখানে অনেক বিদেশী ক্রিকেটার খেলছে। এখানে ওর পারফর্মেন্স একটু গণনা করা যায়। এমন না যে একদম ফেলে দেয়া যায়। এই জায়গা থেকে অধিনায়ক টিম ম্যানেজমেন্টের পরিকল্পনা থাকে, তখন নির্বাচকদের সেই পরিকল্পনার সঙ্গে অবশ্যই যেতে হয়। সেই হিসেবে অধিনায়ক-কোচ যখন জানিয়েছে তখন আমাদের সেই অনুযায়ী যেতে হয়েছে।’ আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি নেপিয়ারে ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে। তখন থেকেই খেলতে পারবেন সাব্বির। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সর্বশেষ টেস্ট, জুনে সর্বশেষ টি২০ ও জুলাইয়ে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২৭ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার।
×