ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্থ-সম্পত্তি বাজেয়াফতের নির্দেশ

ইউনিপে টু ইউর ছয়জনের ১২ বছর করে জেল

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

ইউনিপে টু ইউর ছয়জনের ১২ বছর করে জেল

কোর্ট রিপোর্টার ॥ কল্পিত সোনা ক্রয়ে বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা লাভের লোভ দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পাচার করার দায়ে এমএলএম কোম্পানি ইউনিপে টু ইউ বাংলাদেশ লিমিটেডের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে ১২ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক আসামিকে ২৭০ কোটি টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ইউনি পে’র জব্দ করা ব্যাংক হিসাবের ৪২০ কোটি টাকা ও গ্রাহকদের টাকায় কেনা সমস্ত সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াফত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ মোঃ দিলজার হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, ইউনি পে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মুনতাসির হোসেন ইমন, চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান শাহীন, নির্বাহী পরিচালক মাসুদুর রহমান, মহাব্যবস্থাপক এম জামশেদুর রহমান, উপদেষ্টা মঞ্জুর এহসান চৌধুরী ও পরিচালক এইচ এম আরশাদ উল্লাহ। এর মধ্যে মুনতাসির হোসেন ইমন ও জামশেদুর রহমান কারাগারে আছেন। রায় ঘোষণার সময় তাদের আদালতে হাজির করা হয়। তাদের হাজতবাসের সময় সাজা থেকে বাদ যাবে। জামিনে থাকা আরশাদ উল্লাহ রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাদের সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়। আসামি শহীদুজ্জামান শাহীন, মাসুদুর রহমান ও মঞ্জুর এহসান চৌধুরী পলাতক রয়েছে। তারা আদালতে আত্মসমর্পণের পর বা গ্রেফতার হওয়ার পর এই রায় কার্যকর হবে। এ কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় শতাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানি ইউনি পে’র প্রতারণা মামলায় এই প্রথম ওই কোম্পানির কর্মকর্তাদের শাস্তি হলো। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০৯ এর ৪(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল আসামিদের বিরুদ্ধে। এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড। তবে আইনটি ২০১২ সালে রহিত করে ২০১২ সালে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন করা হয়। নতুন আইনের ৩১ ধারায় উল্লেখ করা আছে ২০০৯ সালের আইনে বিচারাধীন মামলার বিচার ২০১২ সালের আইনের ৩১ ধারায় পঠিত হবে। অর্থাৎ ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদ-­ দেয়া যাবে। আদালত এই ধারায়ই আসামিদের শাস্তি দেয়। আদালত রায়ে বলে, আসামিদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে। আসামিরা নিরীহ জনসাধারণকে অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে পাচার করেছেন। এই কারণে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হলো। দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন। আসামি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মোঃ হাবিবুর রহমান পিন্টু, শফিকুর রহমান প্রমুখ। এ্যাডভোকেট পিন্টু জনকণ্ঠকে বলেন, ‘২০০৯ সালের অপরাধের জন্য ২০০৯ সালের আইনে অভিযোগ গঠন হয়। কিন্তু আদালত শাস্তি দিয়েছে ২০১২ সালের আইনে। এটা বেআইনী। উচ্চ আদালতে আপীল করব।’ মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি মুনতাসির হোসেন ইমন ও শহীদুজ্জামান শাহীন ধানম-ির সাতমসজিদ রোডে ও পরিবাগের হাতিরপুলে মোতালেব প্লাজার ঠিকানা ব্যবহার করে ২০০৯ সালের ১১ অক্টোবর রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এ্যান্ড ফার্মস এর পরিদফতরে ইউনি পে টু ইউ’র বাংলাদেশ লিমিটেড এর নিবন্ধন নেন। জানা যায়, তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো অনুসন্ধান করে জানতে পারে, ইউনি পে-টু মালয়েশিয়ার ‘বেস্ট জিনিয়াস এসডিএন. বিএইচডি’ কোম্পানির এজেন্ট । কিন্তু বিদেশী প্রতিষ্ঠানের শাখা বা এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে হলে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭-এর ১৮ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক হওয়া সত্ত্বেও এ ধরনের কোন অনুমতি নেয়নি। তারা বেআইনীভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়েছেন। ব্যুরো জানতে পারে, ২০০৯ সালের ১ নবেম্বর থেকে ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪৬ কোটি টাকারও বেশি জমা হয় ইউনি পে টুর বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে। এসব হিসাব থেকে ১৩৫১ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার ৮৯২ টাকা আসামিরা ব্যক্তিগতভাবে উত্তোলন করেছেন। এ ছাড়া অন্য কোম্পানি গঠন করে সেগুলোর নামে ২৬৯ কোটি ৬৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৭ টাকায় জমি ক্রয় করেছেন আসামিরা। বর্তমানে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর প্রাক্তন পরিদর্শক মোঃ তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০০৯ এর ২(ট)(অ) এবং ৪(২) ধারায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় ইউনি পে-টুর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১১ সালের ২২ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করে। মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর হওয়ার পর ২০১৫ সালের ৬ জুলাই ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়। সাক্ষ্য নেয়া হয় ২৩ জনের ।
×