ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদের সংশোধন করুন, ছাড় দেয়া হবে না ॥ বিআরটিএতে কাদের

জনগণকে সেবা দেয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে চাই

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

জনগণকে সেবা দেয়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিজ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দায়িত্ব পালনে দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। দুর্নীতি নিয়ে বিআরটিসির কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক করার পরদিন বিআরটিএতে গিয়েও এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান জানালেন ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএতে দালালদের দৌরাত্ম্যে বদনাম হওয়ার কথা স্বীকার করে এর পেছনের কর্মকর্তাদের সংশোধন হতে বলেছেন তিনি। বলেন, ‘কারও কাছ থেকে কোন কমিশন নেন না, তাই বদনামের ভাগীদারও তিনি হতে চান না। আমি বিআরটিএর অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে খুবই বিব্রত ছিলাম। বাস্তবতা হলো নিজেদের সংশোধন করুন, সময় আছে। অন্যথায় কোন ছাড় দেয়া হবে না। বিআরটিএতে দালালদের দৌরাত্ম্য দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিক সময়ে সেতুমন্ত্রী নিজেও গিয়ে বিভিন্ন কার্যালয়ে দালাল ধরেছেন। দালালদের ব্যাপারে সেবা গ্রহীতারা সরাসরি অভিযোগও করেছেন মন্ত্রীর কাছে। দালাল ঠেকাতে বিআরটিএ সদর দফতরসহ বিভিন্ন কার্যালয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হয়েছে। তাতে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। আবার ফিরেছে দালাল চক্র। কাদের বলেন, ভেতরের লোকজনের সঙ্গে যোগসাজশ না থাকলে দালালরা কিভাবে আসে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের প্রচারে জঙ্গীবাদ ও মাদকের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধেও ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। নতুন সরকার গঠনের পর মন্ত্রীরাও নিজেদের দফতরে গিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সতর্ক করে বক্তব্য দিচ্ছেন। মঙ্গলবার মতিঝিলে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন করপোরেশন-বিআরটিসিতে গিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাষ্ট্রায়ত্ত এই পরিবহন সংস্থার কার কত ‘ইনকাম’, তা ভালভাবে জানেন জানিয়ে সতর্ক করেন তিনি। বুধবার বনানীতে বিআরটিএতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার দুর্নীতি কমিয়ে জনগণকে সেবা দেয়ার যে অঙ্গীকার করেছে, তা বাস্তবায়ন করতে চান তিনি। ‘সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অঙ্গীকার করেছেন দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের। সেই অঙ্গীকার আমরা পূরণ করতে চাই। কর্মকর্তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবেন। আমি বার্তা দিচ্ছি, দুর্নীতিমুক্ত বিআরটিএ চাই।’ আগে গাড়ি না এনেই বিআরটিএ থেকে ফিটনেস সনদ নবায়নের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, এখন এখানে পরিবর্তন কিছুটা হয়েছে। আমি পুরো পরিবর্তন চাই। আমি নতুন করে যাত্রা শুরু করেছি। কিছু অনিয়ম কমিয়েছি। আরও কমাতে হবে। এজন্য কর্মকর্তাদের সচেতন হতে হবে। বিআরটিএর ভেতরের যোগসাজশ আছে বলেই দালালরা দৌরাত্ম্য দেখাতে পারে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ভেতরে যোগসাজশ না থাকলে বাইরে থেকে কীভাবে দালালরা এসে উপদ্রব করে? দালালদের কারণে বিআরটিএর বদনাম হচ্ছে। মন্ত্রী হিসেবে এর দায় আমি এড়াতে পারি না। আমি কোন কমিশন নেই না, পার্সেন্টেজ নেই না। আমি এর অংশীদার হতে চাই না। যাদের জন্য সুনাম নষ্ট হচ্ছে তাদের সংশোধন হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। নইলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। বিআরটিএতে এসে মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে মনোযোগী হতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মেঘনা ও গোমতী সেতু টোলপ্লাজায় টোল আদায়ের নামে যেন হয়রানি না করা হয় সেজন্য ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের। তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছি, সহজতর উপায়ে টোল আদায় করেন। বলেছিলাম ভাংতি নিয়ে টোল প্লাজায় আসতে। ভাংতি দেয়ার নামে বিলম্ব করে। টোল আদায়ে যেন কোন বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য আবারও নির্দেশ দিচ্ছি। ঢাকার বাস নিয়েও কথা বলেন সড়ক মন্ত্রী। তিনি বলেন, রাজধানীতে ‘গরিব গরিব চেহারার’ ফিটনেসবিহীন যানবাহন এখনও কীভাবে চলছে, তা বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের কাছে জানতে চান মন্ত্রী। জবাবে তিনি বলেন, প্রতিদিনই এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব গাড়ি না চালাতে মালিকদের অনুরোধ করা হলেও তারা মানে না। কোন ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় এসব যানবাহনকে জব্দ করা যাচ্ছে না। তখন ডাম্পিং স্টেশন করার জন্য একটি জায়গা চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস নিয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, তারা কমিটির সুপারিশগুলো মেট্রো আরটিসিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানে এটি প্রক্রিয়াধীন আছে। এ সময় মন্ত্রী জানান, সফলতার সঙ্গে সপ্তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে পদ্মাসেতুর এক কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। এ পর্যন্ত পদ্মাসেতু প্রকল্পের তেষট্টি ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কাদের বলেন, বিআরটিএতে পুরোপুরি ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে অনিয়ম দুর্নীতি কমবে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছি, ভিজিট করেছি- আগের তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটা ভাল হয়েছে। অভিযোগ আগের মতো ততটা নেই। এরপরও ভেতরে সমস্যা আছে। যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন তারা সংশোধন হয়ে যান। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনী অঙ্গীকার-ওয়াদা পূরণ করতে চাই। আপনারা স্বচ্ছতার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। নতুন সরকারের বার্তা- আমরা দুর্নীতিমুক্ত করতে চাই। বিআরটিএতে যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, গত ১০ বছর ধরে বিএনপি শুধু আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে এসেছে, কিন্তু আন্দোলন করতে পারেনি। কারণ, জনগণ সাড়া দেয়নি। আর এখন আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর যখন জনগণ শান্তিতে আছে, বিএনপির আন্দোলনের ডাকে তারা কেন সাড়া দেবে! আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় নেতাকর্মীদের আন্দোলনে নামতে বলেছেন। কিন্তু জনগণ ছাড়া আন্দোলন হয় না। মির্জা ফখরুলের আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেবে, এটা দুঃস্বপ্নের নাম।’ এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালুর কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এভাবে প্রকল্পের পর প্রকল্প শেষ করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির দিকে। মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল চালু হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে বলেও জানান মন্ত্রী। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আগামী ২৬ জানুয়ারি দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন করে মনোনয়ন দেয়া হবে। আগের প্রার্থী পুনরায় পাবেন কি-না, এটা সংশ্লিষ্ট মনোনয়ন বোর্ড ঠিক করবে। আশা করি সিটি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। তাছাড়া ওইদিন কিশোরগঞ্জে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আসনেও উপনির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
×