ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হলি আর্টিজানে হামলার বিচার শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

হলি আর্টিজানে হামলার বিচার শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুরু হয়েছে দুনিয়া কাঁপানো হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলা মামলার শুনানি। বুধবার মামলার প্রথম সাক্ষী হলি আর্টিজান মালিক সাদাত মেহেদী বলেছেন, সকাল সাড়ে আটটায় রেস্তরাঁ থেকে ফোন আসে। কাছাকাছি এসেই আমি গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। আমি সেখানে থাকা অবস্থায় দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে। তিনি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে হলি আর্টিজানে হামলা মামলার সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন আরও সাক্ষ্য দেন তার স্ত্রী সামিরা আহম্মেদ, লেকভিউ ক্লিনিকের ক্যান্টিন ম্যানেজার আব্দুল হাকিম ও হলি আর্টিজানের শেফ আকাশ খান। সাক্ষ্য শেষে তাদের জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। এর পর ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করে। সাদাত মেহেদী জবানবন্দীতে বলেন, ’১৬ সালের ১ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে রেস্তরাঁ ম্যানেজার সেজাদ আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, রেস্টুরেন্টের ভেতর দুর্বৃত্তরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে গোলাগুলি করছে। তখন আমি আরেক রেস্তরাঁ ইজুগিতে ছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে হলি আর্টিজানে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে পুলিশের গাড়ি দেখতে পাই। আমি সেখানে যাওয়ার পর বিকট শব্দে একটা বোমা ফাটে। আমার সামনে দিয়ে আহত দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। কিছুক্ষণ পর আবার গোলাগুলি শুরু হয়। আমি সেখানে থাকা অবস্থায় দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। বোমার শব্দে বিল্ডিংগুলো কেঁপে ওঠে। তখন কে কী করবে ঠিক বুঝতে পাচ্ছিল না। যুদ্ধের মতো অবস্থা শুরু হয়ে যায়। উল্লেখ্য, ’১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় হামলা চালিয়ে বিদেশী নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গীরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গী নিহত হন। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করে পুলিশ। পরে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এ নিহত পাঁচ হামলাকারী হলোÑ রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। বিভিন্ন ‘জঙ্গী আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলোÑ তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান। এ মামলায় ’১৮ সালের ২৬ নবেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গী হামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। গত ৮ আগস্ট হলি আর্টিজান মামলায় ৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশীট গ্রহণ করে ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন নামে দু’জন পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ’১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি মামুনুর রশিদ রিপনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর আগে ২৩ জুলাই ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর। আসামিদের মধ্যে ছয়জন কারাগারে এবং দু’জন পলাতক। কারাগারে থাকা ছয় আসামি হলোÑ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান এবং হাদিসুর রহমান সাগর। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তাদের মধ্যে আটজন বিভিন্ন অভিযানে ও পাঁচজন হলি আর্টিজানেই নিহত হন।
×