ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তবলীগের দুপক্ষ একত্রে এজতেমা করবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

তবলীগের দুপক্ষ একত্রে এজতেমা করবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অবশেষে তবলীগ জামাতের দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছে। উভয়পক্ষ এক সঙ্গে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে বিশ্ব এজতেমা করবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার সচিবালয়ে তবলীগের বিবদমান দু’পক্ষের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের এ কথা জানান। বৈঠকে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তবলীগ জামাত দুটি পক্ষ হয়ে গেছে। মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি, আরেকটি মাওলানা জুবায়েরের নেতৃত্বে। দু’পক্ষের সবাই এসেছিলেন। দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী মাসের (ফেব্রুয়ারি) যে কোন সময় টঙ্গীতে বিশ্ব এজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। দু’পক্ষই সেই এজতেমাটা করবে। তিনি বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সাড়ে ১০টায় ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর অফিসে আরেকটি সভা হবে সেখানে কবে, কখন, কীভাবে এজতেমা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে উভয়পক্ষের দু’জন সব সময় বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা যৌথভাবে বিশ্ব এজতেমার নেতৃত্ব দেবেন। যাকে নিয়ে বিরোধ সেই দিল্লী মারকাজের প্রধান মাওলানা সাদ কান্ধলভী এজতেমায় আসবেন কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উনি এই এজতেমায় আসবেন না, সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজতেমায় নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রতিবছর আমরা কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকি। সম্পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী করে থাকে, প্রয়োজনবিশেষে সেনাবাহিনীও সহযোগিতা করে থাকে, সেটা থাকবে। বিশ্ব এজতেমাটা যাতে সুন্দরভাবে হয় প্রতিবারের মতো সে জন্য নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব নেবে। তবলীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের বিষয়টি ইঙ্গিত করে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি এতটাই বিতর্কিত হয়ে গেছে যে আমরা এখন কিছু না বললে এটা পরিষ্কার হচ্ছে না। আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি হাইকোর্টে রিট পিটিশন পর্যন্ত গেছে। সেখানে কথাবার্তা ভাল আসেনি। যেটার জন্য আমাদের দেশ, আমাদের ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও টঙ্গীর বিশ্ববিখ্যাত ইজতেমার গায়ে একটু কলঙ্ক লাগছে। এটা নিরসনের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে বসেছি। তবে একটা জিনিস জেনে খুশি হবেন, এতদিন দু’পক্ষ কিন্তু একসঙ্গে বসেনি। এখন এসেছে, আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে আলাদা আলাদাভাবে। এবার আমরা চিন্তা করছিলাম দু’পক্ষকেই এক জায়গায় বসতে হবে। আজ দু’পক্ষের সবাই একত্র হয়ে সুন্দরভাবে বসছিলাম। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো, ঐক্যবদ্ধভাবে একটাই এজতেমা হবে, দুটি হবে না। সারাদেশে গোলমাল যা হচ্ছে, এটা কাম্য নয়। এটা মেটানোর ফয়সালা হিসেবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে একটা জামাত করব। সিদ্ধান্ত ফাইনাল হয়ে গেছে- এজতেমা দুই গ্রুপে হবে না। সবাই মিলে এক সঙ্গে হবে। এক গ্রুপের মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলাম ও আরেক গ্রুপের মাওলানা জুবায়েরকে এই দায়িত্ব দিয়েছি। এক হওয়ার জন্য তারা কোন শর্ত দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ বলেন, যেসব শর্ত দিয়েছেন মেনে নিয়েছি। এবং সেভাবেই আগামীকাল হবে। তারা কী শর্ত দিয়েছেন- এ বিষয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, শর্ত দরকার নেই। ওনারা এক সঙ্গে করবেন, এটা হলো শর্ত। যে কোন মতাদর্শ, যাই থাক এবার একবারে এজতেমা হবে, এর মধ্যে কোন মতানৈক্য নেই। প্রতিনিধি দলের দেওবন্দে যাওয়ার বিষয়টি এখন আর থাকল কিনা জানতে চাইলে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, দেওবন্দে যাওয়া-না যাওয়ার শর্ত আর নেই। তবে ভবিষ্যতে যাতে স্থায়ী সমাধান করা যায় এ ব্যাপারে যখন যেখানে গেলে ভাল হয় সেই প্রক্রিয়া চালু থাকবে। মামলা প্রত্যাহার করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলোচনা করব। আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বৈঠকে সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবলীগ জামাতের দিল্লীর আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য নিয়ে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের তবলীগ জামাত। আলেমরা সাদ বিরোধী ও সাদপন্থী দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এক গ্রুপে রয়েছেন সাদ কান্ধলভিপন্থী বাংলাদেশে তবলীগের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। অপর গ্রুপে রয়েছেন মাওলানা সাদ বিরোধী কওমিপন্থী শূরা সদস্য মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। এ বিভক্তি চরম রূপ ধারণ করে গত বছরের জানুয়ারিতে বিশ্ব এজতেমার সময় মাওলানা সাদের বাংলাদেশে আসার পর। বিরোধীদের বাধার মুখে এজতেমায় অংশ না নিয়েই মাওলানা সাদকে ওই সময় বাংলাদেশ ছাড়তে হয়েছিল। গত ১ ডিসেম্বর এজতেমা মাঠে দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে বিশ্বের মুসলমানদের দ্বিতীয় বড় ধর্মীয় সম্মেলন ‘বিশ্ব ইজতেমা’র আয়োজনও করে আসছিল তবলীগ জামাত। ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে অঞ্চলভেদে দুই পর্বে এটি হয়। কিন্তু এবার দু’পক্ষ চলতি মাসে আলাদাভাবে এজতেমার তারিখ ঘোষণা করে। নির্বাচনের আগে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে সভা করে এজতেমা স্থগিত করে। সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল, নির্বাচন শেষে দু’পক্ষের সঙ্গে বসে অভিন্ন এজতেমার তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
×