ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গার্মেন্টসে আবার অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে একটি সুশীল মহল

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

গার্মেন্টসে আবার অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে একটি সুশীল মহল

শংকর কুমার দে ॥ দেশের গার্মেন্টস শিল্পের নতুন করে অস্থিরতা-অরাজকতা ও নাশকতা তৈরির জন্য উস্কানি দিতে মাঠে নেমেছে দেশী-বিদেশী একাধিক অশুভ চক্র। গার্মেন্টস শিল্পের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, গুজব ছাড়ানোর জন্য গঠন করা হয়েছে বিরাট অঙ্কের একটি ফান্ড। শ্রমিকদের জন্য যৌক্তিক বেতন-ভাতার জন্য কমিটি গঠন ও ঘোষণা করার পরও নাশকতা, নৈরাজ্য, সহিংসতার ঘটানোর জন্য নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে তৃতীয় পক্ষ। মুসলিম লীগের নেতা খান এ সবুর খানের নিকটাত্মীয়, যিনি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত এক ফটো সাংবাদিক এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী এক তরুণ বামপন্থী নেতা যার স্ত্রীর একটি এনজিও কর্ণধারÑ এ ধরনের ব্যক্তিদের কঠোর নজরদারিতে রেখেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশে বাধাদান, বিদেশী বাজার নষ্ট, রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের রফতানি আয় বন্ধসহ নানামুখী চক্রান্তে নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নষ্ট করতে গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে এ ধরনের চক্রান্ত বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গার্মেন্টস শিল্পের অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে যারা মাঠে নেমেছেন তারা ইতোমধ্যেই গার্মেন্টস শিল্পের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে বিদেশী গণমাধ্যমে। বিদেশী প্রভাবশালী রাষ্ট্রের শক্তিশালী কয়েকটি গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক ইতোমধ্যেই গার্মেন্টস শিল্পের প্রতিবেদন তৈরির নামে ঘুরাফেরা শুরু করেছে দেশের বিভিন্ন স্থানের গার্মেন্টস শিল্পে। কথা বলার নামে উস্কানি দেয়া হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের। এ জন্য দেশের কিছু ব্যক্তি আছেন যারা বরাবরই আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী তারা নতুন করে মাঠে নেমেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভয়াবহ ভরাডুবির প্রতিশোধ নিতে নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নতুন করে গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে চক্রান্ত শুরু করেছে অশুভ চক্রগুলো। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দেশের বিরুদ্ধে বিদেশী সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাসহ বিদেশী টেলিভিশন এবং যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ রটিয়েছেন যারা তারাই এখন আবার নতুন করে গার্মেন্টস শিল্প নিয়ে চক্রান্ত শুরু করেছেন। গার্মেন্টস শিল্পের বিরুদ্ধে মিথ্যা, গুজব, অপপ্রচারে জন্য ক্যামেরার কারসাজি করে নানা ধরনের ছবি তৈরি করা হচ্ছে যাতে বিদেশী গণমাধ্যমসহ বিদেশী রাষ্ট্র ও সরকারকে বুঝানো যায় যে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের অবস্থা করুণ, অসন্তোষে অচলাবস্থায় চলছে এই শিল্পটি। গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ, ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয়ার জন্য নতুন করে ছক কষছে অশুভ চক্র। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের মতোই গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে একাধিক চক্রের সদস্যরা। গার্মেন্টস শিল্পে অশান্ত করার পেছনে দেশী-বিদেশী অশুভ মহল জড়িত এবং এ বিষয়টির সঙ্গে গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পেয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরি করে তাকে পুঁজি করে পরিকল্পিত নাশকতায় ইন্ধন দেয়ার চেষ্টা করছে মদদদাতারা। এ খাতে অস্থিতিশীলতার জন্য কারা দায়ী তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর বিস্তারিত তথ্য পর্যালোচনার পর অবিলম্বে ইন্ধনদাতা ও মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। ইন্ধনদাতা ও মদদদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি নেপথ্যের ইন্ধনদাতাদের তৎপরতা নজরদারিরও বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার ওই কর্মকর্তা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন সরকারকে বেকায়দায় ও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য দেশের পোশাক খাতে অশুভ মহল অসস্তোষ সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে খবর পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। পোশাক খাতের নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করেই সরকারবিরোধী বিশেষ মহলটি এই চক্রান্ত করেছিল। কিন্তু দ্রুততার সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি সমঝোতা হয়ে যাওয়ায় তখন সুবিধা করতে পারেনি ওই কুচক্রী মহলটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে এখন আর কোন ধরনের বিরোধ না থাকলেও সেই পুরনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে একটি বিশেষ মহল দেশের পোশাক শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষের নামে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের চেষ্টার ছক কষা হচ্ছে। যাতে নির্বাচনের পরে এ নিয়ে দেশে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়, যাতে নতুন সরকার বেকায়দায় পড়ে। এতে বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সহজ হবে। এই হীনউদ্দেশ্যেই ষড়যন্ত্রকারীরা মাঠে কাজ করছে। তাদের উদ্দেশ্য নির্বাচন বানচাল করা। দেশের তৈরি পোশাক খাত একটি স্পর্শকাতর খাত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের বায়ারদের নজর রয়েছে এদিকে। তাই এ খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারলে অসাধু চক্রটি সহজে বাংলাদেশের নির্বাচনকে বিশ্বের নজরে আনতে সক্ষম হবে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই এই খাতে কঠোর নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। নির্বাচন শেষে বিজয়ী দলের নেতৃত্বে নতুন সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার পথে বাধা তৈরি করতে আবারও তৈরি পোশাক খাত অধ্যুষিত অঞ্চল নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, চট্টগ্রাম ও টঙ্গী এলাকায় অবস্থিত তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে অসন্তোষ সৃষ্টির পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে ‘শ্রমিক নেতাদের’ গতিবিধিও নজরে রাখছেন দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। নজরে আনা কারখানাগুলোর মধ্যে ঢাকা মহানগর এলাকায় রয়েছে প্রায় দুইশো। দেড়শ কারখানা রয়েছে চট্টগ্রামে। এ ছাড়া বাকি কারখানা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ অন্যান্য এলাকায়। অসন্তোষপ্রবণ এ সব এলাকায় শিল্পাঞ্চল পুলিশ ছাড়াও সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নজরদারি করছেন। শুধু নজরদারি নয়, প্রয়োজন হলে এ্যাকশনেও যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যাতে কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রের কালো হাত ভেঙ্গে যায়। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প খাতের বিরুদ্ধে আগে থেকেই নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলেছে। সেসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই দেশের প্রধান রফতানি খাত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেতের প্রতিপালন বিষয়ে কোন সমস্যা নেই। বর্তমানে এ শিল্পে সুন্দর কর্মপরিবেশ বিরাজ করছে। পোশাক খাতের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের মজুরি আগের তুলনায় বাড়লেও বিভিন্ন রকম ব্যাখ্যা দিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচন চান না, তারা বিভিন্নভাবে নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে, নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে, নতুন সরকারকে সহ্য করতে পারছে না তারাই আবার এখন নতুন করে চক্রান্ত শুরু করেছে ওই কুচক্রী মহল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনে যে কোন কঠোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পিছপা হবে না সরকার। যে কোন মূল্য নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বা নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হতে দেবে না, কঠোর এ্যাকশনে যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
×