ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গেইল, হেলস, ভিলিয়ার্সে রংপুর রাইডার্সের জয়

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

গেইল, হেলস, ভিলিয়ার্সে রংপুর রাইডার্সের জয়

মিথুন আশরাফ ॥ ক্রিস গেইলের ব্যাটিং তা-ব দেখার মিলছিল না। অবশেষে মিলল। সেই সঙ্গে এবি ডি ভিলিয়ার্সও ব্যাটিং ঝড় তুললেন। যেদিন নৈপুণ্য মিলে, সেদিন সবারই মিলে। এ্যালেক্স হেলসও বিধ্বংসী ব্যাটিং করলেন। আর বল হাতে ফরহাদ রেজা দেখালেন ঝলক। তাতে করে খুলনা টাইটান্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দিল রংপুর রাইডার্স। রংপুর টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে কাজে লাগায় খুলনা। দলের ব্যাটসম্যানদের ঐক্যবদ্ধ ব্যাটিং নৈপুণ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৮১ রান করে খুলনা। নাজমুল হোসেন শান্ত ৪৮, ডেভিড উইজ অপরাজিত ৩৫, ব্রেন্ডন টেইলর ৩২, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২৯ রান করেন। ফরহাদ রেজা নেন ৪ উইকেট। জবাব দিতে গিয়ে রংপুর ব্যাটসম্যানরাও ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্যই দেখান। রংপুর ৪ উইকেট হারিয়ে ১৯.৩ ওভারে ১৮৩ রান করে জিতে। ক্রিস গেইল ও এ্যালেক্স হেলস ৫৫ রান করে করেন। এবি ডি ভিলিয়ার্স ৪১ রান করেন। রাইলি রুশো অপরাজিত ১০ রান করেন। রংপুরের এ্যালেক্স হেলসতো শুরু থেকেই বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে থাকেন। শুভাশীষ রায়ের করা তৃতীয় ওভারে চারটি বাউন্ডারি হাঁকান। জুনাইদ খানের করা দলের চতুর্থ ওভারে দুই ছক্কা, এক চার মারেন। মুহূর্তেই চার ওভারে ৪২ রান হয়ে যায়। ক্রিস গেইল ব্যাটিং প্রান্তে থাকলেই ১ রান নিয়ে হেলসকে ব্যাটিং করার সুযোগ করে দেন। হেলসও একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। ৬ ওভারেই ৫৮ রান করে ফেলে রংপুর। এর মধ্যে ২৬ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় হেলসই হাফ সেঞ্চুরি করার সঙ্গে ৫৪ রান করে ফেলেন। তখন গেইলের থাকে ৪ রান। এরপর থেকে গেইলও ত্রাস ছড়ান। ইয়াসির শাহর টানা দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকান। গেইল যখন নিজের রূপে ফেরেন, হেলস ঝিমিয়ে পড়েন। দলের ৭৮ রানের সময় ২৯ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৫ রান করে ইয়াসিরের বলেই বোল্ড হয়ে যান হেলস। হেলস আউট হতেই ব্যাট হাতে নামেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। যার বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখতে সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন। দ্বিতীয় বলেই রিভার্স সুইপ করে বাউন্ডারি হাঁকান ‘৩৬০ ডিগ্রী’ খ্যাত ভিলিয়ার্স। নিজের সপ্তম বলে গিয়ে লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকান সবদিক দিয়েই ব্যাটিং করতে পারদর্শী ভিলিয়ার্স। ১২তম বলে সুইপ করে ফাইন লেগ দিয়েও ছক্কা হাঁকান। পরের ছক্কাটি লং অন দিয়ে মারেন। ১১তম ওভারে যেতেই ১০০ রান হয়ে যায় রংপুরের। গেইল নীরব হয়ে যান। ভিলিয়ার্স ‘টর্নেডো’ গতিতে ব্যাটিং করতে থাকেন। বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন ভিলিয়ার্স। কোন বোলারকেই ছাড় দেননি। তবে মাহমুদুল্লাহ প্রথম ওভার করতে এসে দ্বিতীয় বলেই ভিলিয়ার্সকে এলবিডাবলিউয়ের ফাঁদে ফেলেন। ‘রিভিউ’ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ভিলিয়ার্স। রিপ্লে দেখে একবার মনে হয়েছে আউট নয়। গ্লাভসে বল লেগেছে। তাই ফিল্ডাররা ফিল্ডিংয়ে চলে যান। আম্পায়ার নিজের স্থানে দাঁড়ান। ভিলিয়ার্সও ব্যাটিং করার জন্য প্রস্তুত হন। কিন্তু থার্ড আম্পায়ারতো নটআউট দেননি। পরক্ষণেই নাটকীয়তার তৈরি হয়। আবার রিপ্লে দেখানো হয়, তাতে আউট হন ভিলিয়ার্স। গেইল-ভিলিয়ার্স মিলে জুটিতে ৪৩ রান করতে পারেন। সাজঘরে ফেরার আগেই অবশ্য ২৫ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৪১ রানের মারমুখী ইনিংস উপহার দেন। যতক্ষণ উইকেটে থাকেন দর্শকদের মাতান ভিলিয়ার্স। দলের ১২১ রানে গিয়ে আউট হন ভিলিয়ার্স। তখনও উইকেটে থাকেন ২৫ রান করা গেইল। ম্যাচে জিততে তখনও ৪৬ বলে ৬০ রান লাগে। হেলস আউটের পর ভিলিয়ার্স এসে একই ধারা বজায় রাখেন। তাতে রানও দ্রুত স্কোরবোর্ডে যোগ হয়। ভিলিয়ার্স আউটের পর যেন স্কোরবোর্ডে রান জমা করাই গেইল ও মিঠুনের কাছে কঠিন হয়ে পড়ে। ১৩ ওভারে ১২৪ রান হয়। সেখান থেকে পরের তিন ওভারে হয় ১৫ রান। রানের গতি কমে যায়। ২৪ বলে জিততে তখন ৪২ রান লাগে। এরপরও জেতার সম্ভাবনা থাকে। গেইল যে উইকেটে থাকেন। মাহমুদুল্লাহর করা ১৭তম ওভারের প্রথম দুই বলেই লং অন, ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকান গেইল। শেষ বলেও লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে বল আর রানের পার্থক্য কমিয়ে আনেন। গেইলের তিন ছক্কায় এই ওভারেই ২০ রান নেয়া হয়। ১৮ বলে জিততে তখন ২৩ রান লাগে। ডেভিড উইজের করা ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে থার্ডম্যান দিয়ে চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন গেইল। ৩৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন। এবার বিপিএলে অবশেষে গেইলের কাছ থেকে হাফ সেঞ্চুরির দেখা মিলে। গেইল রান পাচ্ছিলেন না। কিন্তু সবারই জানা ছিল এমন এক সময় গেইলের ব্যাটিং দ্যুতি ছড়াবেন যখন দলের খুবই প্রয়োজন পড়বে। গেইল দ্যুতি ছড়ালেন। তাতে করে ১২ বলে জিততে ১৩ রান লাগে। যখন ৯ বলে জিততে ১১ রান লাগে, এমন মুহূর্তে আউট হয়ে যান গেইল (৪০ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৫৫ রান)। দলও চাপে পড়ে। খেলায় উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে বিপিএলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এ মুহূর্তে সেরা ব্যাটসম্যান রাইলি রুশো থাকাতে চিন্তা ভর করেনি। ৬ বলে জিততে ৬ রান লাগে। শেষ ওভারে ইয়াসির শাহ বল করতে এসে প্রথম বলেই মোহাম্মদ মিঠুনকে (১৫) আউট করে দেন। ৫ বলে জিততে তখন ৬ রান লাগে। দ্বিতীয় বলে নাহিদুল ইসলাম ১ রান নিয়ে রুশোকে ব্যাটিং করার সুযোগ দেন। ৪ বলে জিততে ৫ রান লাগে। তৃতীয় বলে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে দেন রুশো (১০*)। এই ম্যাচ জিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রংপুর শিবির। খুলনার ইনিংসের শুরুতেই বিপত্তির দেখা মিলে। দলের ৫ রানে আল-আমিনকে সাজঘরে ফেরান মাশরাফি। দলের ২৯ রানে গিয়ে জুনায়েদও আউট হয়ে যান। এরপর থেকে বিপত্তি দূর হয়। তৃতীয় উইকেটে গিয়ে ব্রেন্ডন টেইলর ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে হাল ধরেন। দুইজন মিলে দলকে ৭৮ রানে নিয়ে যেতে পারেন। ৪৯ রানের জুটিও গড়েন। কিন্তু গেইলের বলে টেইলর (৩২) আউট হতেই জুটির অবসান ঘটে। শান্ত ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ মিলে এরপর দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। ১০০ রানও স্কোরবোর্ডে যোগ হয়। ভালই এগিয়ে যান। ১৩৪ রান পর্যন্ত দুইজনই টিকে থাকেন। এমন সময় ৫৬ রানের জুটি গড়তেই দুইজনই আউট হয়ে যান। ফরহাদ রেজার করা ১৬তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে মাহমুদুল্লাহ (২৯) ও হাফ সেঞ্চুরি থেকে ২ রান দূরে থাকতে শান্ত সাজঘরে ফিরেন। আরিফুল হক যে কী বাজে ব্যাটিং করছেন! একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হচ্ছেন। সেই ব্যর্থতার ধারা বজায়ই থাকে। শেষে গিয়ে ডেভিড উইজের (১৫ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৩৫ রান) ব্যাটিং নৈপুণ্যে বড় স্কোরই গড়ে খুলনা। ফরহাদ রেজা অসাধারণ বোলিং করেন। ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। ১৯তম ওভারে সেই রেজার করা তৃতীয় ও পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকান উইজ। শেষ দুই ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৩০ রান যোগ হয়। উইজই ২৪ রান নেন। শেষদিকে তার মারমুখী ব্যাটিংয়েই এতদূর এগিয়ে যাওয়া হয় খুলনার। ১৫২ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ইয়াসির শাহকে (৫*) সঙ্গে নিয়ে ২৯ রানের জুটি গড়েন উইজ। ইয়াসির অসাধারণভাবে উইকেট আঁকড়ে থাকেন। খুলনা যে রান (১৮১ রান) করেছে, তাতেও জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি দলটি। হেরেছে। তাতে করে বিপিএলের ষষ্ঠ আসর থেকে প্রায় ছিটকে পড়েছে দলটি। এখন হাতে থাকা ৪ ম্যাচের সবকটিতে জিতলে হয়তো ‘প্লে-অফ’ খেললেও খেলতে পারে খুলনা। সেই সুযোগও আসলে কম আছে। দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল ম্যাচটি। খুলনাতো বিপাকে পড়ে ছিলই। ‘প্লে-অফ’ খেলাই দলটির জন্য কঠিন। রংপুরও বিপত্তিতে ছিল। দুই দলই সাতটি করে ম্যাচ খেলেছিল। রংপুর যেখানে ৩ জয় পেয়েছিল, সেখানে খুলনা মাত্র ১ জয় পেয়েছিল। এবার রংপুর আরেকটি জয় বাড়ালো। লীগে নিজেদের প্রথম ম্যাচটিই রংপুরের বিপক্ষে খেলেছিল খুলনা। ৮ রানে হেরেছিল। এবারও হারল। এই হারে খুলনার ছিটকে পড়াও যেন প্রায় নিশ্চিত হলো। স্কোর ॥ খুলনা টাইটান্স ইনিংস- ১৮১/৬; ২০ ওভার (আল-আমিন ৪, জুনায়েদ ১৩, টেইলর ৩২, শান্ত ৪৮, মাহমুদুল্লাহ ২৯, উইজ ৩৫*, আরিফুল ৬, ইয়াসির ৫*; রেজা ৪/৩২)। রংপুর রাইডার্স ইনিংস- ১৮৩/৪; ১৯.৩ ওভার (গেইল ৫৫, হেলস ৫৫, ভিলিয়ার্স ৪১, মিঠুন ১৫, রুশো ১০*, নাহিদুল ১*; ইয়াসির ২/৪৭)। ফল ॥ রংপুর রাইডার্স ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ ফরহাদ রেজা (রংপুর রাইডার্স)।
×