ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিআরটিসিকে লাভজনক করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হলো ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

বিআরটিসিকে লাভজনক করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হলো ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সরিষার মধ্যে ভূত থাকলে তা তাড়াতে হবে। যাত্রার শুরুতে প্রথম রাতেই বিড়াল মারতে হবে। কোন আপোস করা চলবে না। প্রয়োজনে দুর্নীতিবাজ অফিসারদের বাদ দিয়ে দিতে হবে। যারা দুর্নীতির সঙ্গে বিআরটিসিকে সমার্থক করে ফেলেছেন তাদের এখানে থাকার কোন অধিকার নাই। মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিলে বিআরটিসি ভবনের সম্মেলন কক্ষে ‘বিআরটিসির চলমান এবং ভবিষ্যত কার্যক্রম সম্পর্কে দিকনির্দেশনা ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। বৈঠকে বিএনপিসহ চলমান রাজনৈতিক নানা ইস্যুতেও কথা বলেন কাদের। গত প্রায় একমাস ধরেই বিআরটিসিতে বেতন ভাতা বকেয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন চলছে। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের ২১টি ডিপোর মধ্যে ২০টি ডিপোতে কমবেশি বেতন বকেয়া রয়েছে। বকেয়া বেতন পাওয়ার দাবিতে সম্প্রতি আন্দোলন শুরু করেন খিলক্ষেত বাস ডিপোর কর্মকর্তা কর্মচারীরা। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় আন্দোলনের পর মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ডিপো সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে পরে বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠীর নাশকতায় বেশকিছু বাস পুড়ে যায়। তাছাড়া গত কয়েক বছরে অনেক বাস নষ্ট হয়েছে। নতুন বাস ও ট্রাক আনা হয়নি। তাই ডিপোর আয় কমে যাওয়ায় বেতন সংকটের সৃষ্টি হয়। প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিআরটিসিতে দুর্নীতি বাসা বেঁধে আছে। যারা কাজ করেন না তাদের বলছি, কাজের প্রতি ভালবাসা না থাকলে দেশের প্রতি ভালবাসা আছে- এটা ভাবার কারণ নাই। নিজেদের পকেটের উন্নয়ন নয়, বিআরটিসির উন্নয়নে কাজ করুন। তিনি বলেন, বিআরটিসি’র অতীত খুব এটা সুখকর নয়। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতির জঞ্জাল দীর্ঘদিন ধরে বাসা বেঁধেছে। কোন কর্মকর্তা কত টাকা বেতন পান, কোথা থেকে কত টাকা আসে সব আমি জানি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে বিআরটিসির বাস। ট্রাকগুলো ভাল, প্রফিট দিচ্ছে। কিন্তু যাত্রীবাহী বাসের অবস্থা খারাপ। এর কারণ জানতে চান সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, সঠিক ব্যক্তির হাতে দায়িত্ব না পড়লে বিআরটিসি আগের অবস্থায় থাকবে। আমাদের বিআরটিসি লসে চলছে। অথচ আমাদের অনেক গাড়ি লিজে দেয়া রয়েছে। লিজে গাড়ি দিয়ে রেখেছি আর লসে থাকবে বিআরটিসি তা মানা যায় না। লিজ দেয়া বিআরটিসির গাড়ির তালিকা চেয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘লিজ দেব কিন্তু গাড়ি লোকসান কেন হচ্ছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। সরিষার মধ্যে ভূত থাকলে তা তাড়াতে হবে। যাত্রার শুরুতে প্রথম রাতেই বিড়াল মারতে হবে। কোন আপোস করা চলবে না। করাপ্ট অফিসারদের বাদ দিয়ে দিতে হবে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে গাড়ি আনার কোন উপকারিতা নেই বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এর আগে দেখা গেছে কোটি কোটি ডলার খরচা করে বিদেশ থেকে গাড়ি এনে কোন উপকার নাই। সাময়িক একটা স্বস্তি দেয়া যাবে। কিন্তু কিছুদিন পরেই তা আবার আগের মতো। এবার আমদানি করা ১১শ’ গাড়ির পরিণতি যেন এর আগে আমদানি করা গাড়িগুলোর মতো না হয়। এ ব্যাপারে কঠোর ও কঠিনতর ব্যবস্থা নিতে হবে। জনবল সংকটের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জনবল বাড়াতে হবে। জনবল বাড়ানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যবস্থা নিন। প্রয়োজনে আমাকে বলুন, আমি সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। কিন্তু জনবল এই অবস্থায় রেখে বিআরটিসির অগ্রযাত্রা সুখকর হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি বিআরটিসি চেয়ারম্যানকে আবারো বলছি-নিজেরা বসুন, টিমওয়ার্ক গড়ে তুলুন। নতুন জনবলের জন্য যথা জায়গায় আবেদন করুন। আমাকে জানান, ব্যবস্থা নেব।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিআরটিসিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য টার্গেট নিয়ে আজকে নতুন যাত্রা শুরু হলো। বিআরটিসিতে কেন বারবার লোকসান হবে। এটাকে কীভাবে লাভজনক করা যায়, কোথায় বাধা, কোথায় অন্তরায়-সব অন্তরায় দূর করতে হবে। চালকদের গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দায়সারা ট্রেনিং করালেই হবে না। ট্রেনিং কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত করতে হবে। যাতে তারা দক্ষ ও সুশৃঙ্খল জনবল হিসেবে, চালক হিসেবে নিয়োগ পায় সেটা দেখতে হবে।’ তিনি বলেন, আমাদের বেশ কিছু গাড়ি গাজীপুরে এসে গেছে। আরও কিছু সীমান্তে আগামীকালের মধ্যে চলে আসবে এবং আগামী এপ্রিলের মধ্যে আমরা আশা করছি, ইন্ডিয়ার লাইন অব ক্রেডিট এর আওতায় ১ হাজার ১০০ গাড়ি (৬শ’ যাত্রবাহী ও ৫শ’ মালবাহী ট্রাক) পেয়ে যাব। তখন বিআরটিসি অনেকটা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাবে। এই সুযোগকে কাজে লাগানো জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস, আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা নিয়ে কাজ করতে হবে’-যোগ করেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপি ভুলের কাদায় আটকে গেছে ॥ রাজনৈতিক ইস্যুতেও কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, নির্বাচনে পরাজয়ের পর বিএনপিকে দেখলে মনে হয় শিল্পী জয়নুলের কাদায় আটকে পড়া গরুর গাড়ির মতো। কাদের বলেছেন, বিএনপি কাদায় আটকে গেছে, ভুলের কাদায়। কিন্তু বিএনপি নেতাদের এখনকার কথাবার্তা আচার আচরণ দেখলে ভুল থেকে শিক্ষা নেয়ার কোন ইশারা বা লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির মহাসচিব কে হবেন, না হবেন তারাই ঠিক করবে। তবে মির্জা ফখরুল সাহেব সজ্জন মানুষ। অন্য আবাসিক প্রতিনিধিদের মতো নয়। বিএনপি মহাসচিবের সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিবের মুখে শোচনীয় ব্যর্থতার প্রলাপ। শোচনীয় ব্যর্থতার অসংলগ্ন প্রলাপ আমরা শুনতে পাচ্ছি। আগামী উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, এ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমনও হয়েছে ৫টি সিটি করপোরেশনের ৫টিতেই বিএনপি জয়লাভ করেছে। গত উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটের ফলাফলের সংখ্যার দিক দিয়ে বিএনপি একেবারে কম না। স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনেও তারা খারাপ করেনি। সবশেষে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সিলেটে তারা জয়লাভ করেছে। এখন কেন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না, এটা তাদের ব্যাপার। নির্বাচনে অংশ নেয়া তাদের অধিকার, এটা কোন সুযোগ না। বিএনপির অবস্থানে থাকলে আমরা সব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতাম, বর্জন করতাম না। বিএনপি মহাসচিব পরিবর্তনের গুঞ্জন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি মহাসচিব পদে পরিবর্তন আসবে কি আসবে না, এটা বিএনপিই ঠিক করবে। এখানে আওয়ামী লীগের তো নাক গলানোর কোন প্রয়োজন নেই। তবে ফখরুল সাহেব মানুষ হিসেবে ভাল, সজ্জন ব্যক্তি। বিএনপির সেক্রেটারি হিসেবে সফল কি ব্যর্থ এটা তারাই ঠিক করবে। বিএনপি কেমন লোক চায় সেটা তারাই ভাল বলতে পারবেন।
×