ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মদিন ॥ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

জন্মদিন ॥ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু

সুভাষ চন্দ্র বসু। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন কিংবদন্তি নেতা। তিনি নেতাজী নামে পরিচিত। নেতাজীর জীবনদর্শনই ছিল স্বাধীন দেশের সামাজিক উন্নতি। আর সেই পথে এগোবার জন্য তাঁর বিভিন্ন উক্তিগুলো রীতিমতো অনুপ্রেরণা দেয়। সুভাষ চন্দ্র বসুর বিখ্যাত উক্তি হলো- ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।’ তার আরেকটি বিখ্যাত উক্তি হলো ‘জয় হিন্দ’-যা ভারতবাসীকে ব্রিটিশ শাসকদের বিতাড়নে উদ্বুদ্ধ করেছিল। সুভাষ চন্দ্র বসু ভারতের ওড়িষ্যা রাজ্যের কটক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কটক-প্রবাসী বিশিষ্ট বাঙালী আইনজীবী জানকীনাথ বসু এবং মা প্রভাবতী দেবী। সুভাষ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত তিনি কটকের একটি ইংরেজী স্কুলে, পরে কটকের কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯১১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় কলকাতা থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে সম্মানসহ বিএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজউইলিয়াম হলে উচ্চ শিক্ষার্থে ভর্তি হন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়ে নিয়োগপত্র পান। কিন্তু বিপ্লব-সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সেই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন। সুভাষ চন্দ্র পরপর দু’বার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। বলা হয়, মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত এবং কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা করার জন্য তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়। অবশ্য সুভাষ চন্দ্র মনে করতেন গান্ধীজীর অহিংস নীতি ভারতের স্বাধীনতা আনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়। এই কারণে তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহের পক্ষপাতী ছিলেন। এই লক্ষে সুভাষ চন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দলও প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি ও অন্যান্য যুদ্ধবাদী শক্তিগুলোর সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোন কোন ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষ চন্দ্রের সমালোচনা করেছেন; এমনকি কেউ কেউ তাঁকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযুক্ত করেছেন। তবে ভারতের স্বাধীনতাকামী মানুষ তাঁর পথপ্রদর্শক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করেছেন। সুভাষ চন্দ্র জাতীয়তাবাদী নেতা ছিলেন। ছিলেন ধর্মপ্রাণও। তিনি ধ্যানে অনেক সময় অতিবাহিত করতেন। স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শ তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি তার দেশপ্রেমিক সত্তার জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সুভাষ চন্দ্র ১১ বার গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাঁকে ভারত ও রেঙ্গুনের বিভিন্ন জায়গায় রাখা হয়েছিল। ১৯৩০ সালে তাঁকে ইউরোপে নির্বাসিত করা হয়। বিপ্লবী এই মহান নেতার মৃত্যু নিয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায়। তবে মনে করা হয়, ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইওয়ানে বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। নেতাজী নেই, তবে ভারতের জাতীয় রাজনীতি তথা সমাজবোধে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা কোন দিনই ম্লান হবে না। তিনি গোটা জাতিকে ঝুঁকি নিয়ে লড়বার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। তাই তিনি সকলের নেতাজী। নেতাজী বলতে বিশ্বের সকল বাঙালী একজনকেই বোঝেন, তিনি সুভাষ চন্দ্র বসু। ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি এই দেশনায়কের জন্ম। তাঁর জন্মদিবস আজও সসম্মানে পালিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেতাজীর আদর্শকে ধারণ করতেন। সেই পথ ধরে তিনি জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছিলেন সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে। নেতাজীর জন্মদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। লেখক : সাংবাদিক
×