ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগ খরা কাটাতে দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

বিনিয়োগ খরা কাটাতে দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা প্রয়োজন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টেকসই অর্থনীতি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধ অর্জনে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগের বিকল্প নেই। কিন্তু অবকাঠামোগত সমস্যা, ঋণে সুদের উচ্চ হার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। বেসরকারী বিনিয়োগ কমার কারণ হিসেবে জাতীয় নির্বাচন, অবকাঠামো দুর্বলতা, সুদের উচ্চ হার এবং জ্বালানি সংকটসহ সরকারী নীতিকে দায়ী করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। মন্দা থেকে উত্তরণে ব্যবসা সহজ ও খরচ কমানো, কর ব্যবস্থা সহজ, অবকাঠামোর উন্নয়ন, চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি সরবারহ, সুদের হার সহনীয় রাখাসহ সরকারের দীর্ঘমেয়াদের নীতি-সহায়তা জরুরী বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা ব্যবসায়ী ও ব্যাংকাররা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কয়েক মাস ধরে কমছে। সর্বশেষ গত নবেম্বরে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ০১ শতাংশ। যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৫ সালের নবেম্বরে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৭২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর আগে আগস্ট শেষে প্রবৃদ্ধি নেমেছিল ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশে। আগের মাস জুলাইতে যা ছিল ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের কারণে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা দ্বিধায় ছিল, ফলে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ তথা ঋণপ্রবাহ কমেছে। এখন নির্বাচন শেষ হয়েছে, প্রেক্ষাপটও পরিবর্তন হয়েছে। আশা করছি ঋণপ্রবাহ বাড়বে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারী খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যা যা করণীয় তা করবে। এ ক্ষেত্রে সব ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া হবে। আগামী মুদ্রানীতিতেও এ ধরনের নির্দেশনা থাকবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যা নন পারফরমিং ঋণ (এনপিএল বা খেলাপী)। এটি কমাতে পারলে ঋণ বিতরণ বাড়বে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো খেলাপী ঋণ কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে যেখানে এনপিএল ১১ শতাংশ ছিল তা সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া আমানত ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়ন করতে পারলে ঋণ প্রবাহ বেড়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ কম হচ্ছে। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে ঋণপ্রবাহ কম। এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের কারণে বড় বড় উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে যায়নি। যার কারণে ঋণপ্রবাহ কমেছে। আবার অবকাঠামো সমস্যা, সুদের উচ্চ হার, গ্যাস বিদ্যুতের সঙ্কট, ব্যবসায়িক ব্যয় বাড়ানোসহ নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ মন্দা রয়েছে। তিনি জানান, নির্বাচন শেষ হয়েছে এখন বিরোধীপক্ষ থেকে যদি কোন অস্থির কর্মসূচী না আসে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে তাহলে আগামীতে বিনিয়োগ বাড়তে পারে। এদিকে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সদ্য সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ও এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। এজন্য সরকারকে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা সহায়ক নীতি প্রণয়ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বেসরকারী খাতকে জ্বালানির স্বল্পতা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অবকাঠামো দুর্বলতা, সুদের উচ্চ হার এবং জ্বালানি সঙ্কট, আইনগত দীর্ঘসূত্রতা, অপ্রতুল ঋণসহ বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এসব সমস্যা দূর করতে না পারলে বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ আশানুরূপ বাড়বে না। এজন্য ব্যবসায়ীদের জন্য এক দরজায় সেবা বা ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) চালু জরুরী। একই সঙ্গে সরকারী কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ‘ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে এখন ১৭৬তম স্থানে রয়েছে। এ সূচক ব্যবসার পরিবেশে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাক্সিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাজারে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ সম্পর্কে একটি আগাম ধারণা দিতে প্রতি ছয় মাসের মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের নবেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বেসরকারী খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে নয় লাখ ৪২ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আগের বছরের নবেম্বরে যা ছিল আট লাখ ২৬ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা। এ সময় ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ০১ শতাংশ।
×