ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মসমর্পণের পথে ইয়াবা কারবারিরা, পুলিশী নজরদারিতে ৬০-৭০

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

আত্মসমর্পণের পথে ইয়াবা কারবারিরা, পুলিশী নজরদারিতে ৬০-৭০

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মরণনেশা মাদক ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের একটি অংশ ইতোমধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু ইয়াবা চোরাকারবারিদের মাঝে একটি বিষয় এখনও পরিষ্কার নয়। সেটি হচ্ছে আত্মসমর্পণের পর তারা সাধারণ ক্ষমার আওতায় আসবে কিনা। তবে রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা, ‘যারা সুস্থ পরিবেশে আসার চেষ্টা করছে তাদের সে সুযোগ দিতে হবে’- এমন ঘোষণা ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের অনুপ্রাণিত করেছে। এর আগে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে ৫ দিনের সময় দিয়েছিলেন। গত ১৫ জানুয়ারি সে সময় অতিবাহিত হয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ জন ইয়াবা চোরাকারবারি পুলিশী প্রত্যক্ষ নজরদারিতে রয়েছে বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা আসলে এরা আত্মসমর্পণ করবে বলে জেলা পুলিশের বিভিন্ন সূত্রে আভাস দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৩ সহস্রাধিক। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলায় রয়েছে ১১৫১। আবার তন্মধ্যে শুধু টেকনাফে রয়েছে ৯ শতাধিক। এদের মধ্যে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ জন এ পর্যন্ত আত্মসমর্পণের আগ্রহ জানিয়ে পুলিশী প্রত্যক্ষ নজরদারিতে রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে। আবার এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এক সংসদ সদস্যের পরিবারের ২০ জনেরও বেশি রয়েছে। কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বারসহ জনপ্রতিনিধি। উল্লেখ করা যেতে পারে বিভিন্ন সংস্থা গোপন তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ইয়াবা গডফাদারের তালিকা রয়েছে ৭৩। ১১ শতাধিক রয়েছে শীর্ষ স্থানীয় ইয়াবা চোরাকারবারি। বর্তমানে যারা আত্মসমপর্ণের জন্য রয়েছে এদের সংখ্যাধিক্য হচ্ছে ক্যারিয়ার। অপরদিকে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে যাওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৩৭ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। তন্মধ্যে রবি ও সোমবার পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফে এক রোহিঙ্গাসহ ২ মাদক কারবারি প্রাণ হারিয়েছে। নিহতদের ৩৪ জনই টেকনাফের। অপরদিকে জিরো টলারেন্স নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর চোরা পথে ইয়াবা আসা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। এরপরও গত কয়েকদিনে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি চালান ধরা পড়েছে। আটক হয়েছে ২ মাদক ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকা থেকে ৫ হাজার ৩শ পিস ইয়াবাসহ মোঃ কামাল হোসেন ও জুথি বেগম নামের দুজনকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে কক্সবাজার অঞ্চলের ইয়াবা চোরাকারবারিদের আত্মসমর্পণের সঠিক কোন দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ইয়াবাসহ মাদক চোরাকারবারিদের আত্মসমর্পণের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি মনিটরিং হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্নের বিষয়টি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার। তিনি জানান, যারা আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে এগিয়ে আসছে তাদের তালিকা হচ্ছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ নিয়ে অনুমোদন, কৌশল নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি রয়ে গেছে। সব কিছু চূড়ান্ত হলে আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠান আয়োজন হবে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছরের ৪ মে থেকে দেশে ‘চল যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’ এই স্লোগানে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী অভিযান শুরু হয়। পাশাপাশি মাদক মুক্ত দেশ গড়তে মাদকবিরোধী নতুন আইনও প্রণীত হয়। এরপর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে অভিযান চলছে। নতুন প্রণীত আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে ইয়াবার গডফাদাররা এখনও নানা কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ৩৭ ইয়াবা কারখানা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মরণনেশার এই মাদক কোন না কোনভাবে বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনাটি রয়ে যায়। কেননা, মিয়ানমারে উৎপাদিত এই ইয়াবার মূল বাজার হয়ে আছে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে। মন্ডুতে বিজিবি-বিজিপি বৈঠক ॥ এদিকে সোমবার মিয়ানমারের মন্ডু শহরে বিজিবির (বডার গার্ড বাংলাদেশ)-বিজিপি (বডার গার্ড পুলিশ) রিজিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে সীমান্ত বৈঠকও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১১টায় এই বৈঠকে অংশ নেন বিজিবি কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আইনুল মোর্শেদ খানের নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্য। বেলা ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই সভায় দুদেশের সীমান্ত সুরক্ষা, শান্তি সম্প্রীতি মাদক পাচার প্রতিরোধ জোরদারকরণ, যৌথ টহল জোরদার, মিয়ানমার সীমান্তের মাইল অপসারণও চোরাচালান প্রতিরোধ বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা মনোভাব নিয়ে উভয় পক্ষের মতবিনিময় হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে প্রতিনিধি দলের নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আইনুল মোর্শেদ খান পাঠান।
×