ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একগুচ্ছ ভোটের প্যাকেজ নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য আজ বৈঠকে বসছে ইসি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

একগুচ্ছ ভোটের প্যাকেজ নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য আজ বৈঠকে বসছে ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উপজেলাসহ স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন এবং ভোটার তালিকা হালনাগাদ, স্থানীয় সরকার পরিষদের ইভিএম ব্যবহারে বিধিমালা প্রণয়নসহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছে ইসি। আজ (মঙ্গলবার) আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনে এই বৈঠক হবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে বৈঠকে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনে নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা হবে, না কি পুনর্তফসিল করা হবে সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মার্চে উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে এবং দুই সিটির ৩৬ কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে ইসির। বেলা তিনটায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে আলোচনার জন্য ইতোমধ্যে এজেন্ডাও ঠিক করা হয়েছে। আলোচ্যসূচীর মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদের কিশোরগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পদে নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও জেলা পরিষদের সাধারণ ও উপনির্বাচন নিয়ে আলোচনা, গাইবান্ধা-১ আসনের নির্বাচনে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা এবং উপজেলায় ইভিএম ব্যবহার সংক্রান্ত বিধিমালা ও ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে নিয়ে আজকের বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে জানা গেছে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর এখন উপজেলায় নির্বাচনে প্রস্তুতি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। সারাদেশে প্রায় ৫ শ’ উপজেলায় ভোট করতে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণার কথা আগেই জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ। আজকের বৈঠকে উপজেলায় তফসিলের বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। এছাড়া সদর উপজেলাগুলোর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। কর্মকর্তারা জানান ইভিএম ব্যবহার করতে হলে উপজেলা নির্বাচন বিধিমালায় ইভিএম ব্যবহারের বিধিমালা করা প্রয়োজন। আজকের বৈঠকে বিধিমালা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদের উপনির্বাচন এবং দুই সিটির ৩৬ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে সাধারণ নির্বাচনের বিষয়ও। গত সপ্তাহে এই নির্বাচন নিয়ে দায়ের করা রিট আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ফলে এ নির্বাচনে কোন বাধা নেই। তবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রের শূন্যপদে উপনির্বাচন করতে নতুন করে তফসিল দেয়া হবে, না পুনর্তফসিল করা হবে- তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে নির্বাচন কমিশন। আজকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করবে ইসি। মার্চে উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে এই দুই সিটির নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় ইসি। তবে ঢাকার দুই সিটিতে উপনির্বাচন এবং সাধারণ নির্বাচনের জন্য আদালতের আদেশের কপির অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। কিশোরগঞ্জ-১ আসনের নির্বাচনের বিষয়ে আজকের বৈঠক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে এই নির্বাচন নিয়ে কমিশন কিছুটা আইনী জটিলতায় রয়েছে। কোন প্রক্রিয়ায় এই নির্বাচন হবে তা আইনে স্পষ্ট বলা হয়নি। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুলের মৃত্যুতে এই আসনে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা দেখা দিয়েছে। তবে এটি উপনির্বাচন হবে, না কি সাধারণ নির্বাচন হবে তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে ইসি। ইসির কর্মকর্তারা জানান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মৃত্যুর সময় দশম সংসদের এমপি ছিলেন। এবং একাদশ সংসদের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু শপথ নেয়ার আগেই তিনি মারা যান। এখন এই আসন শূন্য ঘোষণা নিয়ে আইনী জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দশম সংসদের এমপি পদ শূন্য ঘোষণা করা হলে সেখানে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু দশম সংসদের মেয়াদ রয়েছে আগামী ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৩০ জানুয়ারি থেকে একাদশ সংসদের অধিবেশ শুরু হচ্ছে। ফলে এই আসনে শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচন দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। আবার একদশ সংসদের নির্বাচিত হলেও তিনি শপথ নেননি। ফলে এখন আর ওই সংদের এমপি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন না। এ কারণে তার সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করা যাচ্ছে না। শূন্য ঘোষণা করা না গেলে সেখানে উপনির্বাচন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় ইসি এই আসনের নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। আজকের বৈঠকে এ আসনে কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে, নির্বাচনে আইনের ব্যাখ্যা কি হবে তা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। একাদশ সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন নিয়ে আজকে বৈঠকে আলোচনা হবে। ইতোমধ্যে সংরক্ষিত এসব মহিলা আসনের নির্বাচনের জন্য আগামী মাসের ১৭ তারিখে তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়ের কারণে আসন বণ্টনের অনুপাতে আওয়ামী লীগের ভাগেই পড়ছে সব আসন। এই নির্বাচনের ৫০টি পদের বিপরীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে ৪৩টি। বাকি চারটা আসন জাতীয় পার্টির ভাগে যাবে। বাকি তিনটা আসনের মধ্যে ১টা পাবে বিএনপি, স্বতন্ত্র এবং ছোট দলগুলো মিলে পাবে বাকি ২টা আসন। তবে বিএনপি ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে তারা শপথ নিচ্ছে না। ফলে সংরক্ষিত মহিলা আসনের তাদের প্রার্থী দেয়ার সম্ভবনা ক্ষীণ। ইসি কর্তকর্তারা জানিয়েছে উপজেলার পাশাপাশি আজকের বৈঠকে পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয় নিয়েও আলোচনার আলোচ্যসূচীতে রাখা হয়েছে। জানা গেছে এ দুটি নির্বাচন এখনও প্রায় দু’বছর দেরি আছে। তবে তারা আগ থেকেই প্রস্তুতি রাখতে চায়। এ বছর উপজেলা নির্বাচনের পর ইসির ভাবনায় রয়েছে পৌরসভায় নির্বাচন। আগামী ২০০০ সালের শেষে দিকে পৌরসভায় ভোট হতে পারে। এ নির্বাচনও দলীয় ভিত্তিতে হবে। আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষে ছয় মাসের মধ্যেই পৌরসভায় ভোটগ্রহণ করতে হবে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে ২৩৪টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী বছরেই এসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে বলে জানা গেছে। পৌরসভার পরপরই আয়োজন করতে হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের পর তৃণমূল মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ২০২১ সালের প্রথম দিকেই সারাদেশে প্রায় চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের জন্য উপযোগী হয়ে পড়বে বলে জানা গেছে। এর আগে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ৬ দফায় সারাদেশে চার হাজারের বেশি ইউনিয়র পরিষদের ভোট নেয়া হয়। ওই বছর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার হাজার ২৭৫টি ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ করা হয়। আইন অনুযায়ী প্রথমবারের মতো এবারও দলীয় ভিত্তিতে ভোট নেয়া হবে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ ছাড়া বাকি সদস্য এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোট হবে নির্দলীয় ভিত্তিতে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরেই অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদ নির্বাচন। আজকে আলোচলায় জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়েও আলোচ্যসূচীতে রাখা হয়েছে। এছাড়া জানা গেছে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের পরপরই সারাদেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করবে ইসি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের কারণে গত বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ হয়নি। আজকের বৈঠকে এ বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
×