ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দিনাজপুরে ‘প্রাণীখেকো’ উদ্ভিদের সন্ধান মিলেছে

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

দিনাজপুরে ‘প্রাণীখেকো’ উদ্ভিদের সন্ধান মিলেছে

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ প্রাণীরা উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, এটি স্বাভাবিক। তবে যদি বলা হয়, উদ্ভিদ প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তাহলে কেমন শোনাবে। রূপকথার গল্পে ও পুস্তকে অনেকেই ‘মানুষখেকো গাছ’ বা ‘প্রাণীখেকো উদ্ভিদ’র কথা শুনলেও বাস্তবে এমন ঘটনা বিরল। তবে এবারে বাস্তবে এমন উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছে দিনাজপুর সরকারী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ। যে উদ্ভিদটি প্রাণী অর্থাৎ পতঙ্গকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। নিজ কলেজ ক্যাম্পাসের উন্মুক্ত জমিতে সন্ধান পাওয়া এই প্রজাতির উদ্ভিদটি নিজেদের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমে বেশ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে দিনাজপুর সরকারী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দিনাজপুর সরকারী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দোলোয়ার হোসেন জানান, এক বীজপত্রি মাংসাশী উদ্ভিদটির বৈজ্ঞানিক নাম উৎড়ংবৎধ জড়ঃঁহফরভড়ষরধ যাকে বাংলায় বলা হয় ‘সূর্যশিশির’। মাংসাশী উদ্ভিদের মধ্যে এই প্রজাতি সবচেয়ে বড়। ৪/৫ সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট গোলাকার থ্যালাস সাদৃশ উদ্ভিদটির মধ্য থেকে একটি লাল বর্ণের ২-৩ ইঞ্চি লম্বা পুষ্পমঞ্জরি হয়। ১৫/২০টি তিন থেকে চার স্তরের পাতাসদৃশ মাংশল দেহের চারদিকে পিন আকৃতির কাঁটা থাকে। মাংশল দেহের মধ্যভাগ অনেকটা চামচের মতো ঢালু এবং পাতাগুলোতে মিউসিলেজ সাবস্টেন্স নামক একপ্রকার এনজাইম (আঠা) নিঃসৃত হয়। সুগন্ধ আর উজ্বলতায় আকৃষ্ট হয়ে পোকা বা পতঙ্গ উদ্ভিদটিতে পড়লে এনজাইমে আঠার মাঝে আটকে যায় এবং পতঙ্গ নড়াচড়া করলে মাংশল পাতার চারদিকে পিনগুলো বেঁকে পোকার শরীরে ফুঁড়ে গিয়ে পোকাকে ধরে ফেলে। এভাবেই এই উদ্ভিদটি পোকা বা পতঙ্গকে ভক্ষণ করে। গত ১৫ জানুয়ারি দিনাজপুর সরকারী কলেজ ক্যাম্পাসের উত্তরদিকে পরিত্যক্ত ভূমিতে উদ্ভিদগুলো শনাক্ত করেন বলে জানান সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, মাংসাশী বা পতঙ্গখেকো এই উদ্ভিদের ইংরেজী নাম ঝঁহফবংি। এটি ঈধৎুড়ঢ়যুষষধষবং বর্গ এবং উৎড়ংবৎধপবধব গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। কলসপত্রী ও পাতাঝাঝি নামে আরও দুইটি এর সদস্য রয়েছে বলে তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে। নিজ ক্যাম্পাসে এমন উদ্ভিদের সন্ধান পেয়ে আনন্দিত ও গর্বিত সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, পাঠ্যপুস্তকে এমন উদ্ভিদ সম্পর্কে পড়লেও বাস্তবে এমন উদ্ভিদের সন্ধান পেয়ে পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি হাতে-কলমে শিখতে পারবে। উদ্ভিদটি সংরক্ষণেরও দাবি তাদের। দিনাজপুর সরকারী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এমএসসি শেষ পর্বের ছাত্র মোসাদ্দেক হোসেন জানান, ২০১৬ সালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদুঘরের জীববিজ্ঞান গ্যালারিতে এই সুর্যশিশির উদ্ভিটটি সম্পর্কে জানতে পারি যে, এটি শুধু দিনাজপুর ও রংপুর অঞ্চলেই জন্মায়। এরপর বিভিন্নস্থানে এই উদ্ভিদটি খোঁজার চেষ্টা করি। সর্বশেষ গত ১৫ জানুয়ারি দিনাজপুর সরকারী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সহযোগিতায় নিজ কলেজ ক্যাম্পাসেই এই উদ্ভিদটির সন্ধান পাই। তিনি বলেন, রূপকথার গল্পে মানুষখেকো গাছ বা প্রাণীখেকো উদ্ভিদের কথা শুনেছি। কিন্তু নিজ ক্যাম্পাসেই বাস্তবে একটি উদ্ভিদ পোকা খাওয়ার দৃশ্য দেখতে পাচ্ছি। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এটি নিয়ে কাজ করার এবং হাতে কলমে শিক্ষালাভের একটি বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হলো এই উদ্ভিদটি পেয়ে।
×