ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা

সাবেক আইজিপি শহুদুল হক ও আশরাফুল হুদার জামিন

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২২ জানুয়ারি ২০১৯

সাবেক আইজিপি শহুদুল হক ও আশরাফুল হুদার জামিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত বর্বরোচিত একুশে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলায় দুই বছরের দ-প্রাপ্ত সাবেক দুই আইজিপি শহুদুল হক ও আশরাফুল হুদার আপীল শুনানির জন্য গ্রহণ করে তাদের জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি শেখ আব্দুল আউয়াল ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে তাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আরশাদুর রউফ ও জামিলুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ আলী জিন্নাহ। আদালতের আদেশের পরে জামিলুর রহমান বলেন, আদালত তাদের আপীল শুনানির জন্য গ্রহণ করে জামিন দিয়েছে। তারা কাশিমপুর কারাগারে আছেন। এ আদেশের ফলে তাদের জামিনে কারামুক্তিতে বাধা নেই। আলী জিন্নাহ বলেন, তারা ১৪ মাস সাজা খেটে ফেলেছেন। এই যুক্তিতে জামিন দিয়েছে। তবে এ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আবেদন করা হবে। গত ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়। অবশিষ্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়। আদালত ১৯ আসামিকে মৃত্যুদ- দিয়েছে। তারা হলো সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি-জামায়াত জোটের সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাইজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরী জঙ্গী আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাঃ জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল, মোঃ রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, মোঃ উজ্জল, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফ। এই আসামিদের দ-বিধি ৩০২, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় হত্যার দায়ে মৃত্যুদ-ের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দ-বিধির ৩০৭ ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের ৩ ও ৬ ধারায় হত্যার দায়ে মৃত্যুদ-ের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের ৪ ও ৬ ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার দায়ে ২০ বছরের কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ১৯ আসামির ক্ষেত্রে কেবল মৃত্যুদ-ের শাস্তিই কার্যকর হবে। এ মামলায় ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। যাদের যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে তারা হলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (পলাতক), খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী (পলাতক), বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু হোমাইরা ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মোঃ খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মোঃ ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)। তাদেরকে দ-বিধি ৩০২, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। দ-বিধি ৩০৭, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদ-, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের ৪ ও ৬ ধারায় ২০ বছরের কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। সব সাজা একযোগে কার্যকর হবে বলে এই ১৯ আসামির ক্ষেত্রে কেবল যাবজ্জীবন কারাদ- কার্যকর হবে। এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোঃ আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার (পলাতক), মেজর জেনারেল (অব) এটিএম আমিন (পলাতক), ডিএমপির সাবেক উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান (পলাতক), আরেক সাবেক উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান (পলাতক), সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মোঃ রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
×