এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ সীমান্ত এলাকার আতঙ্ক আবদুল হাকিম ডাকাত ও তার সহযোগীদের আত্মসমর্পণ করানোর উদ্যোগ নেয়া দরকার হয়ে পড়েছে। ইয়াবা কারবারিদের আগে ওই অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করা প্রয়োজন। ভয়ঙ্কর এ রোহিঙ্গার কাছে একাধিক ভারি অস্ত্র ও বহু ওয়াকিটকি রয়েছে। ইতিপূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ধরতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। আগে পাহাড়ের গুহায় আস্তানা গাড়লেও বর্তমানে রোহিঙ্গা শিবিরে ঢুকে পড়েছে সন্ত্রাসী দলপতি এ জঙ্গী।
সূত্র জানায়, পুলিশের কাছে শীঘ্রই শতাধিক মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছে বলে খবর ছড়িয়েছে। সচেতন মহলের মধ্যে কয়েক দিন ধরে এটি নিয়েই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যেন এ জেলার দুর্নাম ঘোচে। তবে ইয়াবা ছাড়াও বর্তমানে আরও একটি সমস্যা হচ্ছে-রোহিঙ্গা সমস্যা। রোহিঙ্গা শিবিরে যুবকদের সংগঠিত করছে আবদুল হাকিম ডাকাত। রাতে অস্ত্র চালনা (ট্রেনিং) শেখানো হচ্ছে তাদের। যারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে, তাদের অত্যাচার ও এমনকি গুম করে ফেলছে হাকিম বাহিনী। প্রত্যেক ক্যাম্পে হাকিম বাহিনী (আলইয়াকিন) গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। তাদের ভয়ে নিরীহ রোহিঙ্গারা প্রশাসনের ধারে কাছেও যেতে সাহস করছে না। এ কারণে প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবদুল হাকিম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওই হাকিম বাহিনীকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করছে ক্যাম্পের বাইরে থাকা বাংলাদেশী দাবিদার কে শ্রেণীর পুরনো রোহিঙ্গা নেতা। তারা হাকিম বাহিনীকে অঢেল টাকা দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
সূত্র জানায়, টেকনাফ ও উখিয়ার ৩০টি আশ্রয় ক্যাম্পে সংগঠিত রোহিঙ্গা যুবকদের আন্দোলনমুখী করে তোলা হচ্ছে। তারা মিয়ানমারেও যাবে না, ভাসানচরেও না। এই দুটি বাক্যে সর্বদা কবুল পড়ানো হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। আরাকান বিদ্রোহী গ্রুপের সাবেক ওসব রোহিঙ্গা জঙ্গী ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই তুলে অঢেল অর্থ আনছে বিদেশ থেকে। তারা মিয়ানমারে গেলে যেমন দেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা কমে যাবে, তেমনি ভাসানচরে গেলেও বিদেশীদের কাছে তাদের বাহানা উত্থাপন করা যাবে না। তাই হাকিম বাহিনীকে আপন করে নিয়ে নিরীহ রোহিঙ্গাদের এক প্রকারে জিম্মি করে রেখেছে পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা। ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণে স্থানীয়দের মধ্যে যারা এগিয়ে এসেছেন, ভারি অস্ত্রধারী হাকিম বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করানোর কাজেও যেন তারা সজাগ থাকে এ দাবি স্থানীয়দের।
জানা গেছে, উখিয়া টেকনাফের প্রতিটি আশ্রয় শিবিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিটি আশ্রয় শিবিরে রয়েছে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারিও। তবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পর ক্যাম্প অভ্যন্তরে এক ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে। সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী রোহিঙ্গাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে থাকে। তবে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যৌথ বাহিনী ক্যাম্প অভ্যন্তরে প্রবেশ করে অভিযান চালিয়ে থাকে। রাতে হাকিম বাহিনীর সদস্যরা (রোহিঙ্গাদের ভাষায় আলইয়াকিন) চাঁদা আদায়, প্রত্যাবাসনে রাজি রোহিঙ্গাদের শায়েস্তা ও তাদের দল আরও ভারি করতে রোহিঙ্গা যুবকদের তালিকাভুক্তির কাজ করে থাকে বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি পয়েন্টে মুঠোফোন হাতে রাতের বেলায় হাকিম বাহিনীর সোর্স নিয়োজিত থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে নামলে বা ক্যাম্পে প্রবেশ করছে দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পুরনো কিছু রোহিঙ্গা নেতা প্রশাসনের সোর্স বলে দাবি করলেও তারা ক্যাম্পে অস্ত্রধারীদের বিষয়ে এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঠিক তথ্য দেয়নি বলে জানা গেছে। অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা ডাকাতদলের প্রধান আবদুল হাকিম ডাকাতকে ধরতে ইতিপূর্বে বিজিবি, পুলিশ-আনসার পৃথক অভিযান চালিয়েছে। কয়েক বছরেও খুন ও অপহরণের খলনায়ক ভয়ঙ্কর এ রোহিঙ্গাকে ধরা যায়নি।
এদিকে শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেই চিহ্নিত মাদক কারবারিরা আত্মসমর্পণ করবে বলে জানা গেলেও এখনও দিনক্ষণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সচেতন মহল বলেন, আত্মসমর্পণের মাধ্যমে মাদক কারবারিরা আলোর পথে ফিরে আসলে ভাল। তবে তাদের বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী আইনে দায়ের হওয়া মামলা থেকে রেহাই পেতে, সুরম্য অট্টালিকাসহ ও কালো টাকাকে সাদা করার মন মানসিকতা নিয়ে এটি তামাশা করছে কিনা তা আরও তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও গোয়েন্দা সংস্থার তালিকা অনুযায়ী সারাদেশে ৩ হাজারেরও বেশি চিহ্নিত মাদক কারবারি রয়েছে। কক্সবাজার জেলায় আছে ১ হাজার ১৫১ জন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই টেকনাফের।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, মাদক কারবারিদের আত্মসমর্পণের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে কাজ চলছে। তবে এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। সরকারের উচ্চপর্যায়ে অনুমোদন, কৌশল নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্বান্তের বিষয় আছে। সবকিছু ঠিক হলেই আত্মসমর্পণের আয়োজন হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: