ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানরা যাতে চাকরি না পায় সেজন্য আইন করার দাবি জানাচ্ছি ॥ মোজাম্মেল হক

জামায়াতের সব সম্পদ বাজেয়াফতের দাবি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

 জামায়াতের সব সম্পদ বাজেয়াফতের দাবি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামায়াতসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সব যুদ্ধাপরাধী ও তাদের সন্তানরা যাতে সরকারী চাকরি না পায় সেজন্য আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এছাড়া বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক ১০০ নাম্বার যুক্ত করা হবে বলেও জানান। একইসঙ্গে জামায়াতকে শুধু রাজনীতিতে নিষিদ্ধ নয় একসঙ্গে তাদের তিনি সব সম্পদও বাজেয়াফতের দাবি জানান তিনি। রবিবার ধানমন্ডিতে ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটির ২৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির বিশাল বিজয় সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক সভায় মন্ত্রী বলেন, দেশবিরোধী জামায়াত নেতাদের সম্পদ বাজেয়াফত করা হলে তারা আবারও এসব অর্থ দেশের বিরুদ্ধে করা ষড়যন্ত্রে কাজে লাগাবে। বিশ্বের অনেক দেশেই এরকম আইন আছে। তাই এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ক্লাসে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন চিত্র তথ্যসহকারে প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। আমরা চাই সব ছাত্রছাত্রীই মুক্তিযুদ্ধ কেন ও কি কারণে কাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল তার উত্তর জানুক। মন্ত্রী বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত ৫০ নাম্বার রয়েছে। শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ওপরই ১০০ নাম্বার করা হবে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তেমন একটা জানেন না বা চর্চা করেন না। এমনকি খোদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। যা অত্যন্ত দুঃখজনক বটে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সকল হাসপাতালে শতভাগ ফ্রি চিকিৎসা দেয়া চেষ্টা করবেন ও ঘরে বসেই যাতে মুক্তিযোদ্ধারা ওষুধ পেতে পারেন তার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান। বর্তমান সরকারের বিশাল জয় সম্পর্কে তিনি বলেন, জনমতের জোয়ার আছে যেমন ঠিক তেমনি ভাটাও আছে। তাই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উচিত হবে আমাদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত ও দেশবিরোধীদের চিহ্নিত করে জনজোয়ারকে কাজে লাগিয়ে তাদের থেকে সতর্ক থাকতে সহায়তা করতে। কারণ এই নির্মূল কমিটির বিশেষ উদ্যোগের কারণেই বর্তমান সরকারের রাজাকারমুক্ত সংসদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। কমিটিকে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে সবাইকে এক্যবদ্ধ রাখতে ও চলমান কার্যক্রম চালু রাখতে জোর আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতি কে এম শফিউল্লাহ বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা এদেশে থাকার অধিকার নেই। যারা এদেশে থেকে দেশের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করে বেড়ায় তাদের এদেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার দাবি জানায়। লেখক আবুল হাসান শাহরিয়ার বলেন, ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটির দাবি অনুযায়ী চলমান সংসদেই প্রথমবারের মতো কোন সংসদ সদস্য রাজাকার নেই। এছাড়া কমিটির অনেক আগে থেকেই করা দাবি অনুযায়ী বর্তমান সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রদান করা ও নির্মূল কমিটির সকল দাবি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে সংযুক্ত করায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি ধন্যবাদ জানান। জামাত নেতাদের আওয়ামী লীগে যোগদান না করাতে অনুরোধ করেন তিনি। ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে জামাত ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের রাজনীতি থেকে বহিষ্কার করা হোক। অন্যথায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন প্রকার স্থিতিশীলতা আসবে না। তাদের কেন এখনো রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাই জামাত ও অপশক্তির রাজনীতি বিলুপ্ত করার দাবি জানান তিনি। এ জন্য তিনি জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ও এর জন্য মন্ত্রিসভার কেবিনেটে তোলে তাদের রাজনীতি বাতিলে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। শহীদ কন্যা ডাঃ নুজহাত চৌধুরী বলেন, এখন সবাই আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে। কে শত্রু কে জামায়াত তা বোঝাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। এছাড়া সকল হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করার জন্য আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান পদ্মভূষণ বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে শুধুমাত্র ঘাতক-দালাল-নির্মূল কমিটির স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনের কারণেই ’৯৬-এর নির্বাচনে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়, রাজাকারমুক্ত বর্তমান সংসদ প্রতিষ্ঠা পায় ও তরুণ প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করা সম্ভব হয়। তাই এই চেতনা ধরে রাখতে হবে। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি যেন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেজন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
×