ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছোটদের মন্ত্রিসভা নামে পরিচিত এই নির্বাচন হবে মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায়

মার্চের প্রথম সপ্তাহে সারাদেশে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

 মার্চের প্রথম সপ্তাহে সারাদেশে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন

বিভাষ বাড়ৈ ॥ গত বছর সারাদেশের মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে স্টুডেন্ট কেবিনেট গঠনের ঘটনা ইতিবাচক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। ‘ছোটদের মন্ত্রিসভা’ গঠনের ঘটনা ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আগামী মার্চে সারাদেশের মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন। আগামী ২৬ জানুয়ারি নির্বাচনের কথা বলা হলেও নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) জানিয়েছে, নির্বাচন হবে আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে। ভর্তির হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধ, উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা আর শিশুদের মাঝে গণতন্ত্র চর্চার লক্ষ্য সামনে রেখে বিদ্যালয়ে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন হচ্ছে গত ’১৫ সাল থেকে। ব্যানবেইস মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ শনিবার দুপুরে জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ২৬ জানুয়ারি সারাদেশে স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচনের একটা খবর প্রকাশ হয়েছে। ওই তারিখে আসলে আমরা নির্বাচনের বিষয় চূড়ান্ত করিনি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) ২৬ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ উল্লেখ করে চিঠি দিয়েছে। আমরা কিন্তু চূড়ান্ত করিনি। এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, আগামী ২৬ তারিখ নির্বাচন হচ্ছে না। আবার ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ফলে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। পরীক্ষার পরে মার্চের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনটা আমরা করব। দু’এক দিনের মধ্যেই আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্বাচনের বিষয়টি পরিষ্কার করব। ২৬ জানুয়ারি যে নির্বাচন হবে না তাও জানিয়ে দেব আমরা। এক আগে, ২৬ জানুয়ারি মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছিল মাউশি। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর থেকে সকল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশও দেয়া হয়েছিল। মাউশি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পাঠদানরত মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় খসড়া কর্মপরিকল্পনা ও তফসিল অনুযায়ী স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনের আয়োজনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া ’২০ সালে সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসাসহ স্কুল এ্যান্ড কলেজে (যেসব প্রতিষ্ঠান শুধু দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত) এবং আলিম মাদ্রাসায় (যেসব মাদ্রাসা শুধু আলিম পর্যন্ত) স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরকে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে মাঠ পর্যায়ে বলা হয়েছিল বলে জানায় মাউশি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা তৈরি করতে ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট নির্বাচনের’ আয়োজন করা হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে গণতন্ত্র চর্চাসহ একে অপরকে সহযোগিতা করা, শ্রদ্ধা প্রদর্শন, শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি ও ঝরে পড়া রোধে সহযোগিতা, পরিবেশ উন্নয়ন কর্মকা-ে অংশগ্রহণ নিশ্চিতসহ ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। জানা গেছে, গত বছরের মতো এবারও শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবে আট সদস্যের স্টুডেন্টস কেবিনেট। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর যে কোন ছাত্রছাত্রী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে। একজন ভোটার সর্বোচ্চ আটটি ভোট দেবে। এর মধ্যে প্রত্যেক শ্রেণীতে একটি করে এবং যে কোন তিন শ্রেণীতে সর্বোচ্চ দুটি করে ভোট দিতে পারবে। প্রতি শ্রেণী থেকে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। পাঁচ শ্রেণীতে পাঁচজন নির্বাচনের পর তাদের মধ্য হতে সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত তিনজন নির্বাচিত হবে। এছাড়া বিধান অনুসারে এবারও নির্বাচনী প্রচারের জন্য কোন রকম ছাপানো পোস্টার, ফেস্টুন, লিফলেট ব্যবহার ও দেয়াল লিখন করা যাবে না। তবে শিক্ষার্থীদের হাতে লেখা পোস্টার, ফেস্টুন, লিফলেট ব্যবহার করতে পারবে। প্রতিষ্ঠানের সীমানা বা চত্বরের বাইরে প্রচার করা যাবে না। নির্বাচন পরিচালনার জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়েই তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সহকারী শিক্ষকরা দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণীর একজন করে দু’জন শিক্ষার্থীকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনীত করবেন। নির্বাচন ও এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রয়োজনে একজন সহকারী শিক্ষককে সমন্বয়কারী হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট কক্ষ স্থাপন করে গোপনীয়তার সঙ্গে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আটটি কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হবে। সেগুলো হলো পরিবেশ সংরক্ষণ (বিদ্যালয়, আঙ্গিনা ও টয়লেট পরিষ্কার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা); পুস্তক ও শিখন সামগ্রী, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং সহপাঠ কার্যক্রম; পানিসম্পদ; বৃক্ষ রোপণ ও বাগান তৈরি; দিবস ও অনুষ্ঠান উদযাপন এবং অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন; আইসিটি। স্টুডেন্টস কেবিনেট প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার করে সভা করবে। ছয় মাস পর পর সব ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতিতে সাধারণ সভা করবে। ’১৫ সাল থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দাখিল মাদ্রাসায় এই নির্বাচন হচ্ছে। ’১০ সাল থেকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একই আদলে নির্বাচন হয়ে আসছে। স্টুডেন্ট কেবিনেটের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে ব্যানবেইসের মহাপরিচালক মোঃ ফসিউল্লাহ বলছিলেন, শিশুকাল থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা, মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন শেখাতে এই স্টুডেন্ট কেবিনেট নির্বাচন। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্বের পাশাপাশি শিক্ষকদের নানা কাজেও সহায়তা করবে। মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি শিশুকাল থেকেই গণতন্ত্রের চর্চা, সহনশীলতা ও মূল্যবোধ তৈরির উদ্দেশ্যেই সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে ‘স্টুডেন্টস কেবিনেট’ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে তারাই এ দেশ গড়ে তুলবে, পরিচালনা করবে। তাই তাদের এখন থেকেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অন্যের মতের প্রতি সহনশীলতা চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ নয়, অন্যের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যেই তারা চেষ্টা করবে। স্কুলে কাউন্সেলিং সেবা বাধ্যতামূলক করার চিন্তা ॥ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা ও ইনজুরি প্রতিরোধ করতে কাউন্সেলিং সেবা বাধ্যতামূলক করতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা হবে। যেখানে এ সংক্রান্ত করণীয় যাবতীয় নির্দেশনা দেয়া থাকবে এবং তা অনুসরণ করে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে নিয়মিত কাউন্সেলিং কার্যক্রমের আয়োজন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক কাউন্সেলিং করানো নিয়েও ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আত্মহত্যা ও সকল ধরনের ইনজুরি প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাউন্সেলিং দিতে একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ণ করা হবে। এ নীতি প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে ৫/৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে আইনজীবী, মনোবিজ্ঞানী, ডাক্তার, জাতীয় পর্যায়ের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সদস্য করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব সালমা জাহান বলেছেন, আদালতের নির্দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং করানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও বিভাগে চিঠি দিয়ে প্রতিনিধি চেয়েছি। প্রতিনিধি নির্বাচন করা হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সমন্বয়ে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
×