ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামী দুই বছরজুড়েই থাকবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

 আগামী দুই বছরজুড়েই থাকবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন

শাহীন রহমান ॥ জাতীয় নির্বাচনের পর ইসির ভোট ভাবনায় এখন শুধুই তৃণমূলের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের পর এখন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির নজর উপজেলা, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদের দিকে। আগামী মার্চ মাস থেকেই শুরু হচ্ছে সারাদেশে ৪৯২ উপজেলা নির্বাচনের কার্যক্রম। রমজানের আগে এবং পরে ৫ দফায় এই নির্বাচন সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাঝখানে বিরতির পর আগামী বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠিত হবে পৌরসভা নির্বাচন। পৌরসভা নির্বাচনের পরপরই অনুষ্ঠিত হবে সারাদেশে প্রায় ৫ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। গত ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে একাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন শেষ হতে না হতে তারা উপজেলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এ বছর মার্চে শুরু থেকে উপজেলা নির্বাচন হবে। এবারে ৫ দফায় নির্বাচন সম্পন্ন করার চিন্তা ভাবনা করছে ইসি। জানা গেছে, রমজানের আগেই চার দফায় নির্বাচনের উপযোগী উপজেলায় নির্বাচন সম্পন্ন হবে। রমজানের পরে বাকি উপজেলায় নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। উপজেলা নির্বাচনের জন্য আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে। ইসি সচিব জানিয়েছেন, উপজেলায় মার্চের প্রথম থেকে ধাপে ধাপে নির্বাচন সম্পন্ন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা ও রমজান তিনটি বিষয় মাথায় রেখে প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী আগে ভাগে যেসব বিভাগের উপজেলাগুলো মেয়াদ পূর্ণ হবে সেগুলোর নির্বাচন আগে হবে। নির্বাচনের উপযোগী উপজেলায় আট বিভাগে চার ধাপে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। বাকিগুলোর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পর পরবর্তীতে একসঙ্গে আয়োজন করা হবে। দেশে সর্বশেষ ২০১৪ সালে সারাদেশে ৬ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলায় এবারই প্রথম দলীয় ভিত্তিতে ভোট হতে যাচ্ছে। এর আগে যতবার উপজেলায় নির্বাচন হয়েছে সবই নির্দলীয় ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়েছে। এবারের চেয়ারম্যান এবং দুটি ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় ভিত্তিতে ভোট হবে। এজন্য নির্বাচন বিধিমালাও সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপজেলা আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর তৃণমূল জনগণের নজরও এখন উপজেলা নির্বাচনের দিকে। ইতোমধ্যে হাটে বাজারে চায়ের দোকানে উপজেলায় ভোটের আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের জন্য তৎপর হচ্ছে। ইতোমধ্যে জনগণের কাছে দোয়া প্রার্থনা শুরু করে দিয়েছেন। দলের মনোনয়ন পেতেও তারা নানা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের প্রার্থিতার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও জানান দিচ্ছেন। উপজেলায় দলীয় ভিত্তিতে ভোট হলে জাতীয় নির্বাচনের পরাজয়ের পর উপজেলায় নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিএনপি এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে ছয় আসন পেলেও নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি তুলেছেন। তাদের দলের সদস্যরা এখনও শপথ গ্রহণ করেনি। সংসদের নারী আসনের নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার বিষয়েও তারা কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর আগে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, তারা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ অবস্থায় শপথ নেয়ার কোন প্রশ্নই নেই। ফলে সংসদের নারী আসনেও নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়া এখন ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় উপজেলায় নির্বাচন নিয়ে তারা সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। এদিকে ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে উপজেলায় নির্বাচনের মধ্যে তারা ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদের উপ নির্বাচনের প্রক্রিয়াও শুরু করবেন। গত বছর জনুয়ারি মাসের এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেও আদালতে রায়ে কারণে তা আটকে যায়। ফলে নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গত সপ্তাহে এই নির্বাচন নিয়ে দায়ের করা রিট খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ফলে নির্বাচনে আর কোন বাধা নেই। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন মার্চে উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপ-নির্বাচন হবে। এছাড়া ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদেও ভোট গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে একই সঙ্গে। জানা গেছে, এ বছর উপজেলা নির্বাচনের পর ইসির ভাবনায় রয়েছে পৌরসভা নির্বাচন। আগামী ২০০০ সালের শেষেদিকে পৌরসভায় ভোট হতে পারে। এ নির্বাচনও দলীয় ভিত্তিতে হবে। আইন অনুযায়ী মেয়াদ শেষে ছয় মাসের মধ্যেই পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করতে হবে। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে ২৩৪ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী বছরেই এসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে বলে জানা গেছে। ইসির কর্মকর্তা জানায় আাগামী বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পৌরসভায় ভোট করার চিন্তাভাবনা রয়েছে ইসি। গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ সারাদেশের ২৩৫ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরে প্রথমবারের মতো দলভিত্তিতে এই নির্বাচনে ২৩৫ পৌরসভার মধ্যে মেয়র পদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৮২টিতে (সাতজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়) এবং বিএনপি ২৪টিতে বিজয়ী হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে একজন এবং স্বতন্ত্র ২৮ জন মেয়র পদে নির্বাচিত হন। পৌরসভার পরপরই আয়োজন করতে হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের পর তৃণমূল মানুষের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ২০২১ সালের প্রথম দিকেই সারাদেশে প্রায় চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের জন্য উপযোগী হয়ে পড়বে বলে জানা গেছে। এর আগে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ৬ দফায় সারাদেশে চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট নেয়া হয়। ওই বছর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার হাজার ২৭৫ ইউনিয়নের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরই প্রথমবারের মতো দলীয় ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদে ভোট নেয়া হয়। আইন অনুযায়ী এবারও দলীয় ভিত্তিতে ভোটগ্রহণ হবে। তবে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদ ছাড়া বাকি সদস্য এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোট হবে নির্দলীয় ভিত্তিতে। আইন অনুযায়ী পৌরসভার মতো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। দলীয় প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক নিয়েই তারা নির্বাচন করবেন। তবে সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদের প্রার্থীরা আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে যে কেউ ইচ্ছা করলে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। ইসির কর্মকর্তারা জানা আগমী ২০২২ সালের প্রথম দিকে বর্তমান কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি বিদায় নেবেন। এর আগে রাষ্ট্রপতি বাছাই কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ দেবেন। বিদায় নেয়ার আগেই তারা জেলা পরিষদের নির্বাচনও সম্পন্ন করবেন। এছাড়া যেসব সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উপযোগী হবে সেখানেও তারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন।
×