ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যশোর থেকে ৪ দেশে রফতানির টার্গেট

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২১ জানুয়ারি ২০১৯

 যশোর থেকে ৪ দেশে রফতানির টার্গেট

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ৪ দেশে রফতানি বাজার ধরতে কন্ট্রাক ফার্মিয়ের মাধ্যমে যশোরে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিকটন বাঁধাকপি (পাতাকপি) প্রস্তুত করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের কারিগরি সহায়তায় ও মাঠ পর্যায়ের তদারকিতে যশোরে আন্তর্জাতিক মানের সবজি উৎপাদনের আওতায় এসেছে ৫৮৬ জন কৃষক। এ অঞ্চলে বাঁধাকপির দাম কমে যাওয়ার মুহূর্তে এই রফতানি টার্গেট হাতে নেয়া হয়েছে। ঢাকার রিফাত এগ্রোবেজ প্রসেসিং লিমিটেডসহ দেশের ৮টি রফতানি কারক প্রতিষ্ঠান বিদেশী বায়ারদের সঙ্গে সমন্বয় করে চলেছেন। যশোরের জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন ও সলিডারিড্যাট বাংলাদেশ কৃষকদের গ্রুপ তৈরি করছেন। রফতানি টার্গেট অর্জিত হলে বাঁধাকপি থেকে যশোরের কৃষকরা প্রায় ৩ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবেন বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগ। যশোর সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির শুরুতে নিরাপদ ও রফতানির জন্য মানসম্পন্ন বাঁধাকপি ৪ দেশ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে পাঠানোর জন্য ১৫ হাজার মেট্রিকটন বাঁধাকপি প্রস্তুত করা হয়েছে। শীতের শুরুতেই ওই ৪ দেশের সবজি ব্যবসায়ী ও বায়ারদের সঙ্গে সমন্বয় করছে ঢাকার রিফাত এগ্রোবেজ প্রসেসিং লিমিটেডসহ দেশের নামী দামী ৮টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। যশোর কৃষি বিভাগের মাধ্যমে যশোরের চূড়ামনকাটি ও হৈবতপুর ইউনিয়নের ৫৮৬ জন সবজি চাষীর সঙ্গে চুক্তি করেছে তারা। জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন ও সলিডারিড্যাট বাংলাদেশ কৃষকদের গ্রুপ তৈরি করেছে। সূত্রের তথ্যানুয়ায়ী, চলতি মাস ও আগামী মাস মিলিয়ে ৩০ লাখ পিসের মতো বাঁধাকপি রফতানির জন্য প্রস্তুত থাকছে। রফতানির জন্য প্রস্তুত করা কপির জন্য কৃষকদের পরিবহন ও প্রসেসিং খরচ কমিয়ে সরাসরি মাঠে চলে যাবে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি। যশোর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কারিগরি সহায়তায় ওপরে উল্লেখিত দুটি স্বনামধন্য এনজিও চূড়ামনকাটি ও হৈবতপুর ইউনিয়নের তৃণমূল পর্যায়ের কৃষককে ১০ থেকে ২০ জনের গ্রুপে কন্ট্রাক ফার্মিংয়ের আওতায় এনেছে। উত্তম ব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল নানা সাপোর্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বাঁধাকপি তৈরি করা হয়েছে। এক একটি কপির ওজন কমপক্ষে দেড় কেজি, যা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মাফিক ওজন। যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক মানের কপি উৎপাদন হয়েছে এ সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র প্রদান করছেন। ঢাকার রিফাত এগ্রোবেজ প্রসেসিং লিমিটেডসহ আটটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ওই প্রত্যয়নের আলোকে কপি সংগ্রহ করবে। গত দু’বছরের মতো চায়না বাঁধাকপির বাজার টপকে যশোরের বাঁধাকপি সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও তাইওয়ানের বাজারে পৌঁছে গেলে কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। উচ্চ মূল্যের ফসলের মধ্যে বাঁধাকপি হৈচৈ ফেলে দেবে গোটা কৃষি সেক্টরে। রফতানিযোগ্য করতে প্যাকেজিংয়ের আগে যশোর সদরের আব্দুলপুরের কৃষি পণ্য সংগ্রহ ও বিপণন কেন্দ্রসহ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের ফ্যাক্টরিতে নিয়ে বাছাই ও প্যাকেটজাত করা হবে। জানুয়ারির শুরুতেই বাঁধাকপি ওই ৪ টি দেশে যাওয়ার প্রক্রিয়া তৈরি ছিল। কিন্তু চায়না বাঁধাকপি ওই দেশগুলোতে ঢুকে বাংলাদেশের বাজার নষ্ট করছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। এরপরও এবার ৩ কোটি টাকার বাঁধাকপি রফতানির টার্গেট রয়েছে। এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খালিদ সাইফুল্লাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানসম্মত সবজি তথা বাঁধাকপি উৎপাদন সরাসরি মনিটরিং করছে উপজেলা কৃষি অফিস। কারিগরি সহায়তায় উৎপাদন কাজ অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। উত্তম ব্যবস্থাপনা ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট শতভাগ সফল হচ্ছে। দেশের মধ্যে যশোর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে কপি রফতানি গৌরবের ধরাবাহিকতা রক্ষায় বায়ারদের সঙ্গে সমন্বয় করছে ৮টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান। এ ধারা অব্যাহত থাকলে যশোর, তথা সারা দেশের বাঁধাকপি নিঃসন্দেহে উচ্চ মূল্যের সবজি হিসেবে সমধিক পরিচিতি পাবে। তিনি আরও জানান, বাঁধাকপি ছাড়াও বেগুন ও ফুল কপির চালান রফতানির পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর একেএকে টমেটো, শিম, করলা, উচ্ছে, পেঁপে, মাশরুম, মরিচ বীজ, কলা, লিচু, কুল, পেয়ারা, ভুট্টা, আমলকী, এলোভেরা, পিপুল, কালমেগ, চুইঝাল, গাছ আলু, নারকেলসহ ২০ প্রকার উচ্চ মূল্যের ফসলও রফতানিতে প্রাধান্য পাবে। তবে কৃষি বিভাগের নানা সাফল্যেকে ছাপিয়ে ধারাবাহিকভাবে সাফল্য আনছে বাঁধাকপি।
×