ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তবে মনিটরিং জোরদার হয়েছে

নানা উদ্যোগের পরও কমেনি চালের দাম

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

নানা উদ্যোগের পরও কমেনি চালের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারি নানা উদ্যোগের পরও বাজারে চালের দাম খুব একটা কমেনি। যেখানে মিনিকেটের দাম বেড়েছিল সর্বোচ্চ ৫ টাকা, উদ্যোগের ফলে তা কমেছে ৩ টাকা। সর্বনিম্ন ৫২ টাকা কেজিতে বাজারে মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে দোকান ভেদে দাম এরচেয়েও বেশি। মিনিকেটের দাম কিছুটা কমলেও আটাশ ও নাজিরের দাম রয়েছে আগের মতোই। যেখানে আটাশের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছিল, উদ্যোগের ফলেও এর দাম কমেনি বিন্দুমাত্র। এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারী মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। কাওরান বাজারের খুচরা দোকানি ‘মায়ের দোয়া স্টোরে’র কর্মচারী বাবলু বলেন, নির্বাচনের আগে মিনিকেটের দাম ছিল ৫০ টাকা। পরে দাম বেড়ে ৫৫ টাকায় উঠেছিল। এখন কমে ৫২ টাকায় নেমেছে। আটাশ চালের দাম নির্বাচনের আগে ৩৮ টাকা ছিল, বেড়ে হয়েছে ৪২ টাকায়, আগের চেয়ে দাম কমেনি। নাজির ৫৬ টাকা ছিল, এখনও আগের মতোই আছে। একই বাজারের কিচেন মার্কেটের ‘হাজী ইসমাইল এ্যান্ড সন্সে’র মালিক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, বাজারে চালের দাম রয়েছে আগের মতোই। মিনিকেটের বস্তা আগে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন বিক্রি করছি ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। আটাশ ও অন্যান্য চালের দামও একই। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে খাদ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর বাজারে তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। তবে বাজারে মনিটরিং শুরু হয়েছে। জসিম আরও বলেন, ঢাকায় মনিটরিং করে কী হবে, মনিটর করতে হবে মিলগেটে। আমাদের কাছে চালান ও কাগজপত্র আছে, আমরা যে দামে কিনেছি, তা দেখাতে পারবো। মনিটরিং করতে সম্প্রতি বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত এসেছিল। বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। চাঁদপুর রাইস এজেন্সির মালিক মোঃ বাচ্চু বলেন, দাম যেভাবে বেড়েছিল সেভাবে কমেনি। রশিদের মিনিকেটের বস্তা ২ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল, এখন ২ হাজার ৫৫০ টাকা। অর্থাৎ বস্তায় ৫০ টাকা কমেছে। আমরা বিক্রি করছি ২ হাজার ৫৮০ টাকায়। আর আঠাশ চালের বস্তা ১ হাজার ৮০০ ছিল, এখনও তাই। মোটা চালের দাম বাড়েনি, আগের মতোই আছে। মহাখালীর বউ বাজারে বাজারে ঘুরেও একই চিত্র পাওয়া গেছে। রাজধানীর বিজয় স্মরণীসহ ফার্মগেটের কয়েকটি বাজারে মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে অধিকাংশ দোকানেই দাম ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। ঢাকার বাইরে চালের দাম কমেছে বলে দাবি চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের। জানতে চাইলে নওগাঁর ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, মিলগেটে মিনিকেটের বস্তা (৫০ কেজি) এখন ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাস্কিং চাল আরও ১০০ টাকা কমে। অর্থাৎ মিনিকেট ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি ও স্বর্ণা চালের বস্তা এক হাজার টাকার নিচে। ধানের দামও কমে গেছে। কয়েক দিন আগে ৭৮০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে ৭০০ টাকা মনে ধান বিক্রি হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে নিরদ আরও জানান, বর্তমানে তাদের কোন ক্রেতা নেই। গুদামে পড়ে রয়েছে অবিক্রীত চাল। এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ১০ জানুয়ারি চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী। ওই বৈঠকে উভয় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, আপনাদের কাছে আমার দাবি, আপনারা আমাদের ইজ্জত রাখবেন। চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে আপনারা আমাদের সব রকমের সহযোগিতা করবেন। তবে ওই বৈঠক ও আহ্বানের পরও বাজারে চালের দাম খুব একটা কমেনি। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম একটি অনলাইনকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে আমাদের মনিটরিং সব সময় চলমান রয়েছে। বর্তমানে মনিটরিং আরও জোরদার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত বছর এই সময়ে চালের বাজার যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে। বোধ হয় চালের দাম আর বাড়েনি। বাড়লে কৃষক লাভবান হয়, আর কমলে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর।
×