ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পের কাছে বিদ্যুত বিক্রি করতে চায় সরকার

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

শিল্পের কাছে বিদ্যুত বিক্রি করতে চায় সরকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা কম থাকায় শিল্প গ্রাহকদের কাছে গ্রিড থেকে বিদ্যুত বিক্রি করতে চায় সরকার। এজন্য দাম কমিয়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের পাশাপাশি ক্যাপটিভের ব্যবহার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সারাদেশে এখন ১৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরে আরও দুই হাজার ৮০০ মেগাওয়াট ক্যাপটিভ পাওয়ার রয়েছে। তবে শীতকালের কারণে বিদ্যুতকেন্দ্রের বেশিরভাগই রয়েছে বন্ধ। তবে বেসরকারী বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ ঠিকই দিতে হয়। এতে সরকারকে আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে। তাই সাশ্রয়ী কোন ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। পাওয়ার সেল সূত্র জানায়, শিল্প মালিকরা যে ক্যাপটিভে বিদ্যুত উৎপাদন করে তার পরিচালন ব্যয় ও উৎপাদন ব্যয় কেমন, অন্যদিকে গ্রিড থেকে যদি তারা বিদ্যুত নেয় সেই খরচ কত, ক্যাপটিভ থেকে তারা যে মানের বিদ্যুত নিচ্ছে সেই মানের বিদ্যুত গ্রিড থেকে দিতে হলে কীভাবে দেয়া যাবে, যদি এই দুয়ের মধ্যে দামের পার্থক্য হয়, সেই পার্থক্য কতটুকু; সেই দাম যদি কমিয়ে আনা হয়, তাহলে কী হবে, এসব বিষয়ে নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করছে পাওয়ার সেল। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, প্রতিবেদন তৈরির পর এটি সরকারের কাছে উপস্থাপন করা হবে। এরপর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বড় পরিসরে আলোচনার জন্য বসা হবে। সরকার চাচ্ছে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ুক, শিল্প মালিকরা যাতে নিজেদের ক্যাপটিভ বিদ্যুত ব্যবহার না করে গ্রিড থেকে বিদ্যুত নেয়। কারণ গ্রিডে বিদ্যুত এখন সহজলভ্য। তিনি আরও বলেন, এই কাজ করতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতা আছে- তারমধ্যে দাম একটি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ একটি; এই বিষয়গুলো নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এদিকে বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি এক বৈঠকে বড় গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বৈঠকে উপস্থাপিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধির হারের সঙ্গে নতুন সংযোগ দেয়ার তাল মিলিয়ে না চললে উৎপাদন ক্ষমতা অব্যবহৃত থেকে যাবে। এখন শীত মৌসুমের শুরুতেই সকালের বিদ্যুতের চাহিদা ছয় হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই নতুন শিল্প সংযোগ বৃদ্ধির কৌশল বের করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করতে পারলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। শিল্পক্ষেত্রে ট্যারিফ কিছুটা কমালে যদি অফপিক সময়ে চাহিদা ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াটও বেড়ে যায়, তাহলে মোট প্রাপ্ত দাম বাড়বে কিনা সেজন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করে পর্যালোচনার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা করা হয়। প্রসঙ্গত, গ্রিডের বিদ্যুতের বেশিরভাগের ক্রেতাই গৃহস্থালির গ্রাহক এবং ছোট শিল্প মালিক। বড় শিল্প মালিকদের বেশিরভাগই গ্রিড থেকে বিদ্যুত নেয় না। সঙ্গত কারণে শীতের সময় বিদ্যুতকেন্দ্রকে বসে থাকতে হয়। এ সময় এসি-ফ্যানের লোড থাকে না। এই সময়টিতে শিল্প গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুত বিক্রি করলে তা পিডিবির জন্য লাভজনক বলে বিবেচনা করা হয়। বিদ্যুত বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিদ্যুতের সঠিক পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। যেখানে দেশের বড় বিদ্যুতকেন্দ্রকে বসে থাকতে হয়, সেখানে আরও হাজারখানেক ক্যাপটিভ বিদ্যুতের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে শিল্পে গ্রিডের বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে না। উৎপাদন আধিক্য নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।
×