ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্বরূপে ফিরছেন তাসকিন

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

স্বরূপে ফিরছেন তাসকিন

মোঃ মামুন রশীদ ॥ মাত্র ১৮ বছর বয়সে তাসকিন আহমেদ দারুণভাবে শুরু করেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ফিটনেস, বলের গতি এবং বোলিং স্টাইলে মুগ্ধ যেমন করেছিলেন ক্যারিয়ারের শুরুটাও ছিল দারুণ উজ্জ্বল। ২০১৪ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ ক্যারিয়ারের অভিষেক আর একই বছর জুনে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু টি২০ বিশ্বকাপে ২০১৬ সালে বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি চিহ্নিত হওয়ার পর থেকে ফিরে আর সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি কোন পর্যায়েই। কিন্তু চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে আগুন ঝরানো বোলিংয়ে পুরনো সেই রূপে ফিরে আসার প্রমাণ দিয়ে চলেছেন। এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ১৪ উইকেট তুলে নিয়ে ২৩ বছর বয়সী তাসকিন এখন শীর্ষ উইকেট শিকারি চলমান ষষ্ঠ বিপিএলে। দুই ম্যাচে ৪ উইকেট করে শিকার করেছেন সিলেট সিক্সার্সের হয়ে খেলা এ ডানহাতি পেসার। এর মধ্যে শনিবার রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৪ উইকেট তুলে নেন, যার মধ্যে এবি ডি ভিলিয়ার্স ও রাইলি রুশোর উইকেটও আছে। এবার বিপিএলের শুরুটাও ভাল হয়নি তাসকিনের। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন। তবে পরের ম্যাচেই জ্বলে ওঠেন তাসকিন। চিটাগং ভাইকিংসের বিরুদ্ধে ২৮ রানে নেন ৪ উইকেট। তার এই বিধ্বংসী বোলিংয়েই সিলেট সেই ম্যাচে রূদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ের পর ৫ রানে জয় তুলে নেয়। পরের ম্যাচেই আবার ৩৮ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে। চতুর্থ ম্যাচে উইকেটশূন্য থাকলেও নিজের পঞ্চম ম্যাচে রংপুরের বিপক্ষে ৩৪ রানে ২টি, ঢাকার বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচে ৩২ রানে ১টি উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্ক হয়ে ওঠেন তাসকিন। সেটা তিনি ধরে রেখেছেন নিজের সপ্তম ম্যাচেই। শনিবার সিলেটপর্বের শেষ ম্যাচে আবারও জ্বলে ওঠেন। যদিও প্রথম দুই ওভারে ২৫ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। তবে নিজের তৃতীয় ওভারে ফিরে এসেই দুরন্ত হয়ে ওঠেন। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম দুই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ভিলিয়ার্স ও রুশো সে সময় বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ম্যাচকে রংপুরের জন্য একতরফা বানিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু ওই ওভারে একই সঙ্গে দুইজনকে শিকার করেন তাসকিন। নিজের চতুর্থ ওভারেও তুলে নেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। ৪২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে শেষ করেন। যদিও অন্য বোলারদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত সিলেট আর জিততে পারেনি। সবমিলিয়ে ৭ ম্যাচে ১৪ উইকেট। ১৫.২১ গড় ও ৮.৮৭ ইকোনমি রেটে এই উইকেটগুলো নিয়ে চলমান আসরে সর্বাধিক উইকেট শিকারি এখন তিনি। সমান ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে রংপুরের পেসার শফিউল ইসলাম দুই নম্বরে এবং মাশরাফি বিন মর্তুজা ১২ উইকেট নিয়ে তিন নম্বরে। তাসকিন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুই করেছিলেন টি২০ ফরমেটে। ২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে প্রতিশ্রুতিশীল পেসার হিসেবে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল। সে বছর ১৭ জুন ভারতের বিপক্ষে অভিষেকেই গোটা বিশ্বকে চমকে দেন তাসকিন। ৮ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়েই তুলে নেন ৫ উইকেট। সে সময় ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা বলাবলি করছিলেন পরবর্তী মাশরাফিকে পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। ‘নড়াইল এক্সপ্রেসও’ তাসকিনের ওপর আস্থা রাখতে শুরু করেন। দারুণ সময় যাচ্ছিল তার। কিন্তু থমকে যেতে হয় ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপ চলার সময়। বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটির জন্য সাময়িক নিষিদ্ধ হন। সেখান থেকে এ্যাকশন শুধরে ফেরার পর আর পুরনো ছন্দে বোলিং করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলের বাইরে চলে যেতে হয়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সর্বশেষ টেস্ট ও ওয়ানডে খেলেছেন। আর গত বছর মার্চে শ্রীলঙ্কার নিদাহাস ট্রফিতে খেলেছেন সর্বশেষ টি২০। তবে এবার বিপিএলে স্বরূপে ফেরা তাসকিন জ্বলে উঠেছেন। পরবর্তী ম্যাচগুলোয় এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে হয়তো আবার জাতীয় দলের জার্সিতে ফেরার জন্য নির্বাচকদের বিবেচনায় আসবেন তাসকিন।
×