ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোদি সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

মোদি সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, মোদি সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে। বিজেপির শুভ দিন আর আসবে না। শনিবার কলকাতার ঐতিহাসিক প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত বিজেপিবিরোধী এক বিশাল সমাবেশে মমতা এ কথা বলেন। শনিবারের ওই সমাবেশে ভারতের ছোট বড় ২২টির বেশি রাজনৈতিক দলের লাখ লাখ লোক অংশ নেন। সমাবেশটির নাম দেয়া হয় ইউনাইটেড ইন্ডিয়া র‌্যালি। ইন্ডিয়া টুডে, আনন্দবাজার ও এনডিটিভি অবলম্বনে। কলকাতার প্যারেড গ্রাউন্ডের ওই অনুষ্ঠানে ‘মোদি হটাও ভারত বাঁচাও’ স্লোগান তুলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী ছাড়াও অরবিন্দ কেজরিওয়াল, শারদ পাওয়ার, অখিলেশ যাদব, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর প্রতিনিধি সতীশ মিশ্র, চন্দ্রবাবু নাইডু, যশবন্ত সিনহা, এইচ ডি দেবগৌড়া, ওমর আবদুল্লাহ, ফারুক আবদল্লা, এম কে স্ট্যালিন, গেগং আপাং, হেমন্ত সরেনের মতো ভারতের প্রথম সারির নেতারা উপস্থিত হন। এছাড়া বলিউড সুপারস্টার শত্রুঘ্ন সিনহা, অরুণ শৌরি, ঝাড়খন্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খন্ড বিকাশ মোর্চার নেতা বাবুলাল মারান্ডি, শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউত, বহুজন সমাজপার্টির অসমের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিনয় তামাংসহ অনেকে উপস্থিত হন। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই মহাসমাবেশে যোগ দিতে না পারলেও শুভেচ্ছা জানান মমতাকে। সেই সঙ্গে সাফল্য কামনা করেছেন এই মহাসমাবেশের। এই সমাবেশের আগেই মমতার নেতৃত্বে বিজেপিবিরোধী ফেডারেল ফ্রন্ট গঠনের উদ্দেশে একাট্টা হয় ভারতের ছোট বড় অনেক রাজনৈতিক দল। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে শনিবার ভোর থেকেই জনজোয়ারে ভাসতে শুরু করে কলকাতা। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ কর্মী-সমর্থক শিয়ালদহ, হাওড়াসহ বিভিন্ন স্টেশন দিয়ে সমাবেশ স্থলে আসে। ছোট বড় মাঝারি মিছিলে ছেয়ে যায় কলকাতার পথঘাট। এ মহাসমাবেশের মধ্য দিয়েই বিজেপির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হলো বলে মনে করা হচ্ছে। সমাবেশে অখিলেশ যাদব বলেন, ‘যত দূর পর্যন্ত চোখ যাচ্ছে, দেখছি শুধু মাথা আর মাথা।’ মমতা ব্যানার্জীর ডাকা এই বৃহৎ সমাবেশ এভাবেই চোখ ধাঁধিয়ে দিল ভারতের রাজনীতির রথী-মহারথীদের। আর কোন প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে এই প্রথমবার এত বড় কোন রাজনৈতিক সমীকরণ বিজেপির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ের ডাক এলো। অনুষ্ঠানে সবার শেষে বক্তব্য দিতে মঞ্চে দাঁড়ান মমতা। বক্তব্যের শুরুর দিকে সেøাগানের ধাঁচে মমতা বলেন, বাজারে লেগেছে আগুন, জাগুন দেশ জাগুন। এ সময় সমাবেশ স্থলে উপস্থিত অন্তত ১৫ লাখ জনতা হাত তুলে মমতার প্রতি সমর্থন জানান। এছাড়া মোদি সরকারের আর্থিক নীতি থেকে শুরু করে একাধিক প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিজেপিকে আক্রমণ করেন মমতা। বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার ‘অতিসক্রিয়তা’ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, আপনারা কাউকে ছাড়েননি। আপনাদের কোন সৌজন্য বোধ নেই। আপনি কাউকে ছাড়েননি তাহলে লোকে আপনাকে ছাড়বে কেন? বিরোধী জোট নিয়ে বিজেপি বরাবর কটাক্ষ করে থাকে। তাদের প্রশ্ন এই জোটের নেতাকে। এদিন আরও একবার সেই প্রশ্নের উত্তর দেন মমতা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিয়ে এখন ভাবার দরকার নেই। অন্যদিকে ভারতের সেনাবাহিনী দিয়ে রাজনীতি হচ্ছে বলে দাবি করেন মমতা। তিনি বলেন, সেনাসদস্যরা সব সময় নিরপেক্ষভাবে কাজ করেন। কিন্তু এখন তাদেরকেও রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে বাংলায় বিজেপির সংগঠন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রথযাত্রা করে বাংলায় অশান্তি ছড়াতে দেব না। আমি যেখানে সভা করি তার পর দিন তারা (বিজেপি) সেখানে গিয়ে সভা করে। আমি বলেছি রোজ মিটিং কর। কিছুই হবে না। বাংলায় বিজেপির দুটো আসন ছিল সেটাও আর থাকবে না। এরপর দলকে তিনি নির্দেশ দেন যেখানে যেখানে বিজেপি সভা করবে তার পর দিন সেখানে গিয়ে সভা করে আসবে তৃণমূল। ভাষণের অন্য একটি অংশে মমতা বলেন, বিজেপিতে প্রবীণ নেতাদের সম্মান নেই। এতদিন রাজনাথ সিং, সুষমা স্বরাজ, নীতীন গড়করিরা বিজেপিতে সম্মান পেতেন না। এখন ভোট এসেছে বলে যৌথ নেতৃত্বের কথা বলা হচ্ছে। মমতার বক্তব্যের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল বিজেপির আর্থিক নীতির সমালোচনা। তিনি বলেন, বিজেপির হাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা শেষ হয়ে গিয়েছে। বাজারে আগুন লেগেছে, ধস নেমেছে। শুক্রবার কলকাতায় পৌঁছেই দেবগৌড়া জানান, ‘ভারতের সব আঞ্চলিক দলকে নিয়ে মমতা ব্যানার্জী যে জোট বাঁধতে চাইছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। মমতার সঙ্গে আমরা রয়েছি। আগামী দিনে ভারতে স্থায়ী সরকার তৈরি হবে।’ ফেডারেল ফ্রন্ট গঠিত হলে আগামীতে কাকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে জানতে চাইলে দেবগৌড়া বলেন, ‘আগে বিজেপিকে পরাজিত করতে হবে। তারপর ভাবা যাবে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন।’ আরেক নেতা শারদ পাওয়ার বলেন, ‘বিজেপি জনবিরোধী। তাই জোট বেঁধে বিজেপির বিরুদ্ধে নামতে হবে।’ অখিলেশ যাদব বলেন, ‘মমতা দিদির ডাকে সাড়া না দিয়ে পারলাম না। সব আঞ্চলিক দলের নেতারা ব্রিগেডে আসছেন। আগামী দিনে বিজেপির বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ লড়াই হবে।’ অরুণাচল প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গেগং আপাং বিজেপিতে ইস্তফা দিয়ে মমতার ডাকে শামিল হয়েছেন। এ নেতা বলেন, ‘আলাদা দল করে মমতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিজেপিকে হঠানোর লড়াইয়ে নামব।’ ভারতের টিডিপি সুপ্রিমো চন্দ্রবাবু নাইডু বলেন, ‘আজকের দিনটা ভারতীয় রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ দিন। বিজেপি দেশের বেসরকারী সংস্থাগুলোকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে। প্রতিশ্রুতি পূরণে ¯্রফে ব্যর্থ হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অপব্যবহার করেছে। সেই কারণে সববিরোধী দল দেশের স্বার্থে এক হয়েছে।’ ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের ন্যাশানাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে বিরোধীরা একজোট হয়েছে। ভারতকে মজবুত করার বার্তা দেয়া হবে এ দিনের ব্রিগেড মঞ্চ থেকে। বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করার যে চেষ্টা চালাচ্ছে তার বিরোধিতা করতে হবে। আমরা ভারতের সংবিধানকে রক্ষা করতে চাই। সারা ভারতে আগুন লেগে গেছে। সেই আগুনকে নেভানোর জন্য এমন কাউকে চাই, যে বিরোধীদের একজোট করতে পারে। এ জন্য বিরোধীরা সবাই মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে একজোট হয়েছে।’
×