ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দুই পারে হচ্ছে দুটি নতুন থানা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দুই পারে হচ্ছে দুটি নতুন থানা

শংকর কুমার দে ॥ পদ্মা সেতুর দুই পারে স্থাপন করা হচ্ছে নতুন দুই থানা। থানা দুটির নাম হচ্ছে ‘পদ্মা সেতু উত্তর’ ও ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণ’। ভবনের নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যেই শেষ। এখন কেবল চালুর জন্য অপেক্ষা। এ জন্য জনবল চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। নির্মাণাধীন স্বপ্নের পদ্মা সেতু ঘিরে চলছে বিভিন্ন ধরনের কর্মযজ্ঞ। পদ্মা সেতুর নির্মাণ শেষ হলে ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, যাতায়াতের সুব্যবস্থা, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিসহ জনজীবনে কর্মচঞ্চলতায় নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হবে। এ জন্য মানুষজনের জানমাল রক্ষায় নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পদ্মার দুই পারে স্থাপন করা হচ্ছে দুই থানা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের থানার সংখ্যা ৬৩৩। পদ্মার দুই পারে নতুন দুই থানা হলে যুক্ত হবে আরও ২ থানা। এতে দেশের মোট থানার সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৩৫। পদ্মার পারের নির্মিত দুই থানার জন্য জনবলও নির্ধারণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে দুটি থানা ভবন। পদ্মা সেতু উত্তর ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ নামে এই দুই থানার ভবন নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। পদ্মা সেতুর দুই থানার প্রশাসনিকভাবে কাজ শুরু করার বিষয়টি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে সারাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় সৃষ্টি হবে নবদিন্তের সূচনা। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বল্প সময়ের ব্যবধানের যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে কর্মচাঞ্চলের সৃৃষ্টি হবে তাতে ব্যাপক জনসমাগমের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পদ্মার দুই পাড়ে দুই থানা চালু হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার পাড়ের দুই থানার ভবন নির্মাণ ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। চারতলা ভবন দুটি নির্মাণ করেছেন পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, একজন সহকারী পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ৪০ জন করে পুলিশ সদস্য থাকবেন প্রতিটি থানায়। সংযোগ সড়কের টোলপ্লাজার পাশে পদ্মা নদীর দুই পাড়ের এক সময়ের জনশূন্য এলাকাগুলো পদ্মা সেতু নির্মাণযজ্ঞের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্যে জেগে উঠতে শুরু করেছে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে পাল্টে যাচ্ছে দুই পাড়ের জীবনযাত্রা। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন জনবসতিত। বসছে নতুন নতুন হাট-বাজার। বসবাস করতে শুরু করেছেন মানুষজন। এ জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার তাগিদও। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার দুই পাড়ে যে দুই থানা ভবনের মধ্যে একটি মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মেদেনীম-লে পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজার অদূরে এই থানা ভবন। অপর থানা হচ্ছে দক্ষিণ প্রান্তে শরীয়তপুরের জাজিরা ও মাদারীপুরের শিবচর প্রান্তের এলাকায় একই ধরনের ভবন। পদ্মা সেতু নির্মাণের আগেই পদ্মার পাড়ের নতুন দুই থানার উদ্বোধন হবে নাকি পদ্মা সেতু নির্মাণের পরে উদ্বোধন করা হবে সেটা এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে আছে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জনতাসহ সমগ্র দেশবাসি। এই একটি সেতু বদলে দেবে দেশ। কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিই বদলে দেবে। মাওয়া-জাজিরায় নির্মাণাধীন গৌরবের পদ্মা সেতু ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। নিজেদের এ স্বপ্ন যেন খুব শীঘ্রই পূরণ হতে হচ্ছে। এই সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রথম কোন সমন্বিত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে। সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবন পাল্টে যাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কৃষিতে উন্নত। এই সেতু হয়ে গেলে তাদের কৃষিপণ্য খুব সহজেই ঢাকায় চলে আসবে। মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরে চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পুরো দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত হবে। পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হলে যারা এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র করেছিল তাদের উচিত জবাব দেয়া সম্ভব হবে। ২০১৮ সালেই এই সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা ছিল। সেটা আরও পিছিয়ে কাজের প্রয়োজনে লাগতে পারে আরও কিছু সময়। বহুমুখী পদ্মা সেতু ৭৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। খরস্রোতা নদী তাই সেতু নির্মাণ অনেক কঠিন ছিল। এরই মধ্যে ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এতে অর্থায়নের কথা ছিল এডিবি, জাইকা ও বিশ্বব্যাংকের। কিন্তু দুর্নীতির ধোয়া তুলে একে একে সবাই অর্থায়ন থেকে ফিরে যায়। পদ্মা সেতু প্রকল্প দেশের সর্ববৃহৎ একটি অবকাঠামো প্রকল্প। সেতুটির নির্মাণকাজ টেকনিক্যাল, সময়সাপেক্ষ ও চ্যালেঞ্জিং। গুণগতমান শতভাগ রাখার স্বার্থে আমরা ধৈর্য ও সতর্কতার সঙ্গে কাজ এগিয়ে চলছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে যে যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটবে তাতে ব্যাপক জনসমাগম ঘটবে। এতে ওই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষা ও মানুষজনের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়টি সময়ের দাবি বিবেচনায় নিয়েই পদ্মার পাড়ের নতুন দুই থানা স্থাপন করা হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্মকর্তার দাবি।
×