ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁটিওয়ালা স্টাইলিশ পাখি, যেন মুকুট পরা রাজা

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

ঝুঁটিওয়ালা স্টাইলিশ পাখি, যেন মুকুট পরা রাজা

মোরসালিন মিজান ॥ পাখির নাম মোহনচূড়া। সুন্দর একটি নাম। নাম যেমন সুন্দর, দেখতেও দারুণ। অন্য অনেক পাখি থেকে সহজে এটিকে আলাদা করা যায়। অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। একই পাখি কাঠকুড়ালি নামে পরিচিত। তারও বেশি কানে আসে হুদহুদ নামটি। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ পাখি দৃশ্যমান। ঢাকার বাইরে কুষ্টিয়ায় প্রথম দেখা হয় পাখিটি। দেখে জেব্রার কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। চিড়িয়াখানার প্রাণির গায়ে যেমন ডোরাকাটা দাগ, মোহনচূড়ার পালকেও ঠিক তেমনটি। প্রায় একই রকম দেখতে। ডানা ও লেজের অংশ জেব্রার শরীরের মতো সাদা, কালো এবং ডোরাকাটা। গায়ের সামনের দিকটা বাদামি। ঝুঁটির সৌন্দর্যও দারুণ আকর্ষণ করে। কমলা রঙের ঝুঁটির একেবারে উপরের অংশটি কালো। ঠোঁটও সুন্দর খুব। সরু লম্বা ঠোঁট নিচের দিকে সামান্য বাঁকা। দূর থেকে দেখা এদের কোন্টি পুরুষ আর কোন্টি নারী প্রজাতির বোঝা সম্ভব হয়নি। এত সাজুগুজু করা যে, নারী ভাবতেই ভাল লাগছিল। হুদহুদ বহুকাল ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উড়ে বেড়াচ্ছে। ঘুরে বেড়াচ্ছে। ইউরোপ, আফ্রিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট বিরল। পাখি বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ বলে, সাধারণ অবস্থায় ঝুঁটি গুটিয়ে রাখে মোহনচূড়া। উত্তেজিত হলে ঝুঁটি প্রসারিত করে। তখন ব্যান্ড পার্টির বাদকদের মাথায় থাকা বিশেষ টুপির মতো দেখায়। পাখিটি গাছের গায়ে ভাল ঠোকর দিতে পারে। লম্বা ঠোঁটের সাহায্যে মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে। ফড়িং, পোকামাকড় ইত্যাদি খেয়ে বাঁচে মোহনচূড়া। নিজে বাঁচে। ক্ষতিকর পোকামাকড় নিধন করে রক্ষা করে জমির ফসলও। এ কারণে পাখিটির কদর আছে গ্রামে। কোন কোন দেশে নাকি আইন করে পাখিটি রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাখিটির কথা জানা যায় ইতিহাসের পাতা থেকেও। ধর্মগ্রন্থ কোরান ও বাইবেলে এই পাখির কথা এসেছে। একটি হুদহুদ পাখি নবী হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর পোষা ছিল। এর কাজ ছিল বিভিন্ন স্থান থেকে খবরাখবর সংগ্রহ করা। একই পাখিকে প্রাচীন পারস্যে দেখা হয় সততার প্রতীক হিসেবে। প্রাচীন মিসরেও পাখিটিকে পবিত্র জ্ঞান করা হতো। অবশ্য শতভাগ উল্টো ধারণাও আছে। যেমন ইউরোপে এ পাখিকে চোর অপবাদ সহ্য করতে হয়!
×