ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পেনশন চালুর প্রস্তাব আতিউরের

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পেনশন চালুর প্রস্তাব আতিউরের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈষম্য কমাতে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান। এজন্য গার্মেন্টস কর্মীদের দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে নিম্ন আয়ের মানুষ যেমন রিক্সাচালকসহ স্বল্প আয়ের মানুষকেও এই পেনশনের আওতায় আনা যায় বলে মত দেন তিনি। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত এক কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি সরকারের কাছে এ প্রস্তাব রাখেন। তিনি বলেন, দেশে চলমান বৈষম্য কমিয়ে আনতে সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পেনশন স্কিমের ব্যবস্থা করতে পারে। গার্মেন্টস কর্মীদের দিয়ে এটা শুরু করা যায়। এরপর আরও যারা নিম্ন আয়ের মানুষ যেমন রিক্সাচালকসহ স্বল্প আয়ের মানুষকেও এই পেনশনের আওতায় আনা যায়। প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দিয়ে সাবেক গবর্নর বলেন, যে মেয়েটি ঢাকায় এসে গার্মেন্টসে চাকরি করছে প্রতি মাসে তার টাকা গ্রামে বাবা- মা কিংবা স্বামীর কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ২০ বা ৩০ বছর পর যখন সে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে তখন তার কাছে জমা কিছুই নেই। এরপর এ পোশাককর্মী কিভাবে চলবে সে চিন্তা সরকারকে করতে হবে। শ্রমিকের বেতন থেকে কিছু অর্থ কেটে রেখে এর সঙ্গে সরকার আরও কিছু অর্থ যোগ করে এ পেনশন স্কিম বাস্তবায়ন করতে পারে। এই কার্যক্রম দেশ থেকে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণে সহায়তা করবে বলে মনে করি। বিদেশী বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আমরা বিদেশী বিনিয়োগে এখনও পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামের সঙ্গে এখনো আমরা তুলনার পর্যায় পর্যন্ত যেতে পারিনি। দেশটিতে বছরে ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশী বিনিয়োগ হচ্ছে। এমনকি মিয়ানমারে পর্যন্ত পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের হচ্ছে মাত্র তিন বিলিয়নের মতো। বিদেশী বিনিয়োগের জন্য তিনি শ্রমিকবান্ধব নীতি গ্রহণের পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষ বন্ধের ওপর ওপর গুরুত্ব দেন। সানেম নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান তার উদ্বোধনী বক্তব্যে মানসম্পন্ন জিডিপি প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং জিডিপির বিপরীতে কর আহরণকে চ্যালেঞ্জ বলে বর্ণনা করেন। অপরদিকে বৈদেশিক বাণিজ্য স্থিতিশীল রাখা, শক্তিশালী রিজার্ভ ধরে রাখা এবং বাজেট ঘাটতি পাঁচ শতাংশের মধ্যে রাখতে পারাকে সফলতা বলে উল্লেখ করেন। বিশেষ অতিথি সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম এখন দেশের ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়ার সময় এসেছে মন্তব্য করেন। আমাদের এখন ক্যাপিটাল এ্যাকাউন্ট ওপেন করার সময় এসেছে। আমাদের অর্থনীতিকে উন্মুক্ত করা উচিত। পোশাক রফতানি ভর্তুকি পেলে অন্যান্য খাত কেন পাবে না? সবাইকে ভর্তুকির আওতায় আনা যায় কীনা সে চিন্তাও করার সময় এসেছে। এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, দেশের টেকসই ও স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানব সম্পদের উন্নয়ন। এ জন্য স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বেশি হারে বিনিয়োগ দরকার। তবে ডিজিটাইজেশনের কারণে আমাদের জবলেস গ্রোথ হচ্ছে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি চ্যালেঞ্জিং হলেও তা অর্জন করতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমাতে গিয়ে যেন প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
×