ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁচতে চান বীরপ্রতীক আব্দুল মালেক

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

বাঁচতে চান বীরপ্রতীক আব্দুল মালেক

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ অর্থাভাবে মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত বীরপ্রতীক অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার আব্দুল মালেকের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে। তার চিকিৎসার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ কারণে অসুস্থ বীরপ্রতীক আব্দুল মালেকের সুচিকিৎসার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করেছেন। গৌরনদী উপজেলার কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মালেকের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছয় বছর আগে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে তিনি পঙ্গুত্ব বরণ করেন। তার বাম হাত ও পা অবশ হয়ে গেছে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি ও শ্রবণশক্তি হারিয়ে আব্দুল মালেক এখন শয্যাশয়ী। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী রণাঙ্গন কাঁপানো গ্রুপ কমান্ডার, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক আব্দুল মালেক (৭৭) নানা রোগের কাছে আজ একজন পরাজিত সৈনিক। তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে পরিবারটি আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। সূত্রে আরও জানা গেছে, গৌরনদীর কুতুবপুর গ্রামের মৃত খাদেম আলী চাপরাশির পুত্র আব্দুল মালেক ১৯৬১ সালে তৎকালীন ইপিআর বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি মুক্তিবাহিনীর একটি ইউনিট গঠন করে প্রশিক্ষণের জন্য তাদের ভারতে নিয়ে যান। ভারতের বেগুনদিয়ার টার্কি ক্যাম্পে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে আব্দুল মালেককে ৫৬ মুক্তিবাহিনীর একটি দলের গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বভার প্রদান করা হয়। তিনি তাদের নিয়ে এলাকায় ফিরে মুক্তিযুদ্ধের ৯ নং সেক্টরের অধীনস্থ আঞ্চলিক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নিজাম উদ্দিন ও হেমায়েত বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, মুলাদী, উজিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরের ভূমিকা পালন করেন। তিনি (মালেক) ছিলেন ৯ সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব) জলিলের বিশ্বস্ত সহচর। তার সহযোদ্ধা ছিলেন গৌরনদী উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু, ডেপুটি কমান্ডার মনিরুল হক, সোহরাব হোসেন খানসহ এলাকার অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরত্বের ভূমিকা পালন করায় তাকে (আব্দুল মালেক) বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি পূর্নরায় বিডিআর বাহিনীতে যোগদান করেন। হাবিলদার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর ১৯৮৪ সালে তিনি অবসরগ্রহন করেছেন। বীর প্রতীক আব্দুল মালেকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, ২০১২ সালে তার স্বামী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেন। পরবর্তীতে জমাজমি বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসার খরচ চালিয়েছেন। এরপর গত দুইবছর আগে তার (রাবেয়া) উভয় কিডনীতে পাথর ধরা পড়ে। অপারেশন করে পাথর অপসারন করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। তাদের তিন পুত্র ও দুই কন্যা এখনও পড়াশুনা করছে। স্বামীর (মালেক) পেনশন ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় চলে সংসারের খরচ। ফলে চিকিৎসার টাকার জন্য তাদের রিতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ কারণে নিরুপায় হয়ে তিনি তার অসুস্থ্য বীর প্রতীক স্বামী আব্দুল মালেকের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করেছেন।
×