ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘনায় ট্রলারডুবি

চতুর্থ দিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ কোন শ্রমিকের

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

  চতুর্থ দিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ কোন শ্রমিকের

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ মেঘনা নদীতে ট্রলার ডুবির চতুর্থ দিন শুক্রবারও নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের সন্ধান মিলেনি। শুক্রবার দিনভর ডুবে যাওয়া ট্রলারটি চিহ্নিত করতে নানা তৎপরতা চলে। সাইড স্ক্যান সোনারে শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিসির একটি টিম এবং নৌবাহিনীর আরেকটি টিম চেষ্টা চালায়। পৃথক দুটি টিম সম্ভাব্য স্থানগুলো স্ক্যান করে। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন রকম সন্ধান পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার চার দিন পরও সন্ধান না পাওয়ায় নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারে ক্ষোভ বেড়েছে। স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাত যেন থামছেই না। নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি দল ছাড়াও কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ নানা তৎপরতা চালায়। এদিকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ উদ্ধার তৎপরতা শুরু করার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু ১৫০ ফুট দীর্ঘ ট্রলারটি সন্ধান না পাওয়ায় ক্রেনটি ব্যবহার করতে পারছে না। তাই সকলেই এখন নদীর তলদেশের ট্রলারের সন্ধানে ব্যস্ত সময় পার করছে। গজারিয়ার ইউএনও হাসান সাদী দুর্ঘটনা স্থলে শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জানান, সানলাইট না থাকায় শুক্রবারের মতো অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। তবে শনিবার সকাল আটটা থেকে আবার অভিযান চলবে। এদিকে স্বজন-হারা পরিবারগুলো বলছে, দুর্ঘটনার চার দিনেও ট্রলারটি শনাক্ত না করতে পারা দুঃখজনক। এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে ডুবে যাওয়া ট্রলারের মাঝি হাবিবকে গ্রেফতার করা গেলে দুর্ঘটনার স্থানটি চিহ্নিত করা সহজ হতো। একই সঙ্গে ট্রলারের মালিক জাকির দেওয়ানকে এখনও কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না? মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, মামলার প্রস্তুতি নেয়া আছে। তবে এখনও ট্রলারটি শনাক্ত না হওয়ায় মামলা করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া নৌকার মাঝিকে গ্রেফতার এবং ট্রলারের মালিককে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে ট্রলারডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। নয় সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির প্রধান মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বেরুল ইসলাম। মোবাশ্বেরুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান নানা বিষয়ে খোঁজ-খবর করা হচ্ছে। সাইড স্ক্যান সোনারে শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে ট্রলারের খোঁজ করা হয় পুরো এলাকা জুড়ে। পুরো এলাকায় এই স্ক্যান করার পরও শুক্রবার আর কোন ইমেজ মনিটরে দেখা যায়নি। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত এই সন্ধান কাজ চলে। নৌবাহিনীর আট সদস্যের ডুবুরি দল, ফায়ার সার্ভিসের আট ডুবুরি ও বিআইডব্লিউটিএ’র তিনজন ডুবুরি দলও অনুসন্ধান চালাচ্ছে। উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ উদ্ধার তৎপরতা ক্রেন ব্যবহার না করলেও অনুসন্ধানে এই টিমের যন্ত্রপাতি ও কর্মী বাহিনী কাজ করছে। মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ মোস্তফা মহসিন জানান, মেঘনার তলদেশের প্রায় ৬০ ফুট পানির নিচে ট্রলারের এই সন্ধান কাজ চলছে। নৌ পুলিশের এসপি হুমায়ুন কবির জানান, নদী শান্ত, শুষ্ক মৌসুম। এতে উদ্ধার তৎপরতা সহজে করা যাচ্ছে। কিন্তু মেঘনার এই অংশটি বড়, নদীর তলদেশও সমান নয়। এছাড়া দুর্ঘটনার স্থানটি এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। ট্রলারের বেঁচে যাওয়া শ্রমিক শাহ আলম দুর্ঘটনার স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, যেন নতুন জীবন পেয়েছি। তবে সঙ্গের ভাইদের হারিয়ে খুব কষ্টে আছি। চার দিন হয়ে গেল, কিছুই হচ্ছে না। অনেক স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শান্ত একটা নদী সেখানে এত অভিজ্ঞ লোকজন, এতসব উদ্ধার যান, বিশাল আকারের উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’। কিন্তু একটি ট্রলারই উদ্ধার হচ্ছে না। শুষ্ক মৌসুমের এই ঘটনা। আর বড় নদী আর বর্ষাকাল হলে কি হবে। দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বিআইডব্লিউটিএ’র দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সারা বছরে দুয়েকটি দুর্ঘটনা , তাও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। অনেক অর্থ ব্যয় করে যন্ত্রপাতি আমাদানি করা হলেও তা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছে না বলেই শান্ত নদীতে একটি ট্রলার উদ্ধার হচ্ছে না। অথচ এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সাগরেও উদ্ধার কাজ চলছে। এই কর্মকর্তা প্রশ্ন করেন- ঘটনার চারদিনেও কেন দুর্ঘটনা কবলিত ট্রলারটির বেঁচে যাওয়া সারেং (চালক) হাবিব ব্যাপারীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। মাদারীপুরের শিবচরের হালদার কান্দির মৃত করিম ব্যাপারীর পুত্র হাবিব ব্যাপারীকে পাওয়া গেলেই দুর্ঘটনার স্থানটি চিহ্নিত করা সহজ হবে। জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানিয়েছেন, ডুবে যাওয়া ট্রলার উদ্ধার এবং নিখোঁজ শ্রমিকদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চলমান রয়েছে, রাত ঘনিয়ে আসায় স্থগিত রয়েছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে আবার উদ্ধার কাজ শুরু হবে। উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। এদিকে নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনরা এখনও মেঘনা তীরে অবস্থান করছেন। শুক্রবারও তারা মেঘনায় ট্রলার নিয়ে খুঁজে ফিরেছেন স্বজনদের। সহযোগিতার চেষ্টা করেছেন- উদ্ধার কাজে আসা কর্মীদের। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। তাই তাদের কান্নাও থামছে না। বেঁচে যাওয়ার শ্রমিকদেরও শুক্রবার মেঘনা নদীতে ট্রলারে করে ঘুরতে দেখা গেছে। এদিকে নিখোঁজের স্বজন ও বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের গজারিয়া উপজেলার মেঘনা তীরের কালীপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন। গত সোমবার রাত তিনটার দিকে মেঘনা নদীতে মাটি বোঝাই ট্রলার ডুবিতে ২০ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। ট্রলারের ১৪ শ্রমিক সাঁতরিয়ে তীরে উঠতে সক্ষম হন। নিখোঁজ শ্রমিকদের মধ্যে ১৭ জনের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নে। দুর্ঘটনার ২৯ ঘণ্টা পর উদ্ধার কাজ শুরু হয়। তবে এখনও নিখোঁজ শ্রমিকের সন্ধান মেলেনি।
×