ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সামনে শঙ্কা শুধু শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে

বোরো আলু সরিষা ও সবজির ফলন উত্তরে ভালর দিকেই যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

 বোরো আলু সরিষা ও সবজির ফলন উত্তরে ভালর দিকেই যাচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ শীতের শুরুতে কৃষকের ধারণা ছিল এবার বুঝি শীতের ফসল মার যায়। আবহাওয়ার মতিগতিও তেমনই ছিল। হঠাৎ জলবায়ুর হেরফেরের মধ্যে পড়ে গেল ফসল। এই ঠান্ডা তো এই গরম। এই সূর্যালোক, আবার কুয়াশা। কৃষক ঠাহর করতে পারছে না কী করবে! আবহাওয়া বিভাগ বলে এক কথা। প্রকৃতি দেখায় আরেক চিত্র। তারপরও কৃষিপ্রধান উত্তরাঞ্চলের কৃষককুল এবারের শীত মৌসুমের ফসল নিয়ে আশাবাদী। বগুড়ায় সোনাতলার রানীরপাড়া গ্রামের কৃষক সমেশ উদ্দিন বললেন যেঙ্কা কুয়া পরিচ্চিল আর জাড়ে জাড়ে হাড্ডি কাঁপিচ্চিল ব্যয়না ঘরত থাক্যে বাড় হওয়া যাচ্চিল না। ফাঁপর লাগচ্চিল ভিউঁত যামো কেঙ্কা করে‌্য। একন অদ উঠিছে। ভিউঁত যায়া চারা গাঁড়িচ্চি (যে রকম কুয়াশা ছিল আর যে শীত অনুভূত হচ্ছিল সকালে ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছিল না। শঙ্কা ছিল জমিতে যাব কেমন করে। এখন রোদ উঠেছে। চারা রোপণ করা যাচ্ছে)। বগুড়া অঞ্চলের প্রতিটি এলাকায় এখন সরিষা, আলুর আবাদে পরিচর্যা চলছে। সবজি আবাদ অনেকটা এগিয়েছে। বোরোর চারা রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দিনাকয়েক আগেই কুঁকড়ে গিয়েছিল আলু। নেতিয়ে পড়েছিল হলদে ফুলের সরিষা। বোরোর বীজতলা ভিজেছে শিশিরে। ঘন কুয়াশা বেড়ে যাওয়ায় সবজি ছিল স্থির। শীতে জখম হয়ে পড়েছিল জমি। চিন্তায় ও ফাঁপরে পড়েছিল কৃষক। তাদের আশা বরবাদ করে দিচ্ছিল ঠান্ডা। ফসলের জন্য এ সময়টায় সূর্যালোকের খুবই দরকার। সেই সূর্য মুখ লুকিয়েছিল ঘন কুয়াশার আড়ালে। আবাদ উদ্বৃত্ত উত্তরাঞ্চলের কৃষক এখন বলছে, আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে আর শৈত্যপ্রবাহের থাবা বেশি না পড়লে এবার ভালই হবে শীতকালীন ফসল। তবে মধ্য জানুয়ারির পর মাঘে একাধিক শৈত্যপ্রবাহ হানা দিলে ফের ফসল নিয়ে শঙ্কায় পড়তে হবে। অবশ্য কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (ডিএই) এখন পর্যন্ত ফসলের শঙ্কা নিয়ে তেমন বিচলিত নয়। তাদের কথা, সূর্যালোক ও বর্তমান তাপমাত্রা ফসলের অনুকূলেই আছে। আবহাওয়া বিভাগের মতে তীব্র শীতের মাঘে (জানুয়ারির মধ্যভাগ থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ) দু/তিনটি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে, যা বইবে উত্তরাঞ্চলে। এর প্রভাবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের অনেক এলাকায় তীব্র শীতের থাবায় পড়বে। বগুড়ার গ্রামে দেখা যায়, বোরোর বীজতলা নিয়ে ব্যস্ত কৃষক। গেরস্ত সোলায়মান (৬৬) জানান, গত শীত মৌসুমে ডিসেম্বরের মধ্যেই বীজতলা তৈরি হয়েছিল। জানুয়ারির শুরুতে চারা রোপণ করেছিলাম। এবার জমি ঠিকঠাক করতেই কাঁপুনে জাড় এসে সব এলোমেলো করে দিল। কৃষক সালজার (৪৮) বলেন জমিতে যে আলু আছে সে গাছ কুঁকড়ে যাওয়ার পর এখন কিছুটা তেজি হয়ে উঠেছে। মাঘের শৈত্যপ্রবাহে কতটা আঘাত করে তার ওপর নির্ভর করছে আবাদ কতটা ঘরে তুলতে পারব। তবে এখন পর্যন্ত আলুর আবাদ ভালর দিকে যাচ্ছে। গত মৌসুমে আলুর আবাদ ভাল হয়েছিল। রোদ উঠলেই আলুর আবাদ ভাল হবে। কৃষক রফিকুল বলেন, সরিষার আবাদও ভাল। ফুলে মাঠ হলদে হয়ে গেছে।
×