ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে শব্দ দূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

বরিশালে শব্দ দূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ নীরব ঘাতক শব্দ দূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে বরিশাল নগরবাসী। চরম বিরক্তিকর, খিটখিটে মেজাজ, পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্টকারী, অস্থিরতা বৃদ্ধিকারী, শ্রবণশক্তি বিনষ্টকারী, উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রাসহ বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী এক ঘাতকের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে শব্দ দূষণ। এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বরিশালে শব্দ দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। উন্নত বিশ্বে যানবাহনের হর্ন বাজানো নিয়ে কড়াকড়ি আইন থাকলেও বরিশালে এর কোন প্রয়োগ নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালের সামনে দিয়ে বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে গাড়ি চালিয়ে গেলেও তা দেখার যেন কেউ নেই। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিবিধান থাকলেও তার কোন প্রয়োগ নেই। শব্দদূষণ রোধের আইন যেন ‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বরিশালে ভয়াবহ আকারে বেড়েছে শব্দ দূষণ। এ কারণে বরিশালের অনেক মানুষ এখন কানে কম শুনতে শুরু করেছে। এর কারণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত উচ্চহারে শব্দ গ্রহণ করা। বরিশালে অবৈধ থ্রী-হুইলারের ব্যবহার বেড়েই চলছে। আকস্মিকভাবে থ্রী-হুইলারের শব্দ একজন মানুষকে বধির কিংবা বেহুঁশ করে দিতে পারে। অথচ এই অপরাধের নেই কোন জরিমানা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দ দূষণ যে কোন মানুষের জন্য ক্ষতিকর হলেও হর্নের ফলে শিশু এবং গর্ভবতী নারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও ট্রাফিক পুলিশ, রিক্সা বা গাড়ি চালক, রাস্তার নিকটস্থ শ্রমিক বা বসবাসকারী মানুষ অধিক হারে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে অস্থায়ী বধির এবং ১০০ ডেসিবেল মাত্রার শব্দ মানুষকে স্থায়ীভাবে বধির করে দেয়। অথচ বরিশাল শহরে শব্দের মাত্রা ১০০ ডেসিবেলের চেয়ে বেশি। বরিশালে রাস্তায় হর্নের শব্দে মনে হয় গাড়ি চালকরা যেন শব্দ বাজানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। বিনা প্রয়োজনে হরহামেশাই যত্রতত্র হর্ন বাজানো হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বা সংরক্ষিত এলাকা যেমন মসজিদ, মন্দির, হাসপাতালের পাশের রাস্তাগুলোতেও চালকরা হর্ন বাজানো বন্ধ করেন না। অথচ গাড়ির হর্নের শব্দে চলার পথেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে যে কেউ। গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ থাকলেও সে নিষেধ মানার সময় নেই চালকদের। এ ব্যাপারে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের (শেবাচিম) মেডিক্যাল অফিসার রেদওয়ান রায়হান জানান, শব্দ দূষণের ফলে ০-৫ বছর বয়সী শিশুদের স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শ্রবণশক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। হঠাৎ করে হর্ন দেয়ার ফলে অনেকেই হার্ট এ্যাটাক করে। এছাড়া অতিরিক্ত হর্নের ফলে মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। ফলে অপরাধ প্রবণতাও বেড়ে যায়। শব্দ দূষণ রোধে জনসচেতনতা ও করণীয় বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ আবুল কালাম আজাদ বলেন, টিভি এবং মিউজিক সিস্টেমের শব্দ আস্তে করে দিতে হবে। ঘন ঘন অযথা গাড়ির হর্ন বাজাবেন না। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। লাউড স্পিকারের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। বিয়েবাড়ির শোভাযাত্রায় ব্যান্ড বাজানো, পটকা ফাটানো বন্ধ করতে হবে। সবাইকে শব্দদূষণ সংক্রান্ত আইন মেনে চলার কথা বলতে হবে। শব্দ দূষণের এই ভয়াবহতা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে সরকারকে এখনই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন। আইন বাস্তবায়নের জন্য জরিমানা আদায় নিশ্চিত করতে হবে।
×