ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাহারি নামে হরেক স্বাদের পিঠা

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

বাহারি নামে হরেক স্বাদের পিঠা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ নগরীর নিউমার্কেট ঘেঁষা আধুনিক শপিংমল থিম ওমর প্লাজা। এক সপ্তাহ ধরে সেখানে মানুষের ভিড় লেগেই আছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়তি ভিড়। সব বয়সী মানুষের এ ভিড়ের উপলক্ষ পিঠা। সেখানে চলছে পিঠা উৎসব। শীতের আবেশে তাই বাহারি পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতেই এত মানুষের ভিড় সেখানে। মার্কেটের চলন্ত সিড়ি বেয়ে সপ্তমতলায় উঠেই বুঝা গেল আসল রহস্য। কেন এত ভিড়। কারণ সেখানে উঁকি দিয়েছে, দুধে-রসে ভেজানো বিভিন্ন নক্সার দুধ মনমোহন, হৃদয় হরণ, হৃদয় ক্ষরণ, নক্সী, গোলাপ, শামুক, কলসি, হাঁড়ি, মালপোয়া, ডিম পানতোয়া, লবঙ্গ লতিকা, বিবিখানা, তালপাতা, তারা, লস্করসহ বাহারি সব পিঠা। এগুলো সবই দেশী পিঠা। উৎসবের স্টলেই তৈরি হচ্ছে। বাহারি নক্সা ও স্বাদের এসব পিঠার নাম শুনেই জিভে জল এসে যায়। হাতের কাছে পেলে এগুলোর স্বাদ নেবেন না এমন মানুষ পাওয়া দুস্কর। শীতকালে পিঠা খাওয়া বাঙালী সংস্কৃতির অনেক পুরনো রেওয়াজ। বাংলার গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই শীতকালে চলে পিঠা খাওয়ার ধুম। তবে ইট পাথরের ব্যস্ত শহরে পিঠাপ্রেমীদের হরেক পিঠার স্বাদ নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে পিঠা উৎসব। তাই সেখানে ভিড় লেগেই রয়েছে উৎসবের শুরু থেকেই। বাঙালীর সমাদৃত এই ঐতিহ্যকে শহরবাসীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই নগরীর নিউমার্কেট সংলগ্ন থিম ওমর প্লাজার সপ্তম তলায় চলছে ১০ দিনব্যাপী শীতকালীন পিঠা উৎসব। আজ শনিবার এ উৎসবের সমাপনীর কথা রয়েছে। সকলের জন্য উন্মুক্ত এই পিঠা উৎসব চলছে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। হাজার বছর ধরে গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে পিঠা-পুলির আয়োজন। আর শীতকাল মানে তো ঘরে ঘরে বাহারি স্বাদের পিঠা। বাঙালী ঐতিহ্যের এক বড় অংশ জুড়ে আছে এ পিঠা। বিশেষ করে গ্রামীণ ঐতিহ্য এখনও অনেকাংশেই টিকে আছে হাজারো স্বাদের পিঠা। শীতকালে পিঠা-পুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবার প্রিয় খাবার এ পিঠা। হালে এ পিঠার ঐতিহ্যে লেগেছে আধুনিকতার ছাপ। গ্রামীণ ঐহিত্য ধরে শহরে জীবনে এখন বদলেছে পিঠার রকমভেদ। তারই প্রমাণ মিলল রাজশাহীর পিঠা উৎসবে। শুক্রবার ছুটির দিনের দুপুরে থিম ওমর প্লাজার সপ্তম তলায় পিঠা উৎসবে দর্শনার্থীদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। দর্শনার্থীদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী। মেলার ১২টি স্টলের প্রতিটিই ঘেরা ক্রেতাদের ভিড়ে। ভিড় ঠেলে কাছে গেলেই স্টলের সামনে সাজানো দুধমালাই, মুগডাল, পাটি সাপটা, ঢাকনা, কুশলী, ডিম পানতোয়া, চিকেন পাকোড়া, জামদানি, আন্দশা, রসফুল, রসচিতাই, মাছ, বিস্কুট, নারকেলের শাঁস কুসলি, দুধ কুশলি, সবজির চাকা পিঠা, মুখশেলী, কালাই, লেয়ার, বকুল, পাকোয়ান ও জবাসহ নাম জানা না জানা শত পিঠার সমাহার। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে শুরু হয়েছে এসকল পিঠার দাম। দর্শনার্থীদের প্রায় প্রত্যেকেই ব্যস্ত বিভিন্ন পিঠার স্বাদ নিতে। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান ও রেজওয়ান। পিঠার স্বাদ তাদেরকে দ্বিতীয়বারের মতো টেনে এনেছে পিঠা উৎসবে। তারা জানান, পিঠা উৎসবে এটা আমাদের দ্বিতীয়বারের মতো আসা। এর আগেও এসেছিলাম। ৫-৭ রকমের পিঠার স্বাদ নিয়েছি। প্রত্যেকটি পিঠাই খুব মজাদার। সামনের দিনে আবারও আসার কথা জানান এ যুগল। অভিন্ন অনভূতি ব্যক্ত করেছেন দর্শনার্থী নেহা, মীম ও মিতুরাও। পিঠা মেলায় জ্যোতি বাহারি ফুড, রানী পিঠা ঘর, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা ঘরসহ রয়েছে আরও অনেক পিঠা ঘর। আর এতে অংশগ্রহণকারী অনেক নারী উদ্যোক্তাদের প্রত্যেকটি স্টলে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিপুল পরিমাণ ক্রেতার সমাগমে মুগ্ধ স্টল আয়োজকরাও। রানী পিঠা ঘরের মালিক রানী জানান, প্রতিদিনই হাজারো দর্শনার্থী আসছেন মেলায়। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি করছেন তিনি। এছাড়াও প্রতিদিন বাইরে থেকেও পিঠার অর্ডার পান তিনি। আয়োজকদের সার্বিক সহযোগিতা ও দর্শনার্থীদের আগমনে পিঠা উৎসব সত্যিকারের উৎসবে পরিণত হয়েছে বলে জানান তিনি। থিম ওমর প্লাজার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে. এম. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিগত বছরে আয়োজিত পিঠা উৎসবে নগরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার প্রেক্ষিতেই এবারও পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি। প্রায় সকল বয়সী মানুষ মেলায় আসছেন। তবে তরুণদের আনাগোনা বেশি রয়েছে। বাঙালী সংস্কৃতির এই বিশেষ উৎসবটা তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই থিম ওমর প্লাজার এই আয়োজন বলে জানান তিনি।
×