ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ

ক্রিকেট মাঠের সীমানা পেরিয়ে রাজনীতির আঙ্গিনায় পা রেখেই সরাসরি নির্বাচিত সাংসদ। আর গল্পের নায়ক যখন মাশরাফি বিন মর্তুজা তখন তা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠবে- এটাই স্বাভাবিক। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া মাশরাফি চর্চায় বুঁদ গোটা বাংলাদেশ। তবে এমন ঘটনা নতুন নয় দক্ষিণ এশিয়ায়। এর আগেও ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের দেখা গেছে রাজনীতির ময়দানে। ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতিতে পা রাখা এমন কিছু তারকা ক্রিকেটারের কথা জানাচ্ছেন-আকিল জামান ইনু ইমরান খান নিজের সময়ে তাকে বলা হতো-চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস্। গতি আর বিষাক্ত সুইং ছিল তার প্রধান অস্ত্র। তখন ভাবা যায়নি একদিন এই ইমরান খান রাজনীতির ময়দানেও মাঠের ভেল্কি দেখাবেন। ১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জেতা পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ইমরান খান। ১৯৯৬ সালে যোগ দেন রাজনীতিতে। গঠন করেন রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। প্লেবয় ইমেজধারী ইমরান খান রক্ষণশীল পাকিস্তানের রাজনীতিতে কতটা সফল হবেন সে প্রশ্ন ছিল সব সময়ই। উত্তরটি আজ সবার জানা। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সন্দেহাতীতভাবেই ক্রিকেটারদের মধ্যে রাজনীতিতে সবচেয়ে সফল ইমরান খান। অর্জুনা রানাতুঙ্গা বলা যায় তার নেতৃত্বে খুব সাধারণ একটি দল থেকে শ্রীলঙ্কা পরিণত হয় অপ্রতিরোধ্য এক দলে। তার হাত ধরেই নতুন যুগে প্রবেশ করে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট। শ্রীলঙ্কার ১৯৯৬ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়ী দলের অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। অবসর গ্রহণের পর তিনি লঙ্কান বোর্ডের নানা দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি। যোগ দেন শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টিতে। সে বারই কলম্বো থেকে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। পরে শিল্প, পর্যটন ও বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এখন তিনি বন্দর ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী। সন্ত জয়াসুরিয়া এই বাহাতি হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান যতক্ষণ ক্রিজে থাকতেন ব্যাটিং ব্যাকরণের সব বই শিকেয় তুলে রাখা ছাড়া কোন উপায় ছিল না ক্রিকেট বোদ্ধাদের। পিঞ্চ হিটিং দিয়ে বদলে দিয়েছেন ক্রিকেটের চালচ্চিত্র। ব্যক্তিগত জীবনে নম্র-ভদ্র জয়সুরিয়াকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না নিজের দিনে খুনে মেজাজের এই ভদ্র লোকটি কতটা আতঙ্ক ছড়াতে পারেন প্রতিপক্ষ বলারের হৃদয়ে। সন্ত জয়াসুরিয়া সর্বকালের সেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারদের একজন। মাশরাফির আগে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি খেলোয়াড় থাকা অবস্থাতেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। ২০১০ সালে তিনি মাতারা’র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। মাহিন্দা রাজাপাকশে’র মন্ত্রিসভায় উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। কীর্তি আজাদ বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতাধর রাজনীতিক ভগবত ঝা আজাদের পুত্র কীর্তি আজাদ। তিনি যখন ভারতীয় ক্রিকেট দলে সুযোগ পান তা নিয়ে জল ঘোলা হয়েছে বিস্তর। ছিদ্রান্বেষীরা এমনকি তার বাবার প্রভাবেকর কথাও বলেছে। তবে শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে নিজের যোগ্যতা মাঠেই প্রমাণ করেছেন তিনি। কীর্তি ভগবত ঝা আজাদ ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত ভারতের হয়ে ক্রিকেট খেলেছেন। ভারতের ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী দলেও ছিলেন কীর্তি। অবসর গ্রহণের পর যোগ দেন রাজনীতিতে। সেখানেও সহজাত দক্ষতায় মিলিয়েছেন রাজনীতির জটিল সমীকরণ। তৃতীয়বারের মতো তিনি এখন লোকসভার নির্বাচিত সদস্য। নভোজিৎ সিং সিধু হালে টিভি পর্দায় নিত্য নতুন সায়েরি নিয়ে হাজির হওয়া, অথবা কৌতুকে হাসিবর ঝর্ণা বয়িয়ে দেয়া সিধু’র ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। খেলোয়াড়ি জীবনেও নানা কারণে ছিলেন আলোচিত। বেফাঁস কথাবার্তায় জুড়ি ছিল না কখনই। ২০০৪ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপির হয়ে অমৃতসর থেকে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন। জিতেও যান। ২০১৬ সালে তিনি দল থেকে রাজ্যসভার জন্য মনোনীত হলেও বিজেপি ত্যাগ করেন। উপমহাদেশের দল বদলের সংস্কৃতি বজায় রাখতেই বোধ করি ২০১৭ সালে যোগ দেন কংগ্রেসে। তবে এবারও ভোটাররা তাকে খালি হাতে ফেরাননি। পূর্ব অমৃতসর থেকে নির্বাচনও জেতেন। মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন অভিষেকেই রেকর্ড গড়ে ভারতের এই সাবেক অধিনায়কের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৮৪ সালে। রেকর্ডের কারণে ব্যাংকের কেরানি থেকে হয়ে গেলেন অফিসার। সেই উত্থানের শুরু। ক্রিকেট মাঠে ছিলেন ব্যাটিং-এর নিপুণ শিল্পী। ভারতের অধিনায়ক হিসেবে তার অর্জনও কম নয়। তবে মাঠের বাইরের নানা কারণে উঠে এসেছেন বিতর্কের কেন্দ্রে। ২০০৯ সালে তিনি ভারতের রাজনৈতিক দল কংগ্রেসে যোগ দেন। উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিনোদ কাম্বলি শচীন টেন্ডুলকরের স্কুলের বন্ধু বিনোদ কাম্বলি। প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন স্কুল ক্রিকেটে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। যতটা আলো ছড়িয়ে শুরু করেছিলেন শেষটা অত ভাল হয়নি। তারপরও তাকে বলা হয় ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম বর্ণিল চরিত্র। নিজে ভারত দলে খেলতেন মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। বলিউডে অভিনয়ও করেছেন। পরে লোক ভারতী পার্টিতে যোগ দেন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে মুম্বাইয়ের ভিখরোলি থেকে অংশ নিয়ে হেরে যান। মনসুর আলী খান পতৌদি বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সম্মানিত নাম। নবাব পতৌদিক নামে সমাধিক পরিচিত। নিজের সময়ে তিনি ছিলেন ভারতের অন্যতম কাক্সিক্ষত ব্যাচেলর। কেবল ভারতের নয় তাকে বলা হয় বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা অধিনায়কদের একজন। তার সময়ে মাঠের সেরা ফিল্ডারও ছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে ভোপাল থেকে কংগ্রেসের হয়ে জাতীয় নির্বাচনেও লড়েন তিনি। তবে জিততে পারেননি সে নির্বাচনে। মাঠ এবং মাঠের বাইরে আত্মসম্মান বোধের প্রতীক হয়ে বেঁচে ছিলেন শেষ পর্যন্ত। নাঈমুর রহমান দুর্জয় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। যে ক’জনের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট বর্তমান অবস্থানে এসেছে তিনি তাদের একজন। এখন তিনি পুরোদস্তর রাজনীতিক। খেলার মাঠের মতোই রাজনীতেও সমান সফল। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে সাফল্য ধরে রেখেছেন। মাশরাফি বিন মর্তুজা মাশরাফি নামটি উচ্চারিত হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হার না মানা মানসিকতা আর চোয়াল চাপা জেদ নিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়া এক তরুণের ছবি। তার দেশপ্রেম রীতিমতো উদাহরণ। জয়সুরিয়ার পর মাশরাফিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি খেলা অবস্থাতেই প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। নড়াইল-২ আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বাংলাদেশী ক্রিকেটের এই আইকন।
×