ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নূর ইসলাম হাবিব

‘সোর্ড অব অনার’ পেলেন ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদ

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

‘সোর্ড অব অনার’ পেলেন ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদ

বাংলাদেশে নারীর অগ্রযাত্রায় একটি উজ্জ্বলতম নাম ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদ। তিনি বাংলাদেশের সামরিক ইতিহাসে প্রথম নারী পাইলট যিনি প্রশিক্ষণকালে সার্বিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠ কৃতিত্বের জন্য সোর্ড অব অনার লাভ করেন। এটি সামরিক বাহিনীর প্রাক কমিশন প্রশিক্ষণকালীন সর্বোচ্চ সম্মান ও গৌরবের প্রতীক। কোর্সের সর্বশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট ক্যাডেটকে সোর্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদ গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে ৭৫ নং বাফা কোর্সে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে জিডি (পি) শাখায় নারী বৈমানিক হিসাবে কমিশন লাভ করেন। এদিন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে প্রশিক্ষণে সেরা চৌকস কৃতিত্বের জন্য এক বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সোর্ড অব অনার প্রদান করেন। সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিতে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদ বলেন, সামরিক বাহিনীতে একাডেমির দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সের সবচাইতে সম্মান ও গৌরবের প্রতীক সোর্ড অব অনার পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে বিএএফ একাডেমিতে আমার সিনিয়রদের স্মরণ করছি যারা আমাকে প্রশিক্ষণকালে প্রতিটি বিষয়ে হাতে কলমে শিখিয়েছেন। সেই সঙ্গে আমি আমার দক্ষ প্রশিক্ষকগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যারা তাদের ঐকান্তিক চেষ্টা ও আন্তরিকতা সহকারে আমাকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হয়ে ওঠার ব্যাপারে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। সর্বোপরি মহান আল্লাহ তায়ালা ও আমার বাবা-মায়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার প্রতি বাবা-মায়ের অনেক শ্রম ও আল্লাহ্র দয়ায় আমি আজ এই বিরল সম্মানের অধিকারী হয়েছি। তা ছাড়া, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। কেননা তিনিই সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের যোগদানের সুযোগ করে দিয়েছেন। দীর্ঘ তিন বছরের কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার পরে বিমান বাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্তিতে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে রিয়ানা আজাদ বলেন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটি দক্ষ, আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর সুশৃঙ্খল বাহিনী। বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার দৃপ্ত প্রত্যয়ে উজ্জীবিত এই বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হতে পেরে আমি গর্বিত। ছোট বেলা থেকে নীল আকাশে উড়ন্ত বিমান দেখে মনের কোণে উঁকি দিয়েছিল আকাশে ওড়ার স্বপ্ন। আজ সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করায় আমি সত্যি আনন্দিত। এক প্রশ্নের জবাবে ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদ বলেন, বিমানবাহিনী একাডেমিতে একজন প্রশিক্ষণার্থীকে সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভবিষ্যতের একজন সুনাগরিক সর্বোপরি ভাল মানুষ হওয়ার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ‘উরংপরঢ়ষরহব, ওহঃবমৎরঃু ধহফ ঊীপবষষবহপব রহ ধষষ বি ফড়’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে একজন সৎ, নির্ভীক ও পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এই একাডেমির রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। এই একাডেমির সার্বিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আমি মুগ্ধ। ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তারা তিন ভাই-বোন। তিনি সবার বড়। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকা মহানগরীতে। গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। লেখাপড়া করেছেন উত্তরা রাজউক মডেল কলেজে। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন যথাক্রমে ২০১৩ ও ২০১৫ সালে। উভয় পরীক্ষায় ফলাফল জিপিএ-৫। তা ছাড়া রিয়ানা জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য মেধাবৃত্তি লাভ করেন। একাডেমিক লেখাপড়া শেষে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি ফ্লাইট ক্যাডেট হিসেবে বিএএফ একাডেমিতে যোগদান করেন। তার ছোট ভাই নটর ডেম কলেজে অধ্যয়ন করছে। ছোট বোন চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। রিয়ানা আজাদের বাবা মো. আবুল কালাম আজাদ পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি করছেন কুয়েত এয়ার ওয়েজে। মা তাসলিমা আক্তার গৃহিণ ী। রিয়ানার বাবাও তার মেয়ের অসামান্য সাফল্যে গর্বিত। তিনি বাংলাদেশের মেয়েদের সামরিক পেশায় যোগদানের সুযোগ করে দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। তা ছাড়া তিনি আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া জানান। তিনি বলেন, রিয়ানা ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী ও আন্তরিক ছিল। ওর লেখাপড়ার প্রতি আমরা খেয়াল রাখতাম। রিয়ানার মা বলেন, মা হিসাবে আমি আমার মেয়ের সাফল্যে অবশ্যই গর্বিত। আমার মেয়ে যখন প্রশিক্ষণে যায় তখন আমি আমার অজান্তেই বলে ফেলেছিলাম , ‘তুই সোর্ড অব অনার পাবি।’ এ কথাই আজ সত্যি সত্যি ওর জীবনে বাস্তবায়িত হয়েছে যা আমার জন্য খুবই আনন্দের এবং গৌবরের। যারা এ পেশায় আসতে চায় তাদের উদ্দেশে ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা বলেন, বর্তমানে বিমান বাহিনীতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলা কর্মকর্তা রয়েছে। একজন-দুইজন করে মহিলা বৈমানিকের সংখ্যাও বাড়ছে। তাই যারা এ পেশায় আসতে চায় তাদের জন্য বিমান বাহিনী একটি নির্ভরযোগ্য কর্মক্ষেত্র। পরিশ্রম, মেধা এবং ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কোন ক্ষেত্রেই সাফল্য লাভ করা যায়। আর ছেলেমেয়েকে আলাদা হিসাবে না দেখে নিজেকে একজন ব্যক্তি হিসাবে দেখলে কোন বাধাই আর বাধা মনে হবে না । এভাবেই নারীরা এগিয়ে যাবে অদম্য গতিতে।
×