ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তৌফিক অপু

সময়ের উৎকর্ষে বর্ষবরণ

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

সময়ের উৎকর্ষে বর্ষবরণ

দিন-ক্ষণ মাস গুনতে গুনতে শেষ হলো একটি বছর। নতুন বছরকে এরই মধ্যে বরণ করেছে সবাই। সেই সঙ্গে প্রত্যাশা পুরনো গ্লানি মুছে সবকিছু যেন নতুন হয়ে ধরা দেয় সবার কাছে। দূর হয়ে যাক সকল অপশক্তি ও জরাজীর্ণতা। পুরনো বছরে যা অর্জিত হয়নি তা যেন নতুন বছরে এসে পূর্ণতা পায় সে প্রত্যাশাতেই দিন গুনছে সবাই। জীবন থেকে একটি বছর চলে গেলেও নাড়া দিয়ে যায় জীবনকে। প্রতিটি ঘাত-প্রতিঘাতে যে শিক্ষা অর্জিত হয় তা সামনের জীবনের জন্য, বছরের জন্য পাথেয় হয়ে ধরা দেয়। বছরের প্রতিটি দিন-ক্ষণ থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে থাকে সবাই। বছরের শেষ প্রান্তে এসে মূল্যায়ন করার চেষ্টা চলে কী পেলাম আর কী পেলাম না। তবে না পাওয়ার হতাশায় পোড়ার চেয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে তা অর্জন করার নামই জীবন। এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। বিদায়ী বছরের বিষণ্ণতাকে ছাপিয়ে মনকে উৎফুল্ল করে তোলে নতুন বছরের আগমনী বার্তা। ক্যালেন্ডারের শেষ পাতাটি ছিঁড়ে একসঙ্গে উচ্চারিত হয় হ্যাপি নিউ ইয়ার। নতুন দিনের সূচনা, নতুন করে পথচলা। নতুন প্রাণচাঞ্চল্য, নতুন শপথ সব কিছুই যেন একাকার হয়ে দেখা মেলে বছরের প্রথম দিনটিতে এসে। অতীতকে মুড়িয়ে দিয়ে নতুন এক সময়কে বরণ করে নেয়ার শিহরণই যেন অন্যরকম। প্রতি মুহূর্তেই চলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার প্রস্ততি। বন্ধু প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে শুরু নতুন বছরের দিন। পুরনো গ্লানি মুছে নতুনভাবে বাঁচার প্রত্যয়ে শুরু হয় নববর্ষ। যে কারণে উন্মাদনাও একটু বেশি থাকে নববর্ষকে ঘিরে। বিভিন্ন উৎসব পার্বণের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় হয় নতুন বছরকে। ইংরেজী নববর্ষ পালনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎসব হচ্ছে থার্টি ফাস্ট নাইট। বছরের শেষ এ দিনটিতে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় নববর্ষের উৎসব। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সুর ও সঙ্গীতের মূর্ছনায় মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। আতশবাজির আলোকচ্ছটায় ছেয়ে যায় আকাশ। শুরু হয় প্রিয়জনদের শুভেচ্ছ বার্তা পাঠানো। একে অপরকে উপহার আদান-প্রদানের মাধ্যমে বরণ করে নেয় নতুন বছর। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই পালন করে হয়ে থাকে ইংরেজী নববর্ষ। ঋতুর পালা বদলে বইছে কনকনে হাওয়া। শীতের আমেজ বিরাজ করছে। আর এ সময়টাতে চারদিকে উৎসবের আমেজ পাওয়া যায়। পারিবারিক, সামাজিক কিংবা ধর্মীয় যে কোন উৎসবই এ মৌসুমে এসে যেন অন্য রকম আবহ সৃষ্টি করে। বাঙালীর ইতিহাস ঐতিহ্য হাজার বছরের। বারো মাসে তেরো পার্বণে অভ্যস্ত বাঙালী জাতি খুবই উৎসবপ্রিয়। যে কারণে নিজস্ব উৎসব ছাড়াও অন্যের উৎসবেও রং ছড়াতে দ্বিধাবোধ করে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ জাতি ইংরেজী নববর্ষ পালন করে থাকে বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে। প্রিয়জনকে ফুল, মিষ্টি আর কার্ড আদান-প্রদানের মাধ্যমে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। গান, আলাপচারিতা, উপহার আদান-প্রদান আর ঘুরে বেড়ানো ট্র্যাডিশন এখন এদেশেও চালু হয়েছে। গ্রাম-বাংলার কিছু অঞ্চলে বাঙালীর নিজস্ব ক্যালেন্ডার ফলো করা হলেও সমাজ রাষ্ট্রের সব কাজ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে অনুসরণ করে করা হয়ে থাকে। কারণ ইংরেজী নববর্ষ আমাদের জীবনে ওতপ্রোতোভাবে জড়িত। পাশ্চাত্য থেকে এ প্রথা চলে এলেও এখন অনেকটাই বাঙালী রীতিতে পরিণত হয়েছে নববর্ষ পালন। সময়ের পরিক্রমায় পাল্টিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার ধরন। বর্ষবরণে নতুনত্ব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাপ খাইয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে ঘরে বসেই জেনে নেয়া যায় কখন, কোথায়, কী হচ্ছে। সেই ছোঁয়া পরিলক্ষিত হয় জীবনযাপনে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় কিছুদিন আগেও ইংরেজী নববর্ষ পালিত হতো পরিবারকেন্দ্রিক। অর্থাৎ ইংরেজী নববর্ষের আগের দিন থার্টিফাস্ট নাইটে প্রত্যেক পরিবার রাত জেগে অনেকটা পিকনিকের মতো আয়োজন করত। রাত বারোটা বাজলেই একে অন্যেকে উইশ করত। আমেজ তেমন থাকলেও এর সঙ্গে আস্তে আস্তে অনেক আনুষ্ঠানিকতা যোগ হতে থাকে। এই বর্ষবরণ আয়োজন ধীরে ধীরে পরিবারের গ-ি পেরিয়ে এলাকা বা মহল্লায় বিস্তৃত হয়ে পড়ে। রান্নার আয়োজনের সঙ্গে যোগ হয় মিউজিক। রীতিমতো সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করে বাজানো হতো নিজদের পছন্দমতো গান। তবে ব্যান্ডসঙ্গীতই এ তালিকায় সব সময়ই এগিয়ে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, সন্ধ্যা হতেই মুখর থাকত গানে। সে ধারাবাহিকতায় যোগ হলো আতশবাজি। রাত বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সমস্বরে হ্যাপি নিউ ইয়ার বলে ফোটাতে থাকে আতশবাজি। রঙিন হয়ে ওঠে উৎসবের আকাশ। পাড়া-মহল্লা ছাড়িয়ে উৎসবের আমেজ ছড়াতে থাকে দেশের প্রতিটি কোনায়। তারুণ্যের জয়গানে মেতে থাকে একটি রাত। বেশ কয়েক বছর ধরেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে আতশবাজির সঙ্গে উড়ছে ফানুস। ছাদে ছাদে লাইটিং শো। উৎসব পালনে নানা সময় নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এর রেশ কখনও ম্লান হয়েনি বরং দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে এর দীপ্তি। উপহার আদান-প্রদানে ভিন্নতা একটা সময় ছিল যখন নিউ ইয়ারকে কেন্দ্র করে গ্রিটিংস কার্ডের কদর বেড়ে যেত। আর্চিজ, হলমার্কগুলোর ঘাম ঝরে যেত নিউ ইয়ার কার্ড বিক্রি করতে করতে। এলাকার লাইব্রেরিগুলোও এ সুযোগ হাতছাড়া করত না। নানা রঙ্গের নিউ ইয়ার কার্ডে সাজিয়ে রাখত এ সময়টাতে। সঙ্গে যোগ হতো গোলাপ, বেলি, গাজরা কিংবা রজনীগন্ধার সমাহার। এই তো কিছুদিন আগের কথা, নিউ ইয়ার মানেই ফুল আর গ্রিটিংস কার্ড উপহার দেয়া। আরেকটা উপহার বেশ জনপ্রিয় ছিল। সেটা হচ্ছে যার যার পছন্দের শিল্পীর গানের এ্যালবাম। এখন যেহেতু এ্যালবামের চল নেই তাই আর গানের এ্যালবাম উপহার দেয়া হয় না। সেই গান এখনও উপহার দেয়া হয় তবে একটু ভিন্নভাবে। এমপি থ্রি কিংবা ফোর ভার্সনে গান উপহার দেয়া নেয়াও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তবে প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের কারণে সেসবও এখন নিকট অতীত। পাল্টে গেছে উপহার দেয়ার ধরন। এখন বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা বুঝে দেয়া হয় উপহার। যেমন যে বন্ধু ভ্রমণপিপাসু তাকে উপহার দেয়া হয় সানগ্লাস, জিপিএস সিস্টেম কিংবা পোর্টেবল তাঁবু। যিনি স্বাস্থ্যসচেতন তাকে উপহার দেয়া হয়, ওয়েট মেশিন, ডায়েট চার্ট, ব্যায়ামের বই কিংবা ইয়োগা ম্যাট। বই মানুষের পরম বন্ধু। তাই বই পড়তে পছন্দ করেন না এমন লোক খুব কমই আছে। তাদের ক্ষেত্রে দেশ-বিদেশের উল্লেখযোগ্য লেখকদের বই, ই-বুক রেজিস্ট্রেশন ফি অথবা দামী ম্যাগাজিনের সাবস্ক্রিপশন ফি উপহার দেয়া দারুণ মানানসই। বিভিন্ন গ্যাজেটের মধ্যে পেনড্রাইভ, হার্ডডিস্ক, ট্যাব, ব্লু টুথ, মিনি সাউন্ড সিস্টেম, চাবির রিং কিংবা ডিজিটাল ক্যালেন্ডার বেশ জনপ্রিয়। যারা কেনাকাটা করতে পছন্দ করে তাদের জন্য বিভিন্ন শোরুমের গিফট ভাউচার কিংবা ফুড কুপন হতে পারে উত্তম উপহার। এছাড়া ছবিসহ মগ কিংবা ডিজিটাল ফটো এ্যালবামও এখন উপহার তালিকায় শীর্ষে। উপহারের এমন বৈচিত্র্যতা কিছুদিন আগেও এত চোখে পরত না। কিন্তু মানুষ দিন দিন শৌখিন হয়ে ওঠাতে পাল্টে গেছে উপহারের ধরন। তাই নিউ ইয়ার আসলে গিফট শপগুলো ব্যস্ত থাকে রুচিশীল মানুষদের রুচি অনুযায়ী উপহারের পসরা সাজাতে। তবে এখনও অনেকে নিজ হাতে উপহার তৈরি করে বন্ধুকে দিতে ভালবাসেন। আর এ আবেদন যেন কখনও ফুরাবার নয়। উপহার হিসেবে পোশাক পোশাক উপহার দেয়া এখন দারুণ এক ট্রেন্ড। ঈদ পূজা ছাড়া একটা সময় পোশাক উপহার দেয়ার প্রথা ছিল না। কিন্তু এখন নববর্ষকে উপজীব্য করে প্রচুর পোশাক কেনা কাটা হয়ে থাকে। সময়ের পরিক্রমায় সমৃদ্ধ হচ্ছে আমাদের ফ্যাশন ট্রেন্ড। এ সমৃদ্ধতা ধরে রাখার দায়িত্ব সবার হলেও ব্যবসায়ীদের একটু বেশিই সচেতন হতে হবে। আমাদের দেশের বড় একটা সমস্যা হলো ক্রেতাদের চাহিদা, রুচি ও মননকে প্রাধান্য না দিয়েই স্রোতের টানে গা ভাসিয়ে দিয়ে ফ্যাশন ট্রেন্ডে কিছু চাপিয়ে দেয়া। যার প্রভাব ক্রেতাদের দেশান্তরী হওয়া। ক্রেতারা এখন অনেক সচেতন। যেনতেন বুঝিয়ে তাদের আর বোঝানো যাবে না। তাই দেশীয় ঐতিহ্য এবং ফ্যাশন ট্রেন্ডকে মজবুত রাখতে সচেতনতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। তবেই দিনে দিনে সমৃদ্ধ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক আমাদের ফ্যাশন ট্রেন্ড সে প্রত্যাশাই রইল। সাজসজ্জা একটা সময় ছিল বিয়েশাদি কিংবা বড় ধরনের কোন পার্টি ছাড়া মানুষ তেমন একটা পার্লারে যেত না। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে মানুষ এখন অনেকটাই রূপসচেতন। নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখতে বা ফিট থাকতে এখন প্রতিনিয়ত ছেলে মেয়ে সবাই জেন্টস কিংবা লেডিস পার্লারে ভিড় জমায়। বিভিন্ন সময়ে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও বড় একটা সময় পার্লারের পেছনে ব্যয় করে থাকে। ভেরিয়েশন এসেছে হেয়ার স্টাইল এবং সাজসজ্জায়। সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যতা লক্ষ্য করা গেছে পার্টি মেকআপে। এছাড়া নিউ ইয়ার উপলক্ষে বিভিন্ন পার্লারগুলো রেখেছ আকর্ষণীয় সব অফার। ক্রেতাদের চাহিদা ও রুচি মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির যুগে মানুষ খুব সহজেই জেনে যাচ্ছে কোন্ দেশে কখন, কোন্ ফ্যাশন ট্রেন্ড চালু হয়েছে। কখন, কোন্ ধরনের ড্রেসের চল খুব বেশি। সে কারণেই বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের ফ্যাশন ট্রেন্ডকেও। তবে এ বছর একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে দেশীয় ব্যবসায়ীদের মনে। বর্তমানে অনেক ক্রেতাই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যাচ্ছে শপিং করতে। কারণ হিসেবে জানা যায়, একই ধরনের পণ্য ওসব জায়গায় নাকি অনেক কম দামে পাওয়া যায় এবং গুণগত মানও নাকি ভাল এবং দামের তফাত নাকি দ্বিগুণেরও বেশি। যে কারণে অনেকেই সে সব দেশে গিয়ে শপিং করতে কমফোর্ট ফিল করছে এবং দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলছে। এখনও সময় আছে পণ্য ও দামের সমন্বয় করে দেশীয় পোশাক শিল্পের পরিবর্তন ও পরিমার্জন সাধন করা। প্রয়োজন হলে সরকারের সহায়তা নেয়া উচিত। তা না হলে অচিরেই দেশীয় ক্রেতাদের বড় একটি অংশ হারিয়ে যেতে পারে। অনলাইন শপিং বছরজুড়ে অনলাইন শপিং সাইট বেশ বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করেছে ফ্যাশন ট্রেন্ডে। অনেকেই এখন ঘরে বসে কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। যার ফলে প্রচুর অনলাইন সাইট তৈরি হয়েছে। তবে এর পরিমাণ এত বেশি হয়েছে যে অনেক ক্রেতা তাদের মাধ্যমে প্রতারিতও হয়েছেন। এর লাগাম এখনই টেনে ধরা উচিত। না হলে ক্রেতারা বিমুখ হতে পারে। থার্টি ফাস্ট নাইট প্রসঙ্গ ইংরেজী নববর্ষের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান হয়ে থাকে বছরের শেষ দিনটিতে। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই মুখর হয়ে ওঠে পুরো বিশ্ব। সমস্ব^রে চিৎকার করে ওঠে হ্যাপি নিউ ইয়ার বলে। ঘুম ভাঙ্গা মানুষেরা জড়ো হয় নতুন অভিযাত্রা, নতুন রূপান্তরের তাগিদে। গেয়ে ওঠে নববর্ষের গান। আমাদের দেশে ইংরেজী নববর্ষের দিন সরকারী ছুটি না থাকলেও অন্যান্য দেশে রয়েছে। কারণ থার্টি ফাস্ট নাইট এত বেশি উৎসবের মেজাজে থাকে যার ফলে পরের দিন কর্মব্যস্ত মুড আর আসে না। আমাদের দেশেও থার্টি ফাস্ট নাইট জাতীয়ভাবে পালন করা না হলেও পাড়ায় পাড়ায় কিংবা মহল্লায় বেশ জাঁকজমকভাবেই তা পালন করা হয়। তবে থার্টি ফাস্ট নাইট পালন নিয়ে বেশ ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে এদেশের তরুণ-তরুণীরা। তারা থার্টি ফাস্ট নাইট পালনের নামে সৃষ্টি করে বিশৃঙ্খলা আর অরাজকতা। অনেক সময় নৈতিকতার অবক্ষয়ের প্রমাণ মেলে অথচ যেসব দেশে ঢাকঢোল পিটিয়ে থার্টি ফাস্ট নাইট জাতীয়ভাবে পালন করা হয় সেসব দেশেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় না। আর আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর মাথার ঘাম পায়ে পড়ার জোগাড়। থার্টি ফাস্ট নাইটের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী বোদ্ধাদের মতে, এদেশে থার্টি ফাস্ট নাইট ভুল ব্যাখ্যায় পালিত হয়। এ্যালকোহল কিংবা মাদকের নেশায় ডুবে হৈ-হুল্লোড় করাই বুঝি থার্টি ফাস্ট নাইট। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও তা নয়। শীতপ্রধান দেশে এ্যালকোহল অনেকটা পানি খাওয়ার মতোই স্বাভাবিক। ওরা এটাতে অভ্যস্ত এবং এর জন্য ওরা জ্ঞানহীন কোন কাজ করে বসে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে খাওয়া-দাওয়া, গান গাওয়া, উপহার আদান-প্রদান করা কিংবা ড্যান্স পার্টিতে এ্যাটেন্ড করা পর্যন্তই। যা তাদের কালচারে খুবই মানানসই। আমাদের দেশেরও নিজস্বতা আছে। আমরাও আমাদের মতো করে উদ্যাপন করতে পারি। কিন্তু অন্যেরটা ধার করতে গিয়েই বাধিয়ে ফেলি বিপত্তি। একটি বছরের বিদায় আর নতুন বছরের আগমন সত্যিকার অর্থেই জীবনযাপনে প্রভাব ফেলবে। বিষাদের গ্লানি দূর করে নতুনকে স্বাগত জানানোর উন্মাদনা থাকবেই। সেটা উপহার আদান-প্রদান, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করে, গান গেয়ে কিংবা বর্ষ বিদায় ও স্বাগত অনুষ্ঠান করে এবং পরিবার-পরিজনকে ভাল সময় উপহার দিয়ে পালন করা যেতে পারে। কিন্তু খারাপ কোন পন্থায় যা দৃষ্টিকটু এমন কিছু দিয়ে বর্ষবরণ কখনই হতে পারে না। এতে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর চেয়ে অপমানই করা হয়। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই থার্টি ফাস্ট নাইট নিয়ে অনেক উন্মাদনা থাকে কিন্তু এর মধ্যেও থাকে নির্মলতা। কখনই থার্টি ফাস্ট নাইট নিয়ে কোন দুর্ঘটনা বা দুর্নাম পাওয়া যায়নি অথচ আমাদের সমাজে থার্টি ফাস্ট নাইটে কোন না কোন দুর্নাম কিংবা দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ নির্মল আনন্দ যেন খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে মানুষ এখন অনেক সচেতন। যে কারণে এদেশের বিভিন্ন জায়গায় নির্মল আনন্দের থার্টি ফাস্ট নাইট অনুষ্ঠানের দেখা মেলে। বিশেষ করে ঢাকা শহর এখন ফ্ল্যাটের শহর বলা যায়। একই ছাদের নিচে অনেক ফ্ল্যাট। এই ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা মিলে থার্টি ফাস্ট নাইটে একসঙ্গে ডিনারের মাধ্যমে উদ্যাপন করে থাকে। কর্মব্যস্ত জীবনে ফ্ল্যাটের সবার সঙ্গে দেখা হওয়া এবং আলাপচারিতার গুঞ্জনমুখর এ সময়টিই বা কম কী। শুভ কামনা ও শুভেচ্ছা একটি বছর গড়িয়ে আরেকটি বছর শুরু হয়। গত বছরের সব ব্যর্থতাকে মুছে দিতেই নতুন বছরের আগমন ঘটে এটাই আমাদের বিশ্বাস। দেশের মঙ্গল কামনা কিংবা নিজেদের মঙ্গল কামনা যাই বলি না কেন এ যেন সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির জন্যই। হাতে হাত ধরে সুন্দর একটি বছর পার করা, সাফল্যের ঝুড়ি প্রসারিত করা, বিশ্বের মানচিত্রে সফল দেশের একটি হিসেবে নিজের দেশকে তুলে ধরাই সবার কাম্য। আমাদের ছোট এ দেশ। আমাদের অবহেলাতেই নষ্ট করে ফেলছি। নতুন বছরের দৃঢ প্রত্যয় হওয়া উচিত আমাদের এ হাত দিয়েই যেন দেশের মঙ্গলবারতা বয়ে নিয়ে আসতে পারি। একেকটি বছর এখন থেকেই যেন আমাদের সফলতার বছর হয় সে লক্ষ্যেই দেশের প্রতি নিবেদিত হওয়া উচিত। আমাদের সফলতার বার্তা ও নতুন বছরের শুভেচ্ছা আমরাই পৌঁছে দেব বিশ্ববাসীকে আর চিৎকার করে বলব- শুভ হোক নতুন বর্ষ। শুভ নববর্ষ।
×