ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় ক্লাবের লক্ষ্য- প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

ছয় ক্লাবের লক্ষ্য- প্রস্তুতি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আজ থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলের জমজমাট লড়াই। এর আগে দৈনিক জনকণ্ঠে সাত ক্লাবের লীগের প্রস্ততি ও লক্ষ্য নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আজ প্রকাশিত হলো বাকি ছয় ক্লাবের পর্ব। ব্রাদার্স ॥ এই লীগগুলোর মধ্যে প্রিমিয়ার ডিভিশন লীগ জয়ের সৌভাগ্য আছে একসময় ঢাকার ফুটবলে ‘ত্রিশক্তি’র এক শক্তি ব্রাদার্স ইউনিয়ন লিমিটেড। তারা লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০০৪ ও ২০০৫ সালে, টানা দু’বার। এরপর কেটে গেছে এক যুগেরও বেশি সময়। কিন্তু ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েনি গোপীবাগের দলটির। তবে সোনালি অতীত নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বর্তমান নিয়ে বেশি ভাবছে তারা। সার্বিকভাবে তৃতীয়বার এবং প্রথম বিপিএল শিরোপার স্বপ্ন দেখছে তারা। সেজন্য ফিটনেস আর টিম ওয়ার্কে গুরুত্ব দিচ্ছেন ভারতীয় কোচ সৈয়দ নাঈমউদ্দিন। ম্যানেজমেন্টকে আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে গত স্বাধীনতা কাপের পারফর্মেন্স। বড় তারকা নেই দলে। তারপরও মান্নাফ রাব্বি, ইমরুল হাসান ও সুজন চৌধুরীর মতো প্রতিশ্রুতিশীল তরুণরা আছেন। দুই ব্রাজিলিয়ান এভারটন-লিওনার্দো লিমাকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবলের ছক কষছে ক্লাবটি। সবশেষ আসরে পয়েন্ট টেবিলের সাতে থেকে লীগ শেষ করেছিল ব্রাদার্স। এ বছর অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে বদ্ধপরিকর তারা। বিজেএমসি ॥ স্বাধীনতার আগে দলটির নাম ছিল ইস্ট পাকিস্তান আইডিসি। ১৯৬৭ ও ১৯৬৮ সালে টানা দু’বার লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাক লাগিয়ে দেয় তারা। পরের বছর হ্যাটট্রিক শিরোপা জিততে না পারলেও ১৯৭০ সালে আবারও শিরোপার স্বাদ পায় তারা। স্বাধীনতার পরও দাপট মোটামুটি ধরে রাখে তারা। দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়। দলের নাম পাল্টে যায়। ১৯৭৩ সালে বিজেআইসি এবং ১৯৭৯ সালে বিজেএমসি নামে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। ১৯৮২ সালে হঠাৎ ফুটবল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় দলটি। দীর্ঘ ২৯ বছর পর ২০১১ সালে আবারও ফুটবলে ফেরে বিজেএমসি। তবে এখনও কোন শিরোপা জেতেনি তারা। আসলে শিরোপা জেতার মতো নৈপুণ্যই ছিল না তাদের। এবারের লীগে পয়েন্ট টেবিলের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকতে পারলেই তারা খুশি। কোচ জাহিদুর রহমান মিলন বলেন, ‘স্বাধীনতা কাপে ভাল খেলেও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছি আমরা। ইনজুরি সমস্যা না থাকলে এবং খেলোয়াড়রা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করতে পারলে লীগে পয়েন্ট টেবিলের মাঝামাঝি থাকতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। আমাদের দলে তরুণ খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেশি। তাদের পক্ষে দলকে সম্মানজনক ফল এনে দেয়া সম্ভব।’ বিজেএমসিতে এ মৌসুমে নবাগত খেলোয়াড় ১২ জন। উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার ওটাবেক ও ডিফেন্ডার ফুরকাত জন, নাইজিরিয়ার মিডফিল্ডার স্যামসন ইলিয়াসু এবং ক্যামেরুনের ডিফেন্ডার বেইবেক ফমবাগনেসহ দলটির চার বিদেশী আছেন। আরামবাগ ॥ আরামবাগ ক্রীড়া সংঘকে ভয় পায় না, এমন কোন বড় দল নেই! মৌসুমের প্রথম দুই টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও প্রতিপক্ষের ঘাম ঝরিয়েছে বিস্তর। দলটির সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের তারকা অভিজ্ঞ কোচ মারুফুল হক। গত মৌসুমে দায়িত্ব নিয়ে দলকে স্বাধীনতা কাপের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন। যা ঘরোয়া ফুটবলে তাদের একমাত্র ট্রফি। মারুফুলের লক্ষ্য দলকে পয়েন্ট টেবিলের সেরা পাঁচ দলের মধ্যে রাখতে। গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম হিমেল ও উইঙ্গার জাহিদ হোসেনসহ ৮ জন এবার যোগ দিয়েছেন আরামবাগে। নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড চিনেদু ম্যাথিউ ও ডিফেন্ডার কিংসলে চুকুডি, ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড পল এমিল এবং উজবেকিস্তানের ডিফেন্ডার বোবোখানভ নরমাতোভিচকে নিয়ে বিদেশী কোটা পূরণ করেছে দলটি। মোহামেডান ॥ ঢাকার ফুটবলে মোহামোন স্পোর্টিং ক্লাব এক সময় শক্তিধর ক্লাব ছিল। এখন তার ঠিক বিপরীত। অথচ পরিসংখ্যানে এখনও তারা সবচেয়ে বেশিবার লীগ চ্যাম্পিয়ন। সার্বিকভাবে তারা লীগ জিতেছে ১৯ বার (পাকিস্তান আমলসহ)। তাছাড়া স্বাধীনতার পরও তারাই জিতেছে সবচেয়ে বেশিবার লীগ, ১২ বার। তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা আবাহনী গত কয়েক বছর ধরে অনেকবারই লীগ জিতেও মোহামেডানের সমকক্ষ হতে পারেনি (১১ বার)। মোহামেডান সর্বশেষ লীগ জেতে সেই ২০০২ সালে। আর সর্বশেষ শিরোপা জেতে ২০১৪ সালে, স্বাধীনতা কাপে। এক যুগ আগে পেশাদার লীগ শুরু হলেও আজ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ঐতিহ্যবাহী দলটি। দলে তারকা বলতে তেমন কেউ নেই। জাহিদ হাসান এমিলি থাকলেও তিনি বয়সের ভারে ও অফ ফর্মের কারণে নিষ্প্রভ। বাকিদের মধ্যে মিঠুন চৌধুরী, আতিকুর রহমান মিশু, মেজবাবুল হক মানিক ও পাশবন মোল্লার মোটামুটি পরিচিতি আছে ঢাকার ফুটবলে। মৌসুমের শুরুতে ব্রিটিশ কোচ ক্রিস্টোফার ইভান্সের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন ক্লাব কর্তারা। কিন্তু ফেডারেশন কাপে ব্যর্থতার পর দেশে ফিরে যাওয়া কোচ আর আসেননি। তাই আলী আজগর নাসিরের কাঁধে মোহামেডানের প্রশিক্ষণের দায়িত্ব। দেখা যাক, এবার তিনি লীগে দলকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যান। গাম্বিয়ার মিডফিল্ডার ল্যান্ডিং ডারবো, জাপানের মিডফিল্ডার উরু নাগাতা, নাইজিরিয়ার ফরোয়ার্ড কিংসলে চিগোজি ও ডিফেন্ডার ওরিয়াকু চিটাচিকে দিয়ে বিদেশী কোটা পূরণ করেছে মোহামেডান। সাইফ ॥ গত মৌসুমেই প্রিমিয়ার লীগে অভিষেক হয় সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের। সেবার প্রিমিয়ার লীগে চতুর্থ হয়ে এএফসি কাপে খেলার সুযোগ পেয়ে চমক দেখায় তারা। তারাই দেশের প্রথম ক্লাব, যারা মৌসুম শুরুর আগে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করে দেশের বাইরে (ভারতে)। গত ফেডারেশন কাপের পর স্বাধীনতা কাপেও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে সাইফকে। যদিও মৌসুম শুরুর আগে ভারতের বদৌসা কাপের শিরোপা জেতায় আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও বেড়েছে তাদের। এরই মধ্যে আবার কোচ বদল হয়েছে সাইফের। স্টুয়ার্ট হলের জায়গায় দায়িত্ব নিয়েছেন আরেক ইংলিশ জোনাথন ম্যাককিনস্ট্রি। নতুন কোচের অধীনে শুরুটা ভাল না হলেও প্রিমিয়ার লীগ ফুটবলে ঘুরে দাঁড়িয়ে শিরোপা লড়াইয়ে থাকার লক্ষ্য তাদের। সাইফে নতুন যোগ দিয়েছেন ১৪ খেলোয়াড়। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডিফেন্ডার নাসিরুল ইসলাম, মিডফিল্ডার শাহেদুল আলম, ফরোয়ার্ড জাফর ইকবাল ও গোলরক্ষক জিয়াউর রহমান। তাদের সঙ্গে আছেন গত মৌসুমের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া, রহমত মিয়া, রহিমউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। তারুণ্য-নির্ভর এই দলটি যোগ করেছে চার বিদেশীÑ কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার দেইনের কর্দোবা, দক্ষিণ কোরিয়ান ফরোয়ার্ড সিউনগিল পার্ক, রাশিয়ার দেনিস বোলশাকোভ ও কানাডার জোনাথন কর্দোবা। চট্টগ্রাম আবাহনী ॥ পেশাদার ফুটবল লীগের শুরু থেকে খেললেও আজ পর্যন্ত শিরোপা জিততে পারেনি চট্টগ্রাম আবাহনী। একসময়ের মিডিওকার দল চট্টগ্রাম আবাহনী ‘বড়’ দল হয়ে ওঠে ২০১৫ সালে প্রিমিয়ার লীগে রানার্সআপ হয়ে। এরপর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের শিরোপা জিতে নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দেয় তারা। গত মৌসুমে লীগে তৃতীয় হয় তারা। দলে এবার একঝাঁক নতুন খেলোয়াড়। গতবারের মাত্র চার জনকে ধরে রেখেছে তারা। নতুনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গোলকিপার রাসেল মাহমুদ লিটন, ডিফেন্ডার কেষ্ট কুমার ও অরূপ কুমার বৈদ্য ও ফরোয়ার্ড আব্দুল বাতেন মজুমদার কোমল। কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু লীগে শিরোপার স্বপ্ন দেখছেন না। দল ওপরের দিকে থাকলেই তিনি খুশি হবেন। দলটির বিদেশী সংগ্রহ অবশ্য খারাপ নয়। নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার মুফতা লাওয়ালকে ধরে রেখেছে তারা। সঙ্গে আছেন তিন নবাগত কিরগিজস্তানের ডিফেন্ডার দানিয়েল তাগো, নাইজিরিয়ার ফরোয়ার্ড মাগালান আওয়ালা ও গাম্বিয়ার মিডফিল্ডার মমোদৌ বাও।
×