ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অরক্ষিত মেঘনা ধলেশ্বরী, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

অরক্ষিত মেঘনা ধলেশ্বরী, প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে মুন্সীগঞ্জের মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদী। সোমবার রাতে মেঘনা নদীর ট্রলার দুর্ঘটনা এমনটিই প্রমাণ করে। রাতে নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। তবে সোমবারের ঘটনা আবারও মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এ দুর্ঘটনায় ২৪ শ্রমিকের মধ্যে ১৪ জন উদ্ধার হলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছে ১০ শ্রমিক। এদিকে দুর্ঘটনার পর তেলবাহী ট্যাঙ্কারটি নদীতে ডুবে যাওয়া শ্রমিকদের উদ্ধার না করায় এটিকে চরম অমানবিক কাজ হয়েছে বলে মনে করছে মুন্সীগঞ্জের সচেতন নাগরিক সমাজ। দাবি উঠেছে, ওই ট্যাঙ্কারটি খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে ট্যাঙ্কারটির মালিককে উপযুক্ত সাজা দেয়ার। অনুসন্ধান ও প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, মুন্সীগঞ্জের মেঘনা ও ধলেশ্বরী নদীতে রয়েছে বেশ কয়েকটি বালু মহাল। রাতের বেলায় বাল্কহেড ও বালু কাটা নিষিদ্ধ থাকলেও ইজারাদারের লোকজন এসবের তোয়াক্কা না করে অহরহই বালু উত্তোলন করছে নদী থেকে। অনেক সময় বালু মহালের বাইরে থেকেও তারা বালু কাটায় আশপাশের ফসলি জমি ভেঙ্গে চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। এ নিয়ে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন করলেও ইজারাদারেরা কোন তোয়াক্কা না করে নিয়মিত বালু কেটে চলেছে বালু মহালের বাইরে। বিশেষ করে রাতের বেলায় চলে অধিকাংশ অবৈধ বালু উত্তোলনের কাজ। আর রাতে যখন মেঘনার বুক থেকে বালু উত্তোলন করা হয়, তখন দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি বাল্কহেডের কারণে নদীপথ ছোট হয়ে যায়। এ সময় বড় বড় লঞ্চ, বিভিন্ন মালবাহী ট্যাঙ্কারগুলো নদীতে চলতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হয়। দ্রুতগতির এ সকল নৌযান হঠাৎ করে ব্রেকও করতে পারে না। ফলে ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। কিন্তু রাতের বেলায় এ সকল নিষিদ্ধ থাকলেও প্রশাসন এদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা বালু তুলে নিচ্ছে রাতের বেলায়। সর্বশেষ গত সোমবার রাতের এই দুর্ঘটনা প্রমাণ করে এ সকল বালু ও মাটির ট্রলারগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। ওই রাতে মুন্সীগঞ্জের সদরের মেঘনায় চরঝাপটার কাছে একটি মাটি কাটা ট্রলারকে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কার ধাক্কা দিলে ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় ট্রলারটিতে ৩৪ শ্রমিক ও মাঝিমাল্লা ছিল। সাঁতার কেটে ১৪ জন তীরে উঠতে সম্ভব হলেও বাকি ২০ জনের কোন সন্ধান বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যাওয়া যায়নি। এমনকি এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি ট্রলারটি। ট্রলারটি থেকে জীবিত উদ্ধার হওয়া শ্রমিক শাহ আলম জানান, আমাদের ট্রলারটি ডুবে গেলে আমরা যখন নদীতে ভেসে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলাম, তখন আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি ট্যাঙ্কারটি। তারা ট্যাঙ্কারের গতি বাড়িয়ে দিয়ে আমাদের নদীতে ফেলে চলে যায়। প্রশাসনের কাছে দাবি ট্যাঙ্কারটি খুঁজে বের করে তার মালিককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক। বালু মহাল সম্পর্কে জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বলেন, এখানে ৫-৬টি বালুমহাল ইজারা দেয়া আছে। রাতে বাল্কহেড ও বালু কাটা নিষিদ্ধ থাকলেও এরা আইনের কোন তোয়াক্কা করছে না। আমরা মাঝে মধ্যেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এদের শাস্তি দিচ্ছি। ইজারাদারদের নিয়ে এ বিষয়ে সভা-সেমিনারও করে তাদের সতর্ক করেছি কিন্ত তার পরেও তারা অবৈধভাবে এ ধরনের অন্যায় করে চলেছে।
×