ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘনায় লাশের সন্ধানে ডুবুরি দল

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

মেঘনায় লাশের সন্ধানে ডুবুরি দল

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, চরঝাপটা, মুন্সীগঞ্জ থেকে ॥ মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ডুবে যাওয়া ট্রলার বোঝাই মাটি ও নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রলার শনাক্ত করা যায়নি। নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের কারোই খোঁজ মেলেনি। সাইড স্ক্যান সোনারে শব্দ তরঙ্গের মাধ্যমে ট্রলারের সন্ধান চলছে। নৌবাহিনীর আট সদস্যের ডুবুরি দল ও বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ উদ্ধার তৎপরতায় যুক্ত হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেলে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দুর্ঘটনাস্থলে সন্ধ্যায় জানান, শুক্রবার সকালে উদ্ধার অভিযান আরও ব্যাপকভাবে শুরু হবে। এদিকে ট্রলারডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার কাজে নামে বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড। সকাল থেকেই বিআইডব্লিউটিএর সোনার মেশিনে শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে নদীতে তৎপরতা শুরু করে। দুপুরে সোনার মেশিনে ট্রলার সাদৃশ একটি ধাতব বস্তুর সন্ধান পেয়েছে উদ্ধার কর্মীরা। তবে ওই ধাতব বস্তুটি ডুবে যাওয়া ট্রলার নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে। নদীর তলদেশে ডুবুরিরা প্রায় ৬০ ফুট পানির গভীর থেকে ফিরে ডুবুরিরা জানান এটি ট্রলার নয়। তবে নৌবাহিনীর বিশেষ ডুবুরি দল সন্ধ্যার কিছু আগে দুর্ঘটনাস্থলে এসেছে। এই দলটি শুক্রবার সকাল থেকে অনুসন্ধান কাজে যুক্ত হবে। মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা দুর্ঘটনাস্থল থেকে জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’ সন্ধ্যার কিছু আগে দুর্ঘটনাস্থলে আসে। কাছাকাছি স্থানে জাহাজটি নোঙ্গর করা হয়েছে। আগে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি শনাক্ত করার পরই প্রত্যয়ের ক্রেনে করে ট্রলারটি তীরে উঠিয়ে আনা হবে। এখনও দুর্ঘটনাস্থলটি শনাক্ত করা যায়নি। বড় আকারের মেঘনা নদীতে রাতে দুর্ঘটনা ঘটার কারণে স্থানটি চিহ্নিত করতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে নিখোঁজ স্বজনদের ভিড় বাড়ছে মেঘনার পাড়ে। স্বজনদের আহাজারিতে চলছে। স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ এখন মেঘনা পারে। কারও ছেলে কারও বা ভাই কারও আবার নিকটাত্নীয় নিখোঁজের তিনদিন পাড় হলেও সন্ধান নেই। নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধান পেতে তাই টানা দুই দিন ধরে মেঘনার পাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন স্বজনরা। অশ্রুসিক্ত চোখে তাদের অপেক্ষা প্রিয় মানুষটির ভাগ্যে যাই ঘটুক অন্তত লাশ চান তারা। ফায়ার সার্ভিস বলছে, দুর্ঘটনার সময় শ্রমিকরা প্রায় সবাই ঘুমিয়ে থাকার কারণে ট্রলারডুবির স্থানটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারছে না তারা। আর ট্রলারের চালকও নিখোঁজ থাকায় অনেকটা অনুমানের ওপর ভিত্তি করে তাদের কাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে। মেঘনা নদীর এই অংশের গভীরতা ও প্রশস্ততা বেশি হওয়ায় উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। বিআইডাব্লিউটি-এর চেয়ারম্যান কমোডোর মোজাম্মেল হক দুর্ঘটনাস্থল থেকে জানান, আমরা নদীর নিচে ট্রলার সাদৃশ একটি ইমেজ পেয়েছি তবে তা ট্রলার কিনা নিশ্চিত হবার জন্য ঢাকা থেকে আরো ইকুইপমেন্ট আনা হয়েছে। একইসঙ্গে ৮ সদস্যেসের নৌবাহিনীর বিশেষ টিম ও নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছে আশা করছি অচিরেই ট্রলারটিকে খোঁজে পাওয়া যাবে। স্বজনদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ॥ মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে মাটি বোঝাই ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ ২০ শ্রমিকের কারোই সন্ধান মিলেনি। এতে বৃহস্পতিবার দিনভর মেঘনার দুই তীরে নিখোঁজ শ্রমিকদের খোঁজে স্বজনদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করতে দেখা গেছে। স্বজনরাও মেঘনাবক্ষে খুঁজে বেড়িয়েছেন হারানো প্রিয়জনদের। নিখোঁজ শ্রমিকের খোঁজে মেঘনা তীরে ছুটে এসেছেন পাবনার ভাঙ্গুরিয়া উপজেলার খানমরিচের মালেক। তিনি জানান, তার ২০ শ্রমিকের সঙ্গে তার ভাতিজা আজাদও নিখোঁজ। আজাদ তার ভাই আকবরের ছেলে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ট্রলারডুবিতে তার ভাতিজার খোঁজ পাননি। একই এলাকার মনিরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দিনভর নিখোঁজ শ্রমিকের খোঁজ পাওয়ার আশায় বুক বেঁধে ছিলেন। তিনি জানান, তার তিন ভাই ও এক ভগ্নিপতি নিখোঁজ রয়েছেন। তার পরিবারের ৪ সদস্য নিখোঁজ থাকলেও সন্ধান পাচ্ছেন না কারোই। তিনি বলেন, ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজ কোন শ্রমিকের সন্ধান মিলেনি। কবে হারানো শ্রমিকদের খোঁজ পামু আমরা। অন্তত লাশটা পেলে মনে সান্ত¡না দিতে পারতাম। তদন্ত কমিটি ॥ মেঘনায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এই কমিটির প্রধান মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বেরুল ইসলাম। নয় সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটির বাকি আটজন সদস্য হচ্ছেন- ইউএনও মুন্সীগঞ্জ সদর ও গজারিয়া উপজেলা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও গজারিয়া সার্কেল), সংশ্লিষ্ট এলাকার কোস্টগার্ড কর্মকর্তা, নৌপুলিশের কর্মকর্তা, বিআইডবিøউটিএ কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা ও জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক কর্মকর্তা। জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা বুধবার এই কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোবাশ্বেরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় এসব তথ্য জানান, ট্রলারটি উদ্ধার এবং ধাক্কা দেয়া জাহাজটি শনাক্ত পরবর্তী দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সার্বিক সহায়তা ও উদ্ধার তৎপরতায় এই কমিটি ভূমিকা রাখবে। কমিটির সব সদস্যগণই বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনাস্থলেই অবস্থান করেন বলে তিনি জানান। এখনও মামলা হয়নি ॥ ট্রলারডুবির ঘটনার তিনদিন পরও কোন মামলা হয়নি। মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-গজারিয়া) খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, মামলার প্রস্তুতি নেয়া আছে। তবে এখনও ট্রলারটি শনাক্ত না হওয়ায় মামলা করা সম্ভব হয়নি। ট্রলারটি শনাক্ত হলে এটি কোন থানা এলাকায় পড়েছে সে থানায় মামলাটি হবে। তিনি জানান, মামলা না হলেও এই দুর্ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে পালিয়ে যাওয়া জাহাজটি শনাক্তকরণ এবং দুর্ঘটনা কবলিত ট্রলারের বেঁচে যাওয়া সারেং হাবিবুরকে ও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরেরও খোঁজখবর করা হয়েছে। তবে এই দুর্ঘটনার পর বেঁচে যাওয়া এই সারেং ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাও নিয়েছেন, সেখান থেকেই পালিয়ে গেছে। শীঘ্রই তার সন্ধানও মিলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া ডুবে যাওয়া ট্রলারের মালিক জাকির দেওয়ানে সঙ্গেও পুলিশের যোগাযোগ রয়েছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মামলা না হলেও সব কাজই চলছে। অনেক তথ্যই ইতোমধ্যে পুলিশের হাতে এসেছে। খন্দকার আশফাকুজ্জামান জানান, বেঁচে যাওয়াদের তথ্য অনুযায়ী বুধবার অনেকটা পরিষ্কার হওয়ায় যায় দুর্ঘটনাটি মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকা চরঝাপটার বিপরীতে অর্থাৎ গজারিয়ার ষোলআনির পার্শ্ববর্তী কালীপুরার মোহনায় ঘটে থাকতে পারে। তাই যদি শুক্রবারের মধ্যে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি শনাক্ত না হয়, তাহলে গজারিয়া থানায়ই মামলাটি হবে। গজারিয়ার কালীপুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিখোঁজদের স্বজন ও দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের অনেকেই অবস্থান করছেন। গজারিয়ার ইউএনও হাসান সাদী জানান, সেখানে গজারিয়া উপজেলা প্রশাসন আশ্রিতদের সাধ্য অনুযায়ী থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে দুর্ঘটনার তিনদিনেও নিখোঁজদের সন্ধান না পেয়ে স্বজনরা হতাশায় ভুগছে। দুর্ঘটনার দায় ॥ দুর্ঘটনার পর থেকে মেঘনায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। নানা দফতরের উর্ধতনরা দিনভর মেঘনায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ডুবে যাওয়া ট্রলারটি দ্রæত উদ্ধার করে নিখোঁজদের সন্ধানে। কিন্তু এই দুর্ঘটনাটির দায় কার? এই প্রশ্ন সাধারণে। এতগুলো নিরীহ শ্রমিকের জীবন বিপন্ন হলো আর যারা বেঁচে এসছেন, তাদের কষ্টের কথা শুনলে যে কারোই চোখে জল আসবে। এমনকি দুর্ঘটনার পর ঘাতক জাহাজটি বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের উদ্ধার না করে দ্রæত পালিয়ে গেছে। আর ১৪ শ্রমিক কনকনে শীতে ঘণ্টাকাল ধরে অন্ধকারে মেঘনায় একটি বাঁশ ধরে বেঁচে থাকার নিদারুণ চেষ্টাকালে আরেকটি মাটির ট্রলার তাদের উদ্ধার করে। জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, যে জাহাজটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেটিকে শনাক্ত করতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে অবহিত করা হয়েছে। অবশ্যই এটি শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর তাদের এই অমানবিকতা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিআইডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর মোজাম্মেল হক জানান, ডুবে যাওয়া ট্রলার দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫০ ফুট। এ সকল নৌযানের কোন অনুমোদন বিআইডব্লিউটিএ দেয় না। এগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। এছাড়া ডুবে যাওয়া ট্রলারটির কোন নামও নেই। এর মালিককেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রলারটির চালকও পলাতক। ফলে দুর্ঘটনাস্থলও সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিকরা যে জায়গাটির কথা বলছে, এখানে ট্রলারটি ডুবতে পারে বলে মনে হয় না। কারণ তাদের মতে, একটি তেলবাহী ট্যাঙ্কার ট্রলারটিকে ধাক্কা দিয়েছে। কিন্তু ওই এলাকা তেলবাহী ট্যাঙ্কারের চলাচলের জন্য উপযুক্ত পথ নয়। এ পথে তেলবাহী জাহাজ চলতে পারে না। মেঘনাপারে স্বজনদের ভিড় ॥ মুন্সীগঞ্জের মেঘনা পারে এখন স্বজনদের ভিড়। তারা নিজ নিজ স্বজনের খোঁজে গত দুইদিন ধরে মেঘনা পারে অবস্থান করে নিখোঁজ আত্মীয়-স্বজনের সন্ধান করে চলেছেন। বৃহস্পতিবার তারা প্রশাসনের পাশাপাশি ট্রলারে করে মেঘনার বুকে স্বজনদের খুঁজে ফিরেছেন। জীবিত কিংবা মৃত যেটাই হোক প্রিয় স্বজনকে তারা বাড়ি নিয়ে যেত চান। কারও মা-বাবা, কারও বা সন্তান আবার কারও বা স্ত্রী অপেক্ষা করছে নিখোঁজ স্বজনের জন্য। মুন্সীগঞ্জের সদরের মেঘনায় মাটিকাটা ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের প্রায় ৪০ জন স্বজন এখন মেঘনা পারে সরকারী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে স্বজনের সন্ধান করছে। নিখোঁজ খালাত ভাই আলিফ (২৫) ও মোস্তফা (১৮) ও ভগ্নিপতি রহমত আলীর সন্ধানে এসেছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার গজাইন গ্রামের জামিলুর পরমানিক। তিনি জানালেন খালাত ভাইদের সংসারে উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। তাদের বাবা-মা এখন বাকরুদ্ধ প্রায়। ছোট একটি বোনও আছে। ওদের না পাওয়া গেলে সংসারটির কি অবস্থা হবে আল্লাহ জানে। পাবনার ভাঙ্গুরা থানার মন্ডুমালা গ্রামের আলতাফ হোসেনের পুত্র নাজমুল ইসলামের খোঁজে এসেছেন তার মামা রফিকুল ইসলাম। গত দুইদিন ধরে তিনি ভাগিনার খোঁজে এখানে অবস্থান করছেন। গতকালও ট্রলারে করে মেঘনার বুকে খুঁজে ফিরেছেন। জীবিত কিংবা মৃত ভাগিনা সঙ্গে নিয়ে যেতে চান বোনের কাছে। একই গ্রামের গুনবার হোসেন এসেছেন নিজ সন্তান নাজমুলের খোঁজে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তিনি মঙ্গলবারই চলে এসেছেন। কিন্তু এখনও প্রিয় সন্তানের মুখখান দেখতে পাননি তিনি। তিনি জানালেন স্বপ্ন ছিল নাজমুলকে এবার বিয়ে করাবেন। কিন্তু তার সে স্বপ্ন এখন অপূর্ণই থেকে যাবে কিনা তাও অনিশ্চিত। যদি সন্তানকে মৃত অবস্থায়ও খুঁজে পাওয়া যায় তাও নিজেকে শান্তনা দেয়া যাবে। ছেলের বিয়ের স্বপ্ন নিয়ে আর থাকতে হতো না। এদের মতো প্রায় ৪০জন স্বজন এখন মেঘনা পারের ক্যাম্পটি আশ্রয় নিয়ে স্বজনদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। তারা জানান, শুক্রবার পর্যন্ত স্বজনদের খুঁজে না পেলে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে কি উত্তর দেবেন পরিবারের সদস্যদের কাছে ? এমনই সব চিন্তা এখন এখানকার স্বজনদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। নিখোঁজ ২০ জনের পরিচয় ॥ নিখোঁজরা হলেন- পাবনার ভাঙগুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের মুন্ডুমালা গ্রামের গোলাই প্রামাণিকের ছেলে সোলেমান হোসেন, জব্বার ফকিরের ছেলে আলিফ হোসেন ও মোস্তফা ফকির, গোলবার হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন-১, আব্দুল মজিদের ছেলে জাহিদ হোসেন, নূর ইসলামের ছেলে মানিক হোসেন, ছায়দার আলীর ছেলে তুহিন হোসেন, আলতাব হোসেনের ছেলে নাজমুল হোসেন-২, লয়ান ফকিরের ছেলে রফিকুল ইসলাম, দাসমরিচ গ্রামের মোশারফ হোসেনের ছেলে ওমর আলী ও মান্নাফ আলী, তোজিম মোল্লার ছেলে মোশারফ হোসেন, আয়ান প্রামাণিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন, সমাজ আলীর ছেলে রুহুল আমিন, মাদারবাড়িয়া গ্রামের আজগর আলীর ছেলে আজাদ হোসেন, চন্ডিপুর গ্রামের আমির খান ও আব্দুল লতিফের ছেলে হাচেন আলী এবং উল্লাপাড়া উপজেলার গজাইল গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে রহমত আলী, রজব আলীর ছেলে শফিকুল এবং জনৈক সিরাজ মিস্ত্রী।
×