ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নামে ভুয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নামে ভুয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিদেশে পলাতক তারেক রহমানের সাইবার দলের এ্যাডমিনদের একটি চক্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহেনা, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ পরিবারের সদস্যদের নামে ভুয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রটি পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে নানা অপপ্রচার চালাত। চক্রটি পরিচালনা করছিল ছাত্র শিবিরের একজনসহ পাঁচ জন। চক্রের পাঁচ সদস্যই র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। চক্রটি নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে গুজব ও সম্প্রতি শুরু হওয়া আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন নিয়ে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত। বৃহস্পতিবার কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলছেন, গত ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি তাদের নজরে আসে। তাতে জানানো হয়, কিছু কুচক্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে কিছু ভুয়া ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুলে নানা বিভ্রান্তিমূলক, মিথ্যা, বানোয়াট সংবাদ প্রচার করছে। অথচ তাদের নামে কোন অফিসিয়ালি ফেসবুক পেইজ নেই। অপরাধীদের গ্রেফতারে গত ১৬ জানুয়ারি ভোর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত র‌্যাব-২ এর একটি দল অভিযান চালায়। অভিযানে ঢাকার মগবাজার, ডেমরা, মেহাম্মদপুর এবং ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ ও সাভার এলাকা থেকে ওই পাঁচ প্রতারক গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, মোঃ সাব্বির হোসেন (২৪), মোঃ ওমর ফারুক (৩০), মোঃ আল আমিন (২৭), মোঃ আমিনুল ইসলাম আমিন (২৫) ও মোঃ মনির হোসেন (২৯)। তাদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার হয়। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে ভুয়া ফেসবুক ব্যবহার করার আলামত মিলেছে। র‌্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলছেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাব্বির হোসেনের নামে সন্ত্রাস দমন আইনে দুটি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে চারটিসহ মোট ছয়টি মামলা আছে। সাব্বির আগে তারেক জিয়া সাইবার ফোর্স, দেশনেত্রী (খালেদা জিয়া) সাইবার ফোরাম পেইজের এ্যাডমিন ছিল। সম্প্রতি সাব্বির ‘শেখ হাসিনার পরামর্শ’ ও ‘সায়মা ওয়াজেদ পুতুল’ নাম দিয়ে দুটি পেইজ থেকে নিরাপদ সড়ক চাই ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় উস্কানিমূলক ভিডিও পোস্ট করেছিল। যে কোন নতুন ইস্যুর সৃষ্টি হলেই সাব্বিব তা সরকারবিরোধী অপপ্রচারে রূপান্তর করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিত। ওমর ফারুক পেশায় ব্যবসায়ী। সে প্রধানমন্ত্রীর নামে ছয়টি, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নামে একটি ও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন জাতীয় নেতার নামে ৩৬টি ভুয়া পেইজ চালাচ্ছিল। এসব পেইজে সে ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর লিখেছিল। কেউ ফোন করলে ফারুক বলত, প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নিয়োগ পেয়ে তারা এই পেইজ পরিচালনা করছে। সারাদেশে কে কি করছে সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো তার কাজ। কেউ যোগাযোগ করলে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হলে নানা কাজ করে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। সম্প্রতি চক্রটি সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেয়ার কথা স্বীকার করেছে ফারুক। আল আমিন প্রধানমন্ত্রীসহ জাতীয় নেতাদের ছবি বিকৃত আকারে প্রকাশ করত। বিচার বিভাগ, সেনাবাহিনী, পুলিশকে নিয়ে মিথ্যা তথ্য সংবলিত ভুয়া ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে আসছিল। আমিনুল ইসলাম আমিন ইসলামী ছাত্র শিবিরের সহযোগী সংগঠন সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্য। সে ফেসবুকে চারটি এ্যাকাউন্ট ও তিনটি পেইজ চালানোর পাশাপাশি ইউটিউবে বিভিন্ন ‘কমিক আইটেম’ প্রচার করত। আওয়ামী লীগের লোগো সংযোজন করে একটি, প্রজন্ম চেতনা ও স্পাই উদ্দিন নামে দুটি ফেসবুক পেইজ থেকে গুজব সৃষ্টি ও উস্কানিমূলক ভিডিও পোস্ট করত।
×