ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পোশাক শিল্পের প্রদর্শনীতে প্রযুক্তির সম্ভার

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

পোশাক শিল্পের প্রদর্শনীতে প্রযুক্তির সম্ভার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানুষের রুচির সঙ্গে এখন ব্যবসার ধরনেও পরিবর্তন আসছে। পোশাক শিল্পে যেখানে ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে, সেখানেও আজ টেকনোলজির ব্যবহার বেড়েছে কয়েকগুণ। পোশাক শিল্পে টেকনোলজি ব্যবহার আরও সহজ ও যুগোপযোগী করতে গতকাল ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে (আইসিসিবি) চার দিনব্যাপী চারটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। ১৮তম আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী গার্মেন্টেক, ১০ম ইয়ার্ন এ্যান্ড ফেব্রিক সোর্সিং ফেয়ার, ১০ম গ্যাপেক্সপো এবং প্রিন্টিং এ্যান্ড প্যাকেজিং ইন্টারন্যাশনাল এক্স বাংলাদেশ। আইসিসিবির ১০টি হলজুড়ে এই চারটি প্রদর্শনী হচ্ছে। প্রদর্শনীতে ২৪টি দেশের ৫১০টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। প্রদর্শনীর প্রথম দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। শিল্পমন্ত্রীর উদ্বোধনীর মাধ্যমে প্রদর্শনীর কার্যক্রম শুরু হয়। শিল্পমন্ত্রী মাহমুদ হুমায়ূন উদ্বোধনের প্রাক্কালে বলেন, দেশের অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের গুরুত্ব অনেক। এই খাতকে দেশের প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করেন। এই খাতের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সুনজর রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পোশাক শিল্পকে আরও উন্নত করতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত। সরকার যতটুকু সম্ভব তার পুরোপুরি দিয়ে এই খাতকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছে। প্রদর্শনী সম্পর্কে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এটি একটি সুন্দর আয়োজন। ভবিষ্যতে এই প্রদর্শনীকে আরও বড়সড় করতে সরকারের সাহায্য চলমান থাকবে। এই সরকার ব্যবসাবান্ধব, তাই এই শিল্পকে আরও যুগোপযোগী ও উন্নত করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএপিএমই’র ট্রেড ফেয়ারের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন মতি, বিজিএপিএমই’র প্রেসিডেন্ট আব্দুল কাদের খান, বিজিএমই’র প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ আরও অনেকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট শফিউল ইসলাম বলেন, পোশাক শিল্পে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের সঠিক সহযোগিতা যদি পাওয়া তাহলে এই শিল্পের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। শিল্পমন্ত্রীর কাছে আমি এই খাতের সমস্যাগুলো অতি দ্রুত সমাধানের আশা করি। তিনি বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিভিন্ন শিল্পের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। চামড়া শিল্পে দিন-দিন সমস্যাগুলো প্রখর হচ্ছে। আমরা হাজারিবাগের ট্যানারি সাভারে নিয়ে গেলাম, কিন্তু সেখানেও আমরা সুন্দরভাবে ব্যবসা করতে পারছি না। তাই সমস্যাগুলোকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে। বিজিএপিএমই’র ভাইস প্রেসিডেন্টের সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। সম্পূর্ণ প্রদর্শনী ঘুরে দেশী-বিদেশী অনেক বুথ দেখতে পাওয়া যায়। চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ মোট ২৪ দেশের বুথ দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকমের মেশিনারি এবং টেকনোলজির পণ্যে ছিল চোখে পড়ার মতো । দেশী প্রতিষ্ঠান গ্রোপরোর কান্ট্রি ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রদর্শনীতে বিভিন্ন রকমের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে আমরা পোশাক শিল্পে কম জনশক্তির মাধ্যমে কিভাবে বেশি উৎপাদন করা যায়, সেই সফটওয়্যারটি এই প্রদর্শনীতে আমরা এইবার নিয়ে এসেছি। মূলত আমরা টেকনোলজি পণ্যের প্রদর্শনী করছি। তিনি আরও বলেন, এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে পোশাক ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই বুঝতে পারছে, তারা কিভাবে তাদের ব্যবসা উন্নত করতে হবে। এই প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে পোশাক ব্যবসায়ীরা সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা তাদের ব্যবসা আরও উন্নত করতে পারে। জাহাঙ্গীর বলেন, প্রতিবার প্রদর্শনীর পর পোশাক ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে। তাই এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে পোশাক ব্যবসায়ী এবং আমরা উভয়ই লাভবান হচ্ছি। সেই অর্থে প্রদর্শনীকে সফল একটি উদ্যোগ বলা চলে। প্রদর্শনীর প্রথম প্রহরে দর্শনার্থীর তেমন ভিড় চোখে পড়েনি, তবে বিকেলের দিকে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল। দর্শনার্থীরা বেশি ভাগ ছিল পোশাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মানুষ। প্রদর্শনীতে এক দর্শনার্থীর সঙ্গে কথা হয়, মাসুদ রানা বাংলা লিমিটেডের ম্যানেজার। রানা বলেন, আমি পোশাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও প্রদর্শনীতে নতুন রকমের বেশি এবং টেকনোলজি দেখতে এসেছি। গত বছর প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমি একটি টেকনোলজি পণ্য ক্রয় করেছিলাম। যা আমাকে ব্যবসায় অনেক সাহায্য করেছে। তিনি আরও বলেন, এই প্রদর্শনী অনেক উপকার করে পোশাক ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি কোন মেশিন বা টেকনোলজি প্রয়োজন। সে অনুযায়ী আমরা সেটা ক্রয় করতে পারছি। প্রদর্শনীতে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম না বেশি জানতে চাইলে রানা বলেন, প্রদর্শনীতে প্রতিবার দর্শনার্থীর চাপ অনেক বেশি থাকে। আজ প্রথম দিন তাই একটু দর্শনার্থীরা কম। আগামীকাল থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে। মূলত বিকেলে দর্শনার্থীরা বেশি থাকে। প্রদর্শনীর পরিবেশ সম্পর্কে রানা বলেন, প্রদর্শনীর পরিবেশ চমৎকার এবং সবার ব্যবহারও অনেক সুন্দর। এককথায় প্রদর্শনীর পরিবেশ অনেক ভাল। ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই প্রদর্শনী আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এই চারদিনে আইসিসিবিতে সকাল ১০ থেকে ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য এই প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে।
×