ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় বাঁধের পাশের মাটি বিক্রির হিড়িক

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

নওগাঁয় বাঁধের পাশের মাটি বিক্রির হিড়িক

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ মহাদেবপুর উপজেলায় উত্তরগ্রাম ও খাজুর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় আত্রাই নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশের জমির মাটি কেটে অবাধে চলছে বিক্রি। এভাবে মাটি কেটে নেয়ায় নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। স্থানীয় একটি চক্র বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে বিভিন্ন ইটভাঁটি, বসতবাড়ি ও রাস্তার কাজে ব্যবহারকারীদের কাছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় যে চক্রটি বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে ইটভাটিতে কিংবা বাসা-বাড়ি নির্মাণ কাজের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করছে, তারা হলো, আল-আমিন, এরশাদ, রাজ্জাক ও দেলোয়ার হোসেন। তারা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই জমির মালিকদের কাছ থেকে প্রতি বিঘার মাটি ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা দাম দিয়ে কিনে নেয়। এরপর মাটি কেটে বিক্রি করে। বিভিন্ন সময় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে এই চক্রের সদস্যদের বাঁধের পাশ থেকে মাটি কাটার জন্য জরিমানা করলেও মাটি কাটা বন্ধ হচ্ছে না। চলতি মাসেও আত্রাই নদীর বাঁধের পাশে শিবগঞ্জ এলাকায় মাটি কাটার জন্য এক ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে প্রশাসন। এরপরেও প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করেই চলেছে চক্রটি। এলাকা সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের সাহাজাদপুর, সালতাপুর ও উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের শিবগঞ্জ এলাকায় আত্রাই নদীর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। নদীর পশ্চিম তীরে মহাদেবপুর-ছাতড়া বাঁধের (রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত) সাহাজাদপুর ও সালতাপুর এলাকায় সম্প্রতি খননযন্ত্র (ভেকু মেশিন) দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করার চিহ্ন রয়েছে। নদীর পূর্ব পাশে শিবগঞ্জ এলাকায় মান্দা-মহাদেবপুর বাঁধের (রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত) পাশ থেকে ১০-১২ শ্রমিক কোদাল দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টরে তুলছেন। সেখানে কথা হয় শ্রমিক আতাবর, ময়নুল, জসিম ও কাদেরের সঙ্গে। তারা বলেন, অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকে তারা এই বাঁধ এলাকায় মাটি কাটছেন। ঠিকাদার দেলোয়ার ও এরশাদের নির্দেশে তারা মাটি কাটছেন। এই মাটি বিভিন্ন ইটভাঁটিতে নেয়া হয়। এছাড়া অনেক লোক বসতবাড়ি ও রাস্তার কাজে ব্যবহারের জন্য এখান থেকে মাটি কিনে নিয়ে যান। প্রতি ট্রাক মাটি ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকায় বিক্রি হয়। শিবগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মজুমদার, মতিউর রহমান, খোরশেদ, সুলতানপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন, বদিউজ্জামান, ফজলুসহ ১০-১২ স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এভাবে নদীর বাঁধের পাশ থেকে দেদার মাটি কেটে নিলে নদীর গতিপথ বদলে সামনের বর্ষায় নদীর বাঁধ হিসেবে ব্যবহৃত রাস্তাটি ভেঙ্গে যেতে পারে। আর বাঁধটি ভেঙ্গে গেলে এলাকার কৃষিজমি ও রাস্তাঘাট নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। সাহাজাদপুর এলাকায় বাঁধের পাশে যেখান থেকে মাটি কাটা হচ্ছে, তার প্রায় ১০০ গজ দূরে সাহাজাদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভূপেন চন্দ্র ম-ল বলেন, যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে, তাতে আগামী বর্ষায় নদী ভরে গেলে স্কুলের মাঠ ও ভবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। এছাড়া বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার দেলোয়ার জানান, ‘আমরা যারা বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছি এই সব জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন। জমির মালিকদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে আমরা মাটি কিনে নেই। তারপর ওই সব জমির মাটি কেটে বিক্রি করছি। এরপরেও কেন প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে ?’ মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, বাঁধসংলগ্ন এলাকা থেকে মাটি কেটে নেয়ার ঘটনায় চলতি মাসেই এক ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত করে জরিমানা করা হয়েছে। গতবছরও একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের দণ্ড দেয়া হয়েছে। বাঁধের ক্ষতি কিংবা আরও বৃহত্তর স্বার্থ হুমকির সম্মুখীন হতে পারে এ ধরনের পরিস্থিতি ঘটতে দেয়া হবে না।
×