ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে কিছু এনজিওর ভূমিকায় স্থানীয়দের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে কিছু এনজিওর ভূমিকায় স্থানীয়দের ক্ষোভ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মানবিক কারণে উখিয়া টেকনাফে বারো লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে জায়গা দিতে স্থানীয়রা কৃপণতা করেনি। কিছু সংখ্যক এনজিওর একগুয়েমির কারণে এখন ফুসে উঠছে স্থানীয়রা। স্থানীয়দের ছাঁটাই করায় ক্ষতিগ্রস্তরা আন্দোলন শুরু করেছে। ৭ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে এনজিওগুলোকে। জানা যায়, উখিয়া টেকনাফের ৫টি ইউপি এলাকায় ৩০টি ক্যাম্প স্থাপন করে সরকার ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। স্থানীয়রা ওসব রোহিঙ্গার কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এ কারণে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, সুশীল সমাজ ও নেতারা বারবার বলে আসছিল এনজিওদের চাকরিতে যেন স্থানীয়রা অগ্রাধিকার পায়। শুরুতে স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষিত যুবক-যুবতীদের চাকরিতে নিয়োগ করা হলেও বর্তমানে গণহারে ছাঁটাই করে চলেছে এনজিওগুলো। তদস্থলে নিযোগ করা হচ্ছে রোহিঙ্গা ও উত্তরবঙ্গের লোকজনকে। এতে ফুঁসে উঠছে স্থানীয়রা। সোমবার সমাবেশ করে ক্যাম্পে স্থানীয়দের গণহারে ছাঁটাই বন্ধে ও চাকরি ফেরত দেয়ার জন্য ওসব এনজিওকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বহু অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে চলেছে স্থানীয়রা। ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে জায়গা দিয়ে অপূরণীয় ক্ষতিসাধন হয়েছে তাদের। উত্তরবঙ্গের লোকজনকে ওসব দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। প্রায় পাঁচ লাখ স্থানীয় নাগরিকদের বসবাসের স্থলে এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা বাস করছে ১৬ মাস ধরে। তাদের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছে। যা উত্তরবঙ্গের লোকজন টেরও পাচ্ছে না। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে অনেকে জমিজমা, মৎস্য প্রকল্প, পানের বরজ, পাহাড়-টিলা এমনকি ভিটাও হারিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু উত্তরবঙ্গের কোথাও রোহিঙ্গা শিবির স্থাপন করা হয়নি। ক্ষতিসাধনও হয়নি তাদের। তবে তাদের স্বজনরা এনজিওতে কর্মরত আছেন বলেই স্থানীয়দের ছাঁটাই করে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। প্রকল্প শেষ হয়েছে বলে স্থানীয়দের ছাঁটাই করে নতুন প্রকল্পে তাদের স্বজনদের নিয়োজিত করা হচ্ছে। তাই বিক্ষোভ সমাবেশে আগামী ৭ দিনের মধ্যে এনজিওগুলো স্থানীয়দের চাকরি ফেরত না দিলে ওইসব চিহ্নিত এনজিওকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সোমবার দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে ‘কক্সবাজারবাসীর’ আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ আল্টিমেটাম ও প্রতিহতের ঘোষণা দেয়া হয়। সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত এনজিওগুলোতে স্থানীয়দের গণহারে ছাঁটাই করা হয়। এর প্রতিবাদে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ভুক্তভোগীরা। তাদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে কক্সবাজারের সর্বস্তরের মানুষ। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জানানো হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে দেশী-বিদেশী এনজিও পরিকল্পিতভাবে স্থানীয়দের চাকরি থেকে ছাঁটাই করছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নতুন নতুন চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয়দের বাদ দিয়ে এনজিও কর্মকর্তারা বিশেষ সুবিধা নেয়ার মাধ্যমে তাদের স্বজন ও নিজস্ব লোকদের চাকরিতে নিয়োজিত করছে। নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও নিয়োজিত করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরি এটা স্থানীয়দের অধিকার। একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশবিরোধী কর্মকা- করার জন্য স্থানীয়দের চাকরি থেকে বাদ দিচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্থানীয়রা কর্মরত থাকলে এনজিওদের সরকারবিরোধী কর্মকা-ে প্রতিবাদ করবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধী কার্যক্রম মেনে নেবে না স্থানীয়রা। যেহেতু রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, সেহেতু সরকারকে সহযোগিতা দেখিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কাজে সহযোগিতা করবে তারা। উত্তরবঙ্গে রোহিঙ্গাদের আগমনে কোন প্রভাব পড়েনি। ক্ষতিসাধনও হয়নি তাদের। তাই তারা চাইবে রোহিঙ্গারা যত বেশিদিন থাকবে, ততই উত্তরাঞ্চলের চাকরিজীবী লোকজনের লাভ। রোহিঙ্গা থাকলে তাদের চাকরিও থাকবে, এ আশায় স্থানীয়দের ছাঁটাই চলছে বলে দাবি করেন চাকরিচ্যুত যুবকরা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ শাহজাহান, উখিয়াবাসীর পক্ষে যুবনেতা ইমরুল কায়েস চৌধুরী, ‘আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের পক্ষে যুবনেতা কলিম উল্লাহ, নাজিম উদ্দিন, রাসেল চৌধুরী, এইচ এম নজরুল ইসলাম, ইসমাঈল সাজ্জাদ, অর্পণ বড়ুয়া, মারুফ ইবনে হোসাইন, মাইন উদ্দিন, জাকির হোসাইন, ওয়াহিদুর রহমান রুবেল, কানন বড়ুয়া বিশাল, রিদুয়ান ছিদ্দিক, জসিম উদ্দিন, জাহেদুল করিম, মোস্তাক আহমেদ, রায়হান উদ্দিন, মোস্তাক আহমদ প্রমুখ।
×