ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৮ সালে অভিযোগের ৯৯ শতাংশ নিষ্পত্তি বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক;###;সর্বোচ্চ সাধারণ ব্যাংকিং ও সর্বনিম্ন চেক জালিয়াতি

ব্যাংকে সাড়ে ৫ হাজার গ্রাহকের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

ব্যাংকে সাড়ে ৫ হাজার গ্রাহকের অভিযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের অন্যতম একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিয়মিত লেনদেন করেন আমিনুল ইসলাম। সম্প্রতি একটি জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংকটির এটিএম বুথে টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। অথচ সর্বশেষ লেনদেনের তথ্যানুযায়ী তার অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা ছিল। পরে ব্যাংকটির কল সেন্টারে জানানো হলে গ্রাহকের টাকা ঠিক আছে বলে নিশ্চয়তা দেওয়া হয় এবং শাখা থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য অনুরোধ করা হয়। ব্যাংকটির শাখায় গিয়েও ব্যর্থ হন ওই গ্রাহক। তাকে জানানো হয়, তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে পারেননি রবিউল ইসলাম। অবশেষে তিন দিন পরে টাকা তুলতে পেরেছেন তিনি। ব্যাংকটির এমন হয়রানিতে হতাশ আমিনুল ইসলাম। বেশ কয়েক বছর আগে চতুর্থ প্রজন্মের একটি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) করেছিলেন ফারজানা বিনতে লামিয়া। এফডিআরের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় টাকা তুলতে যান ওই গ্রাহক। শাখা থেকে তাকে জানানো হয়, ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। তাই এফডিআরের টাকা বেশ কয়েকটি কিস্তিতে ভেঙে ভেঙে নিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখার ম্যানেজারের সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। ব্যাংক কোনোভাবেই একসঙ্গে এফডিআরের সব টাকা দিতে রাজি নয়। অবশেষে উপায় না পেয়ে কিস্তিতেই অল্প অল্প করে এফডিআরের টাকা তোলেন গ্রাহক। আমিনুল ইসলাম কিংবা ফারজানা বিনতে লামিয়ার মতো এমন হয়রানির শিকার হচ্ছেন শত শত গ্রাহক। বিশেষ করে চেক জালিয়াতি, অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ কর্তন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন, স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) অর্থ ফেরত না দেওয়া, স্বীকৃত বিলের মূল্য পরিশোধ না হওয়া, ডেবিট ক্রেডিট কার্ড, রেমিট্যান্স, মোবাইল ব্যাংকিং, ঋণ ও অগ্রিম, নোটস ও কয়েনস, ব্যাংক গ্যারান্টিসহ বিভিন্ন ধরনের সেবায় হয়রানির অভিযোগ বাড়ছে। আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা থেকেই টাকা রাখে। অন্যদিকে ব্যাংকের দায়িত্ব সেবা দেওয়া। ব্যাংকিং সেবা হবে গ্রাহকবান্ধব; কিন্তু গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যা দুঃখজনক। গ্রাহক হয়রানি বন্ধে অফিসার ও ডেস্কের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালেও হয়রানির শিকার হওয়া গ্রাহাকের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতবছর ৫ হাজার ৭৩১ জন গ্রাহক বিভিন্ন প্রকার হায়রানির শিকার হয়ে আভিযোগ করেছেন। তথ্যমতে, গত বছর সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে ১ হাজার ৯৭২টি, ঋণ এবং অগ্রিম সংক্রান্ত ৭১৩টি, কার্ড সংক্রান্ত ৫০২টি, সার্ভিস সংক্রান্ত ৩৮১টি, রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ৭৮টি, ফি ও চার্জ সংক্রান্ত ৯৮টি, চেক জালিয়াতি সংক্রান্ত ৩৬টি এবং মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ১০১টি। আলোচিত সময়ে লিখিত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪০৪টি, টেলিফোনে আসা অভিযোগ ছিল ৩ হাজার ৫৮টি এবং অনলাইনে প্রাপ্ত অভিযোগ ২৩৩টি। সবকটি অভিযোগের মধ্যে ৫ হাজার ৬৬৫টি অভিযোগই নিষ্পত্তি হয়েছে। যা প্রাপ্ত অভিযোগের ৯৯ শতাংশ। আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা রেখে টাকা রাখে। অন্যদিকে ব্যাংকের দায়িত্ব সেবা দেওয়া। ব্যাংকিং সেবা হবে গ্রাহকবান্ধব; কিন্তু গ্রাহকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন, যা দুঃখজনক। গ্রাহক হয়রানি বন্ধে অফিসার ও ডেস্কের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন তারা। জানা গেছে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালের ১ এপ্রিল গ্রাহক স্বার্থসংরক্ষণ কেন্দ্র (সিআইপিসি) গঠন করে। পরিধি বাড়তে থাকায় পরে একে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস (এফআইসিএসডি) নামে পূর্ণাঙ্গ বিভাগে রূপ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাড়ছে অভিযোগ। ব্যাংকের সেবা পেতে কোনো ধরনের হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হলেই গ্রাহকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের এফআইসিএসডি বিভাগে অভিযোগ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাড়ছে অভিযোগ। ব্যাংকের সেবা পেতে কোনো ধরনের হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হলেই গ্রাহকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের এফআইসিএসডি বিভাগে অভিযোগ করছেন।
×