ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সামাজিক দায়বদ্ধতা

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

সামাজিক দায়বদ্ধতা

প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে আমরা যেমনিভাবে উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছি, ঠিক তেমনিভাবেই কোথায় যেন সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছি! আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে জীবনের সবচেয়ে বড় একটা অংশ হিসেবে ধরে নেওয়া। আজকাল খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর সংবাদ রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে, শুধু তাই নয়! এসব মিথ্যে প্রোপাগান্ডা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন করছে বর্তমান প্রজন্মসহ সর্বস্তরের মানুষদের। এছাড়া সকলের হাতে এখন স্মার্টফোন অত্যন্ত সহজলভ্য! অবশ্য তা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির বিকাশের ফলেইঅ এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল বিষয়। কিন্তু, বর্তমানে ১২ বছরের কমবয়সী বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ অধিকাংশ মানুষই স্মার্টফোনকে ব্যবহার করছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেকবেশি সময় ধরে, যা তাদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অধিকাংশ সময় ফোনের কিংবা ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে দেখা দিচ্ছে চোখের সমস্যা, হেডফোনে ফুল ভলিউমে গান শোনার ফলে বধির হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আরও নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আগে যখন আমরা ছোট বাচ্চাদের কান্না থামাতে তাদেরকে গল্প শোনাতাম, খেতে না চাইলে বিভিন্নভাবে ভুলিয়ে খাবার খাওয়াতাম, হাতে তুলে দিতাম খেলনা, এখন সেই আমরাই এইসব কোমলমতি শিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছি স্মার্টফোন! যা তাদেরকে অনেকাংশেই যান্ত্রিক করে তুলছে। কবি আশাবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, ‘এই বিশ্ব শিশুর বাসযোগ্য করে যাব, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার!’ আজ এত বছর পরে মনে হচ্ছে আমরা হয়তো আমাদের অঙ্গীকার থেকে দূরে সরে যাচ্ছি! নবজাতককে দেওয়া কথা রক্ষা করা হয়তো সম্ভব হচ্ছে না! এই পৃথিবীকে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী করে তৈরি করে দেওয়া আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার পর্যায়ে পড়ে। সেই জায়গা থেকে আমাদের প্রত্যেকের উচিত প্রথমে এই চর্চাটা পরিবার থেকে শুরু করা। কেননা পরিবার সচেতন হলে সমাজও ধীরে ধীরে তার গতিপথ খুঁজে পাবে। শিশুর হাতে স্মার্টফোন না দিয়ে খেলনা তুলে দিন! প্রযুক্তি যেন কোনভাবেই ওদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত না হয়। হেসে খেলে ওরা বেড়ে উঠুক পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে বেঁচে থাকুক, যান্ত্রিকতায় ওদের বিকাশ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়! এছাড়াও আমরা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই মিথ্যে প্রোপাগান্ডা যেন রাতারাতি ভাইরাল না হয় সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখব। প্রযুক্তি হোক আশীর্বাদস্বরূপ তা যেন কোনভাবেই অভিশাপে রূপ না নেয় এই কামনা। কেসি সরকারী কলেজ, ঝিনাইদহ থেকে
×