ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুব্রতা রায়

এক পরিবারের সদস্য

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

এক পরিবারের সদস্য

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের প্রতি মানুষের দায়িত্ব অপরিসীম। যে সমাজের মানুষ সমাজের প্রতি যথার্থ দায়িত্ব পালন করবে সে সমাজ মানুষকে দিতে পারে ততবেশি নিরাপদে-আনন্দে-শান্তিতে থাকার নিশ্চয়তা। পরিবার সমাজের এক ক্ষুদ্র অংশের নাম। আমরা প্রত্যেকেই সাধ্যানুযায়ী কমবেশি পরিবারকে পরিপাটি করে রাখি, একে অপরকে ভালবাসি, সকলে সকলের মঙ্গল কামনা করি, যত্ন নেই, কোন সদস্যের অনিয়ম দেখলে সংশোধনের চেষ্টা করি, ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলি, ইলেক্ট্রিসিটি, গ্যাস, পানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী থাকি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমস্যাটা হয় তখনই যখন কাজটি হয় পরিবারের বাইরে। প্রতিষ্ঠানে কাজ করে সংসার চলে অথচ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করি না, এসি, ফ্যান, অফিসের জিনিসপত্র, গাড়ি ব্যবহার কোন কিছুতেই সাশ্রয়ী হওয়ার ভাবনা নেই, যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাস্তা, মাঠ, ঘাট, নদী-নালা সব দুর্গন্ধময় করে তুলি, প্রচুর অর্থ দিয়ে বানানো ল্যাট্রিনটি ব্যবহার অনুপযোগী করে তুলি, অর্থশালীরা নিজেকে আরও বেশি অর্থশালী করে তুলি, সমাজের মানুষের জন্য অর্থ বিনিয়োগ বিষয়টি ভাবনায় বা পরিকল্পনায় কোথাও নেই বরং বিনিময়টা হয় বিত্তশালী বনাম বিত্তশালী। যাদের অর্থ নেই তারা ভেবেই নিই তার কিছু করার নেই, অথচ মানুষকে শ্রদ্ধা করে, ভালবেসে, ভাল আচরণ করে, শ্রম দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। সব থেকে বড় সত্যিটা হলো- পরিবারের বাইরের সমাজটা, দেশটা এমনকি গোটা পৃথিবীটার সঙ্গে প্রত্যেকেই জড়িত, আত্মীয়তা আছে সবার সঙ্গে সবার, একটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মতো একে অপরের পরিপূরক। যাকে আমি বলি ‘আমার বৃহৎ পরিবার।’ ছোট্ট পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণটি যদি আমরা বৃহৎ পরিবারে ব্যবহার করি তাহলে খুব অল্প সময়েই দেশের নানাবিধ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব। সমাজের একটি অসহায় ছেলে যে অনাদরে, অবহেলায় অর্থের অভাবে পড়তে পারছে না, অদূর ভবিষ্যতে যে কিনা সমাজের বোঝা হবে, বখাটে মাস্তান হবে, নেশা করবে, চুরি করবে এবং যে একটি মাত্র ছেলের ভয়ে অনেক পরিবার সারাক্ষণ উদ্বিগ্নে থাকবে অথচ আমরা যদি যথাসময়ে ওই ছেলেটির পাশে দাঁড়াতে পারতাম তাহলে হয়ত ছেলেটি খারাপ হওয়ারই সুযোগ পেত না। আমরা কিছু মানুষ মনে করি অন্যকে সাহায্য করে কি লাভ? সে তো কিছু দেবে না। কিন্তু সত্যি হলো- প্রত্যেক ইতিবাচক কাজের জন্য ব্যক্তি প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে তার ফল সে ভোগ করে। প্রসঙ্গত বলতে পারি- পৃথিবীতে এমনও দেশ আছে, স্থান আছে যেখানে কোন তালার ব্যবহার নেই, হিংসে নেই, মারামারি নেই। ব্যবস্থাটাই যখন ইতিবাচক হয়, সবার জন্য যখন সবকিছু থাকে তখন অন্যের কিছু নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না, ঝগড়া-বিবাদের সুযোগ সৃষ্টি হয় না। আমরা আমাদের চোখের সামনে যে ভয়ঙ্কর হাঙ্গামা দেখি তার সবই কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থের জন্য ঘটে। আমাদের দেশে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের জন্য সব উপাদানই প্রায় বর্তমান, শুধু ইতিবাচক মূল্যবোধ চর্চা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। তবে দেরি নয়, ব্যক্তিপর্যায় থেকেই শুরু করা যাক সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ। নিজের সক্ষমতাকে আবিষ্কার করি, মানুষের পাশে দাঁড়াই আর ভাবনায় থাক বিশ্বমানবতা। কুড়িগ্রাম থেকে
×