ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ

পণ্যমূল্য নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধে কাজ করবে পূর্বাভাস সেল

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

পণ্যমূল্য নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধে কাজ করবে পূর্বাভাস সেল

এম শাহজাহান ॥ নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিয়মিত রুটিন ওয়ার্কের পাশাপাশি পণ্যমূল্য নিয়ে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী গ্রুপের কারসাজি বন্ধে কাজ করবে এই সেল। সংশ্লিষ্টরা বলছে, দেশে চারটি পণ্য বিশেষ করে চাল, চিনি, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী গ্রুপের যোগসূত্র রয়েছে। সময় সময় পণ্যমূল্য বাড়িয়ে অতিরিক্ত পয়সা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। এতে সাধারণ ভোক্তার কষ্ট বাড়ে। নতুন মন্ত্রী হিসেবে টিপু মুনশি দায়িত্ব গ্রহণের পরই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ দফতর ও সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে মন্ত্রণালয়ের কর্মকা-ের একটি ধারণা নিয়েছেন। বৈঠকে দ্রব্যমূল্য পূর্বাভাস সেলের কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে পাঁচ বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমান বিসিএস ট্রেড ক্যাডারভুক্ত বাণিজ্য পরামর্শকের একটি সহকারী, বাণিজ্য পরামর্শকের দুটিসহ মোট তিনটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সেলের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করেন একজন অতিরিক্ত সচিব। সারাবছর দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে এই সেল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও গাইডলাইন দিয়ে থাকে। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সম্প্রতি হঠাৎ চালের দাম কেজিতে ২-৪ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে নতুন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পরই চালের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। যদিও চাল আমদানি, মজুদ, ধান সংগ্রহ ও মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে বাজারে দাম বেশি বেড়ে গেলে এর দায় আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওপরও। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জনকণ্ঠকে বলেন, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হবে। তিনি বলেন, হঠাৎ চালের দাম বাড়লেও এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত চাল মজুদ রয়েছে। একই সঙ্গে এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। জানা গেছে, দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছেÑনিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা তৈরিকরণ ও মাঝে মাঝে যুগোপযোগীকরণ, সকল পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন ও আমদানির পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া। এ সংক্রান্ত কাজে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন এবং তথ্য সংগ্রহ করা, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলার সংখ্যা, এলসি নিষ্পত্তির মূল্য ও পাইপলাইনে পণ্য আমদানির পরিমাণ বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ ও তা বিশ্লেষণ করা। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের টিসিবি কর্তৃক মজুদ, সংগ্রহ পরিস্থিতি, বিতরণ ব্যবস্থা এবং টিসিবির গোডাউনের ধারণ ক্ষমতা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সংগ্রহসহ পাইকারি ও খুচরা দর নির্ধারণ করে দেয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাজার মনিটরিং সেল, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে বাজার মনিটরিং কাজের সমন্বয় সাধন ও বিশ্লেষণ। এছাড়া আবহাওয়া পূর্বাভাসের ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ সকল পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা। এছাড়া তথ্যাদি বিশ্লেষণপূর্বক তা অভ্যন্তরীণ বাজার এবং আন্তর্জাতিক বাজারদরের সঙ্গে তুলনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আগাম পরামর্শ দান করা। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মফিজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রেখে ভোক্তাদের স্বস্তি দেয়া সরকারের দায়িত্ব। মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট দফতর, অধিদফতর ও সংস্থাসমূহ যাতে এ ব্যাপারে সঠিক দায়িত্ব পালন করে সেজন্য তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অধীনস্থ দফতর ও সংস্থাসমূহের সামগ্রিক কার্যক্রম সম্পর্কে নতুন মন্ত্রীকে ধারণা প্রদান করার লক্ষ্যে সম্প্রতি একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে।
×